Photo: Syed Sheesh |
সোমবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কমিটি রুমে বাংলাদেশ বিষয়ক একটি সেমিনার শেষে বাংলানিউজ সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ব্রিটেনের বর্ষিয়ান এই রাজনীতিক এ মন্তব্য করেন। এভিবারি বলেন, বাস্তবতা হলো ’৭১ এ বাংলাদেশে যে যুদ্ধাপরাধ সংগঠিত হয় তা পৃথিবীর ইতিহাসের নৃশংসতম অপরাধের একটি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার চল্লিশ বছর পর এই যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ অবশ্যই একটি কঠিন কাজ বটে। এই বিচার নিয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল যুদ্ধাপরাধের বিচারটি স্বচ্ছ ও নিরপে হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। যুদ্ধাপরাধ ঘটনার দীর্ঘ চল্লিশ বছর পর হতে যাওয়া এই বিচারের স্বচ্ছতা ও গ্রহনযোগ্যতার প্রতি অবশ্যই সরকারের নজর রাখা উচিত।
প্রবীন এই মানবাধিকার কর্মী বাংলানিউজকে আরও বলেন, ৭১ এ সংঘটিত এই যুদ্ধাপরাধে যারা হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন অথবা তিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের অবশ্যই ন্যায্য বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। পাশাপাশি বিচার প্রক্রিয়ায় অভিযুক্তদের মানবাধিকারও যাতে লঙ্ঘিত না হয় সেটিও বিবেচনায় রাখতে হবে সরকারকে।
লর্ড এভিবারি ১৯৭৩ সালের যুদ্ধাপরাধ আইনকে আরো যুগোপযোগী করার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, যুদ্ধাপরাধ বিচারটি যাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়সহ বাংলাদেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, সে বিষয়টির প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বাংলানিউজের কাছে মন্তব্য করতে গিয়ে লর্ড এভিবারী বলেন, পার্লামেন্ট রাজনীতির মূল কেন্দ্র হলেও বিরোধী দল বিএনপি এই কেন্দ্রকে সেভাবে ব্যবহার করছে না, এটি দুঃখজনক।
তিনি বলেন, বিরোধী দলের যত অভিযোগ, পরামর্শ, পরিকল্পনা, এগুলো সবই পার্লামেন্টে নিয়ে যাওয়া উচিত। পার্লামেন্টারি রাজনীতির এটিই রীতি। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই রীতিটি বারবারই লঙ্ঘিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারে গেলে পার্লামেন্ট বয়কটের সমালোচনা আর বিরোধী দলে থাকলে পার্লামেন্ট বয়কট, এটি অনেকটা বাংলাদেশের রাজনীতিতে কালচার হয়ে দাড়াচ্ছে যা গণতন্ত্রের জন্যে উদ্বেগজনক।
প্রবীন এই রাজনীতিক বাংলানিউজকে আরো বলেন, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে পার্লামেন্টকে যদি ব্যবহারই করা না হলো, তাহলে জনগণ কেন তাদের প্রতিনিধি পার্লামেন্টে পাঠাবে, এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে বাংলাদেশের রাজনীতিকদের।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ব্রিটেনের এই প্রবীন মানবাধিকার নেতা বলেন, মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না, এমনই অভিযোগ আছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ মোকাবেলায় সরকারকে আরো সক্রিয় হতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের র্যাব নির্যাতনের বিষয়টি তো এখন ব্রিটিশ রাজনীতিতেও স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি সম্প্রতি গার্ডিয়ানে প্রকাশিত র্যাব কর্মকান্ডের সাথে ব্রিটেনের সম্পৃক্তির কথা উল্লেখ করেন।
এভিবারি বলেন, প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার রা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্র এই দায়িত্ব এড়াতে পারে না। বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের সাথে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর কোনো কোনো সদস্যের জড়িত হওয়ার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে লর্ড এভিবারি বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়টি সভ্য সমাজের জন্য লজ্জাজনক।
সরকারে গেলে র্যাব কর্মকান্ডকে সমর্থন আর বিরোধী দলে গেলে র্যাব কর্মকান্ডের সমালোচনার কথা উল্লেখ করে এভিবারি বলেন, দলীয় ফায়দা হাসিলের জন্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর এধরনের প্রতিযোগিতা গণতন্ত্রের জন্যে মোটেই সুখকর নয়।
উল্লেখ্য, ব্রিটেনের প্রবীন রাজনীতিক ও হাউস অব লর্ডসের বর্ষিয়ান সদস্য লর্ড এরিক এভিবারি ইন্টারন্যাশনেল বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন নামক একটি সংগঠনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যু ও সমস্যা সমাধানে ব্রিটেনে বসবারত বাংলাদেশিদের সাথে তিনি একসাথে কাজ করে আসছেন দীর্ঘদিন থেকে। বাংলাদেশ বিষয়ে বিভিন্ন সভা/সেমিনারের আয়োজন করে ব্রিটেনের এই বর্ষিয়ান রাজনীতিক বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবি মহলেও ইতোমধ্যে ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেছেন।
বাংলাদেশ সময় ২২১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১১
Link to Article
0 comments:
Post a Comment