Photo : Syed Sheesh |
লন্ডনে বাংলামিডিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন লন্ডন বাংলা প্রেসকাব, ব্রিটিশ মূলধারায় সমাদৃত কারি ইন্ডাস্ট্রি’র নেতৃত্ব দানকারী সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং ব্রিটেনের বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সংগঠন ব্রিটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এর সাথে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হয়নি।
দুই দুই বার অ্যাপয়েন্টমেন্ট করেও তা তৃতী বারের মত সময় বদলানোয় ুব্ধ হয়ে এই তিন সংগঠনের নেতারা তৃতীয় অ্যাপয়েন্টমেন্টে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আর বৈঠকে বসেননি।
এনিয়ে এই তিন সংগঠনের নেতাদের মধ্যে তীব্র ােভের সৃষ্টি হয়েছে। সংগঠনগুলোর সাথে সম্পৃক্ত নেতারা জানতে চেয়েছেন, প্রবাসী বাঙালি বিশেষ করে ব্রিটেনের বাঙালি কমিউনিটির সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ট সম্পর্ক কারা নষ্ট করতে চায়?
পাঁচ দিনের লন্ডন সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী বিরামহীনভাবে বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু সরকার বা বিরোধী দলে থাকাকালে বিভিন্ন সময় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ব্রিটেনের বাংলা মিডিয়ার সাথে আন্তরিক মন নিয়ে মিলিত হলেও এবার কেন এর ব্যতিক্রম, তা নিয়ে কমিউনিটিতেও চলছে গুজব গুঞ্জন।
কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় অনেকেই বলছেন, সেই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সঙ্গে ব্রিটেন প্রবাসী বাঙালিদের যে সম্পর্ক শুরু হয়েছিল, সেই সম্পর্ক উত্তরাধিকারভাবে রা করে আসছিলেন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কমিউনিটির অনেকেই সন্দেহ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর এবারের লন্ডন সফরের সময় বাঙালি কমিউনিটির তিন শীর্ষ সংগঠনের সাথে বৈঠক নিয়ে যে সমন্বয়হীনতা এটি কি প্রধানমন্ত্রীকে প্রবাসীদের সাথে সম্পর্কহীন করার কোন ষড়যন্ত্র?
বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীসহ উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মসূচীতে প্রধানমন্ত্রীর বিরামহীন অংশগ্রহণ, তার এবারের সফরকে একটি সফল সফর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেও বাঙালি কমিউনিটির তিন শীর্ষ সংগঠনের সাথে বৈঠক নিয়ে যে অব্যবস্থপনা হয়েছে, তাতে কমিউনিটির সাধারণ মানুষের কাছে এই সফল সফর অনেকটা ম্লান হয়ে গেছে।
ব্রিটেনের রাজনীতি পর্যবেণ করেন এমন ব্যক্তিরা বলছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ৪০ মিনিট ব্যাপী বৈঠক একটি বিরাট বিষয়। এর আগে বাংলাদেশের মত দেশগুলোর সরকার প্রধানদের সাথে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মাত্র কয়েক মিনিটের সাাতই দেখা গেছে।
ডেভিড ক্যামেরনের সাথে শেখ হাসিনার দীর্ঘ চল্লিশ মিনিটের বৈঠক বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশের একটি সুদৃঢ় অবস্থান দখলেরই প্রমান দেয়, উল্লেখ করে একজন রাজনৈতিক পর্যবেক বাংলানিউজকে বলেন, বাংলা মিডিয়ার সাথে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক নিয়ে যে কান্ড হলো তা প্রধানমন্ত্রীর সফল সফরকে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে দিতে অনেকটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।
কমিউনিটির তিন সংগঠনের সাথে বৈঠক নিয়ে কেন এই কান্ড? বিষয়টি খুজতে গিয়ে বাংলানিউজের অনুসন্ধানে অনেক কিছুই জানা গেছে।
বাংলা মিডিয়ার সাথে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের প্রথম সময় ২৮ জানুয়ারি বিকাল ৩টা থাকলেও তা পরিবর্তন করা হয়, আলজাজিরার বিশ্বখ্যাত সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টের সাথে একই সময় প্রধানমন্ত্রীর ইন্টারভিউ কনফার্ম হওয়ায়। লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে এমনই জানানো হয় বাংলা মিডিয়ার নেতৃবৃন্দকে।
পরদিন ২৯ জানুয়ারি সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর দ্বিতীয় বার অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়ার পর তা পরিবর্তন করা হয় প্রধানমন্ত্রীর কান্তির কথা বলে। দ্বিতীয় অ্যাপয়েন্টমেন্টে বাংলা মিডিয়ার সিনিয়র সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীর হোটেলে গিয়ে অনেকণ অপো করার পর তাদের জানানো হয় প্রধানমন্ত্রী কান্তিবোধ করছেন, তাই এদিনের অ্যাপয়েন্টমেন্টেও যোগদান করতে পারছেন না।
হাইকমিশনার ডঃ সাইদুর রহমান খান, ডেপুটি হাইকমিশনার আল্লামা সিদ্দীকি ও প্রেস মিনিস্টার রাশেদ চৌধুরী একসাথে এসে দ্বিতীয় এপয়েন্টমেন্টের সময় বদলানোর কথা জানিয়ে বাংলা মিডিয়ার কাছে এজন্যে আন্তরিকভাবে দঃখ প্রকাশ করেন। পরদিন ৩০ জানুয়ারি সকালে আবার সময় নির্ধারন করে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাাত করার জন্যে সাংবাদিকদের অনুরোধ জানালেও তৃতীয় অ্যাপয়েন্টমেন্টে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাাত করতে আর যাননি সাংবাদিকরা।
ঠিক একই অবস্থা সৃষ্টি হয় ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বার অব কমার্সের েেত্রও। ২৯ জানুয়ারি এই দুই সংগঠনকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিলে ব্রিটেনের ম্যানচেষ্টার ও বৃৃষ্টলের মত দুর দুরান্তের শহর থেকে দুই সংগঠনের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর হোটেলে উপস্থিত হন। প্রধানমন্ত্রীর কান্তির কথা বলে তাদেরও পরদিন আসার জন্যে অনুরোধ করেন হাইকমিশন কর্মকর্তারা। কিন্তু তারাও আর যাননি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, তিন শীর্ষ সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক বাতিল হওয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী কি কিছু জানতেন? বাংলানিউজের প থেকে এ বিষয়টি অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায় ভিন্ন তথ্য।
প্রধানমন্ত্রীর সাথে একান্তভাবে ঘনিষ্ট একটি সূত্র বাংলানিউজকে জানায় আসলে এই তিন সংগঠনের সাথে বৈঠক বার বার বদলানোর খবর প্রধানমন্ত্রী নিজেও জানতেন না।
ঐ সূত্র বাংলানিউজকে বলেন, শেখ হাসিনা জনগনের সাথে কথা বলতে খুবই পছন্দ করেন। বিশেষ করে ব্রিটেনের বাংলা মিডিয়ার সাথে কথা বলার জন্যে প্রধানমন্ত্রী খুবই আগ্রহী উল্লেখ করে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট ঐ সূত্র বাংলানিউজকে বলেন প্রধানমন্ত্রীর দুঃসময়গুলোতে ব্রিটেনের বাঙালি কমিউনিটি, বিশেষ করে এখানকার মিডিয়ার সমর্থন প্রধানমন্ত্রী কোন সময়ই ভুলতে পারেন না। আর তাই যতবারই তিনি ব্রিটেন এসেছেন, ততবারই ব্যস্ত কর্মসূচির মধ্যেও বাংলা মিডিয়ার সাথে বৈঠক করতে ভুলেননি তিনি।
বাংলা নিউজকে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট ঐ সূত্র জানায়, তিন সংগঠনের নেতাদের সাথে বৈঠকের সময় বার বার বদলানোর বিষয়টি প্রটোকল অফিসাররা প্রধানমন্ত্রীকে জানাননি। বিষয়টি জানলে প্রধানমন্ত্রী শত কান্তির মধ্যেও তাদের সাথে সাাত করতেন।
ঐ সূত্র বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন যে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছানো হবে। ঐ সূত্রের সাথে কথা বলার পর বিষয়টি ঠিকই প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছে। কিন্তু তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। দেশে ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী তখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
অপর একটি সূত্র থেকে জানা যায় ৩০ জানুয়ারি লন্ডন ছাড়ার আগ মুহুর্তে আরো ২/১টি সংগঠনের সাথে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী নাকি উল্লেখ করেছেন বাংলা মিডিয়ার সাথে তার বৈঠক নিয়ে এতসব কান্ডের কথা তাঁকে জানানো হয়নি।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, বিবিসি, ডেইলি টেলিগ্রাফ ও আল জাজিরার মতো বিশ্বের তিন তিনটি প্রভাবশালী মিডিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর সাাত এর ব্যবস্থা করতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের যে মিনিস্টার (প্রেস) রাশেদ চৌধুরী সফলতার পরিচয় দিলেন, সেখানে বাংলা মিডিয়ার বিষয়ে তিনি কেন ব্যর্থ? এটি কি বিশ্বের তিনটি প্রভাবশালী মিডিয়ায় সাাতকারের ব্যবস্থা হয়ে যাওয়ায় বাংলা মিডিয়ার প্রতি অবহেলা, না তাঁরও কোন সীমাবদ্ধতা আছে?
এ বিষয়ে রাশেদ চৌধুরীকে প্রশ্ন করলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, কারন যাই থাকুক, মিনিস্টার (প্রেস) হিসেবে এই ব্যর্থতার দায়তো আমাকেই নিতে হবে।
এদিকে প্রবাসিদের সংগঠনগুলো তাদের অঙ্গুলি নির্দেশ করছেন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী তার পার্সোনাল উইং এর কর্মকর্তাদের দিকে। তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। বাংলানিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, সফরসঙ্গী প্রধানমন্ত্রীর পার্সোনেল উইং এর কর্মকর্তারা তিন সংগঠনের সাথে তার অ্যাপয়েন্টমেন্টের কথা প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দেননি। হাইকমিশন কর্মকর্তারাও ছিলেন অনেকটা অসহায়ের মতো।
কারন প্রধানমন্ত্রীর পার্সোনাল উইং এর কর্মকর্তাদের দাপটের কারণে তারাও প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভিড়তে পারেননি। পার্সোনাল উইং এর কর্মকর্তারা তাদের যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, এটিই তারা তিন সংগঠনের কর্মকর্তাদের কাছে এসে জানিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হলো, পার্সোনাল উইং এর কর্মকর্তারা ব্রিটিশ-বাঙালি কমিউনিটির তিন শীর্ষ সংগঠনের সাথে প্রধানমন্ত্রীকে সম্পৃক্ততাহীন করার যে চেষ্টা করলেন এটি কি শুধুই কান্তির সময় অ্যাপয়েন্টমেন্টর কথা স্মরণ করিয়ে দিলে প্রধানমন্ত্রী বিরক্ত হবেন এই ভয়ে, না এটি প্রধানমন্ত্রীকে প্রবাসী সম্পৃক্তহীন করার কোন সুদুর প্রসারী পরিকল্পনা?
প্রশ্ন উঠেছে, এবারের সফরে বিভিন্ন কর্মসূচীতে প্রধানমন্ত্রী দেশে বিনিয়োগ করার জন্যে প্রবাসীদের প্রতি যে উদাত্ত আহবান জানালেন, শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সাথে প্রধানমন্ত্রীকে সম্পর্কহীন করে এই আহবানে কতটুকু সাড়া পাওয়া যাবে?
বিনিয়োগের যে আহবান জানালেন প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় বাংলা মিডিয়ার সাথে তাকে সম্পর্কহীন করলে সর্বস্তরের প্রবাসীদের কাছে কি তার এই আবেদন পৌছবে? প্রশ্ন উঠেছে সরকার ও প্রধানমন্ত্র্রীকে সাবোটাজ করতে এটি কি কোন পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র?
তবে তিন শীর্ষ সংগঠনের নেতাদের ধারণা, সংশ্লিষ্ট অ্যাপয়েন্টমেন্ট সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে কিছুই জানানো হয়নি। সাপ্তাহিক জনমত এর চিফ এডিটর সৈয়দ নাহাস পাশা বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বাংলা মিডিয়াসহ ব্রিটেনের বাঙালি কমিউনিটির যে সম্পর্ক, তাতে তিনি ব্রিটেনের তিন শীর্ষ সংগঠনের সাথে কান্তির কথা বলে মিলিত হবেন না, এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। আমাদের ধারণা এতসব কা-ের কথা প্রধানমন্ত্রীর কানেই পৌঁছানো হয়নি।
একই মত লন্ডন বাংলা প্রেসকাবের প্রেসিডেন্ট ও সাপ্তাহিক সুরমা’র প্রধান সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল আহমদেরও।
ব্রিটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের লন্ডন রিজিওনের সভাপতি মহিব চৌধুরী অবশ্য তিন সংগঠনের সাথে বৈঠকের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জানেন না, এতটুকু জেনে সন্তুষ্ট হতে রাজি নন।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জানেন না ব্যাখ্যা দিয়েই এটির সমাপ্তি টানলে তা হবে প্রধানমন্ত্র্রীর ভাবমূর্তির জন্যে আরো তিকর। প্রধানমন্ত্রীকে তার পার্সোনাল উইং এর কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন সম্পর্কে আরো সচেতনভাবে খোজ খবর নিতে হবে।
তিনি বলেন, প্রবাসীদের প্রতি দেশে বিনিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর আহবান নিয়ে আমরা ব্যবসায়ীরা যদি তার সাথে কথাই বলতে না পারলাম তাহলে দেশে বিনিয়োগ যাবে কিভাবে?
ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পাশা খোন্দকার বাংলানিউজকে পরিস্কার ভাবেই বললেন, তিন সংগঠনের সাথে বৈঠক নিয়ে এই যে কান্ড এটি প্রধানমন্ত্রীর সাথে প্রবাসীদের সম্পর্ক নষ্ট করার একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলেই তিনি মনে করছেন।
বাংলাদেশ সময় ২২৩৮ ঘন্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১১
Link to Article
0 comments:
Post a Comment