Syed Anas Pasha

Syed Anas Pasha

৭১’র যুদ্ধাপরাধ বিশ্বের নিকৃষ্টতম বিয়োগান্তক ঘটনা: ব্র্যাড আ্যডামস

Photo: Syed Sheesh
লন্ডন, হাউজ অব লর্ডস`র কমিটি রুম থেকে: ‘একাত্তুরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ পৃথিবীর ইতিহাসের এক নিকৃষ্টতম বিয়োগান্তক ঘটনা। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত।’

কথাগুলো বলছিলেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন সাংবাদিক ব্র্যাড আ্যডামস।

গতকাল সোমবার লন্ডনে হাউস অব লর্ডসে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বিষয়ক সেমিনার শেষে বাংলানিউজ’র লন্ডন প্রতিনিধির সঙ্গে একান্ত আলাপে আ্যডামস এ মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ সরকারের যুদ্ধাপরাধ বিচারের উদ্যোগকেও তিনি ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন।

এ ব্যাপারে আ্যডামস বলেন, বিচারটি যাতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

এ সময় তিনি বাংলাদেশের (১৯৭৩) যুদ্ধাপরাধ আইনকে যুগোপযোগী করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

আ্যাডামস বলেন, প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত ও নিরাপরাধরা যাতে কোনও হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যাপারে খুব সচেতন থাকতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে।

এ প্রসঙ্গে তিনি সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওয়ার ক্রাইম বিষয়ক অ্যাম্বাসেডরের সুপারিশের কথাও উল্লেখ করেন।

ব্র্যাড আ্যডামস বলেন, ৭১ এর যুদ্ধাপরাধের বিচার শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সব শান্তিকামী মানুষই চায় বলে আমার বিশ্বাস। কারণ পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস এ যুদ্ধাপরাধ মানবজাতির জন্য কলঙ্ক বলেই বিবেচিত হচ্ছে।

বিচার শুরুর প্রাক্কালে তিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি তার কোনও বার্তা আছে কি-না, জানতে চাইলে আ্যডামস বলেন, ‘তিগ্রস্ত বা তাদের পরিবারের সদস্যদের বিচার চাওয়ার অধিকারকে স্পষ্ট ভাষায় স্বীকৃতি দিতে চাই আমি। এ বিচার প্রাপ্তি তাদের অধিকারের অংশ।’

একটি সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি লাভের পর তিগ্রস্তরা সান্ত্বনা পাবেন বলে মনে করেন তিনি।

একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের জন্য আড্যামস বলেন, ‘সব অপরাধের জন্যই আইনের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। আর আইন তার নিজস্ব গতিতে চলেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে। এটিই অনুধাবন করা উচিত সব অপরাধীর।’

সম্প্রতি বাংলাদেশে র‌্যাবের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে লেখা তার মন্তব্য প্রতিবেদন সম্পর্কে আ্যডামস বলেন, পৃথিবীর সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করার অধিকার রয়েছে প্রতিটি মানুষেরই। আর এ অধিকার রা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অনেক দেশেই নাগরিকের মানবাধিকার রার এ বিষয়টি বারবার উপেতি হচ্ছে।

এ সময় তিনি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশিদের হত্যা নিয়েও কথা বলেন।

আ্যডামস বলেন, সভ্য দুনিয়ার সবার জন্যই বিষয়টি লজ্জাকর। কলঙ্কজনকও। বারবার এমন হত্যার ঘটনা ঘটলেও ভারত সরকারের প থেকে বিষয়টি প্রতিরোধে খুব একটা উদ্যোগ ল্য করা যায়নি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো বিএসএফ’র এ হত্যাকাণ্ড বন্ধে প্রয়োজনীয় পদপে ও আলোচনার চেয়ে ভারতবিরোধিতা ও ভারত তোষামোদির অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগকেই প্রাধান্য দিচ্ছে।  দেশের জনগণের মানবাধিকার ও জানমাল রায় যেখানে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য, সেখানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের দোষ খুঁজতেই ব্যস্ত। এটি খুবই দুঃখজনক।

আড্যামস অভিযোগ করেন, ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশিদের হত্যাকাণ্ডকে অনেকাংশেই বৈধ বলছে। যা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল।

এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে শক্ত কাঁটাতারের  বেড়া ও দেখামাত্র বিএসএফ’র গুলি ছোঁড়ার কথা উল্লেখ করেন।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘শক্ত বেড়া দিলে কী ভালো প্রতিবেশী পাওয়া যায়?’

পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, ভালবাসা ও উদ্ভূত সমস্যায় আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খোঁজাই প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের অন্যতম কার্যকর পন্থা বলে মনে করেন তিনি।

কিশোরী ফেলানী হত্যার ঘটনায় জড়িত দুই বিএসএফ সদস্যকে সাসপেন্ড করার ভারতীয় পদপেকে স্বাগত জানিয়ে আ্যডামস বলেন, এ পদপে ভারতের প্রতি ছোট্ট প্রতিবেশী বাংলাদেশের জনগণের আস্থা বাড়াতে সহায়ক হবে।

বিএসএফ-সৃষ্ট ঘটনা মোকাবেলায় এ ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতেও ভারত অব্যাহত রাখবে বলে তিনি আশা করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১১
Link to Article

0 comments:

Post a Comment

Popular Posts