Syed Anas Pasha

Syed Anas Pasha

লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারির ভূমিকায় ক্ষুব্ধ বাংলামিডিয়া

Photo : Syed Sheesh
লন্ডন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক লন্ডন সফর এযাবতকালের সবচেয়ে সফল সফর হিসেবে বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হলেও সফরকালে তার প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদের ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন লন্ডনের বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকরা।

ব্রিটেনের তিনটি শীর্ষ সংগঠনের একটি লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাথে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক না হওয়ার জন্যেও প্রেস সেক্রেটারিকে দায়ী করা হচ্ছে।

কেউ কেউ এও বলতে ছাড়ছেন না, প্রধানমন্ত্রীকে বিব্রত করতে এটি ছিলো প্রেস সেক্রেটারির ইচ্ছাকৃত পরিকল্পনা। তারা বিদেশে প্রেস সেক্রেটারির দায়িত্ব পালনে অভিজ্ঞতাহীনতার কথাও বলছেন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে বৈঠক, হাউস অব কমন্সে স্পিকারের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার গ্রহণ, অক্সফোর্ড ইউনিয়নে বিশ্ব শান্তির উপর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, আর্ন্তজজাতিক মানবাধিকার নেতৃবৃন্দসহ প্রধানমন্ত্রীর সাথে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সাক্ষাতের পর একটি প্রেস ব্রিফিং এর জন্যে সাংবাদিকরা প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদকে হণ্যে হয়ে খুজলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এমন কি বিশ্বের প্রভাবশালী বিদেশি মিডিয়াগুলোকে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত দেওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে অভ্যর্থনা জানাতেও খুজে পাওয়া যায়নি প্রেস সেক্রেটারিকে।

তিন প্রভাবশালী বিশ্বমিডিয়া আলজাজিরা, বিবিসি ও ডেইলি টেলিগ্রাফের মধ্যে আলজাজিরা ছাড়া বাকী দুই মিডিয়াই প্রধানমন্ত্রীর হোটেল স্যুটে এসে ইন্টারভিউ গ্রহন করলেও প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদকে তাদের স্বাগত জানাতে দেখা যায়নি।

বিবিসি প্রধানমন্ত্রীর হোটেল স্যুটকে স্টুডিও সাজিয়ে সাক্ষাতকার গ্রহণ করে, কিন্তু এতসব ডামাডোলের মধ্যে অনেককেই ব্যস্ত থা তে দেখা গেলেও ছিলেন না প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ।

ডেইলি টেলিগ্রাফের সাংবাদিক এন্ড্রু গিলিগানকে প্রধানমন্ত্রীর হোটেল স্যুটে প্রেস সেক্রেটারির অভ্যর্থনা জানানোর কথা থাকলেও এখানেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে শেখ হাসিনার দীর্ঘ চল্লিশ মিনিটের বৈঠক শেষে ১০ ডাউনিং স্ট্রিট থেকে ই-মেইলে আধাঘন্টার মধ্যে প্রেস ব্রিফিং চলে আসলেও প্রধানমন্ত্রীর সফরের  পুরো ৫দিনের মধ্যেও প্রেস সেক্রেটারি সাংবাদিকদের কাছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অফিসের প থেকে কোন প্রেস ব্রিফিং পাঠাননি।

সফরের কোন কোন কর্মসূচির পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ও হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার রাশেদ চৌধুরী সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের কিছু ব্রিফিং দিলেও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি কোথাও দৃশ্যমান ছিলেন না।

প্রধানমন্ত্রীর সাথে লন্ডনের বাংলা মিডিয়ার সাক্ষাত কর্মসূচী দুই দুই বার পরিবর্তন হলেও হোটেলে অপেমান সাংবাদিকদের সৌজন্যতার খাতিরেও প্রেস সেক্রেটারি একবার হ্যালো বলতে আসেননি।

এনিয়ে লন্ডনের বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি বিদেশের মিডিয়াগুলোর সাথে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ ভোগ করেন না? তা না হলে কেন তিনি তার দায়িত্ব পালনে এত অবহেলা দেখালেন? বিদেশি মিডিয়ায় প্রেস ব্রিফিং দিতে সমস্যা হলেও লন্ডনের বাংলা মিডিয়ার সাথে কথা বলতেও তার এত দ্বিধা কেন?

প্রধানমন্ত্রীর সাথে স্থানীয় বাংলা মিডিয়ার বৈঠক নিয়ে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি নিজে যদি বাংলা মিডিয়ার  নেতৃবৃন্দের সাথে বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতেন তাহলে হয়তো অ্যাপয়েন্টমেন্টের পরিবর্তীত তৃতীয় দিনে বাংলা মিডিয়ার নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে বসতে আপত্তি করতেন না।

ব্রিটেনের প্রাচীনতম বাংলা সাপ্তাহিক জনমত-এর সম্পাদক নবাব উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সফল প্রেস কভারেজ নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারীর পারদর্শিতার ওপর। কিন্তু শেখ হাসিনার এবারের লন্ডন সফরের মিডিয়া কাভারেজ অনেকটা ম্লান হয়ে গিয়েছে একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারির জন্য।

লন্ডনের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বাংলা সাপ্তাহিক সুরমার সম্পাদক সৈয়দ মনসুর উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্র্রীর এবারের লন্ডন সফরসঙ্গী হিসেবে তার প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ ছিলেন, এটিই অনেক সাংবাদিক জানেন না বলে আমার মনে হয়।

তিনি বলেন, পুরো সফরের বৈঠকগুলো সম্পর্কে প্রেস ব্রিফিংয়ের জন্যে সাংবাদিকরা তাকে হণ্যে হয়ে খুঁজেছেন। কিন্তু তাকে কোথাও পাওয়া যায়নি।

সুরমা সম্পাদক বলেন, ‘সৌজন্যতার খাতিরেও তো প্রেস সেক্রেটারি স্থানীয় বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে পরিচিত হতে পারতেন।’

আরেক শীর্ষস্থানীয় সাপ্তাহিক ‘পত্রিকা’ সম্পাদক এমদাদুল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারির অবহেলায় আমরা অনেকেই হতাশ হয়েছি। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর হাই প্রোফাইল বৈঠকের একটি ব্রিফিংও তিনি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, যা  বৈঠক শেষ হওয়ার আধাঘন্টার মধ্যে দিয়েছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অফিস ১০ ডাউনিং স্ট্রিট।

তিনি বলেন, লন্ডনের বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের প্রতি সামান্যতম সৌজন্যতা দেখাতেও তিনি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে পত্রিকা সম্পাদক জানান, হাউস অব কমন্সের অনুষ্ঠানে লন্ডন বাংলা প্রেসকাব সভাপতি মোহাম্মদ বেলাল আহমদ তাঁর সাথে নিজে থেকে পরিচিত হলেও প্রেস সেক্রেটারিকে খুব আগ্রহ নিয়ে প্রেসক্লাব সভাপতির সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়নি।

এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক নিয়ে যে কান্ড ঘটেছে, প্রেস সেক্রেটারি ঠিকমত দায়িত্ব পালন করলে এটিও হয়তো ঘটতো না।

সাপ্তাহিক বাংলা পোষ্ট এর সম্পাদক তারেক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিরামহীন কর্মসূচিতে সবাই ব্যস্ত থাকলেও দেখা যায়নি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদকে। স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে একবার দেখা করার সৌজন্যতাটুকুও তিনি দেখাননি।

বাংলাদেশ সময় ২০১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১১
Link to Article

0 comments:

Post a Comment

Popular Posts