Syed Anas Pasha

Syed Anas Pasha

বাংলানিউজকে ব্রিটিশ সাংবাদিক গিলিগ্যান: ব্রিটেনের বাঙালি কমিউনিটিকে প্রতিনিধিত্ব করার স্পর্ধা দেখাচ্ছে জামায়াত

Photo : Syed Sheesh
লন্ডন: ডেইলি টেলিগ্রাফের লন্ডন এডিটর, চ্যানেল-৪ খ্যাত ব্রিটিশ সাংবাদিক অ্যান্ড্রু গিলিগ্যান বলেছেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামির ভূমিকা ছিল বাংলাদেশ ও বাঙালির অস্তিত্ববিরোধী।অথচ ওই শক্তিই এখন ব্রিটেনের মূলধারায় বাঙালি কমিউনিটির প্রতিনিধিত্ব করার স্পর্ধা দেখাচ্ছে।

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকেলে লন্ডনে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি’র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে মৌলবাদ ও ধর্মীয় চরমপন্থার বিরুদ্ধে সদা সক্রিয় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ওই সাংবাদিক এ মন্তব্য করেন।

বাংলানিউজকে গিলিগ্যান বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগে ব্রিটিশ সরকারের অবশ্যই সহযোগিতা করা উচিত।’

 ব্রিটেনে বসবাসরত অভিযুক্ত দুই যুদ্ধাপরাধীকেও এই বিচারের আওতায় আনতে ব্রিটিশ সরকার বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন গিলিগ্যান।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর ইউরোপীয় সংস্করণ ইসলামিক ফোরাম ইউরোপ- এর কর্মকান্ড নিয়ে চ্যানেল-৪ এর ডেসপাচেজ অনুষ্ঠানে গিলিগ্যানের আলোড়ন সৃষ্টিকারী ডকুমেন্টারি ‘ব্রিটেন-ইসলামিক রিপাবলিক’ প্রচারিত হয়। এর পর বাংলাদেশের কোনো সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এটাই তার প্রথম সাক্ষাৎকার।

 ’৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগের ভুয়সী প্রশংসা করে অ্যান্ড্রু গিলিগ্যান বলেন, এই বিষয়টি গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার অন্যতম অদৃশ্য কারণ হিসেবেই ভূমিকা রেখেছে।

তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রমের সফলতার উপরই নির্ভর করছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা।

  যুদ্ধাপরাধের  জন্য অভিযুক্ত যারা এখন  ব্রিটেনে বসবাসরত তাদের বিচারের আওতায় আনতে ব্রিটিশ সরকার  বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন গিলিগ্যান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে  মূল ভূমিকাটা বাংলাদেশ সরকারকেই পালন করতে হবে।` তার আশা, ব্রিটিশ সরকার অবশ্যই এতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে জামায়াতে ইসলামি আন্তর্জাতিকভাবে  ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার কি তার মতো খ্যাতিমান সাংবাদিকদের সহযোগিতা আশা করতে পারে? --এ প্রশ্ন করা হয় তাকে। জবাবে গিলিগান বলেন, ‘অবশ্যই। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।’

তিনি বলেন, `৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে বিশ্বজুড়ে জনমত সৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের অভিযুক্ত করার পরই বিশ্ব মিডিয়া এটিকে ডকুমেন্ট হিসেবে গ্রহণ করে তাদের বিচারের পক্ষে বিশ্বজনমত সৃষ্টিতে কাজ শুরু করতে পারে।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বিদেশি মিডিয়াগুলোতে প্রেস রিলিজও দেওয়া যেতে পারে বলে পরামর্শ দিয়ে গিলিগ্যান বলেন, ‘আমার জানামতে ব্রিটেনের মিডিয়াগুলো এ বিষয়টি নিয়ে তৎপর হতে চায়, যা পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণের অভাবে আটকে আছে।’
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের রেফারেন্স ধরেই ব্রিটিশ মিডিয়াগুলো অগ্রসর হতে পারে বলে মত দেন তিনি।

ব্রিটেনে বাংলাদেশি মৌলবাদীদের অপতৎপরতা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে চ্যানেল-৪  খ্যাত এই সাংবাদিক বলেন, ব্রিটিশ সমাজের মূলধারায় বাঙালি কমিউনিটিকে প্রতিনিধিত্ব করার স্পর্ধা দেখাচ্ছে ’৭১ এর চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের কেউ কেউ ও তাদের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন সংগঠন। ব্রিটিশ মূলধারার কোনো কোনো রাজনীতিকসহ সাধারণ ব্রিটিশ জনগণের অনেকেই বিষয়টি অনুধাবন করতে পারেন না।

তিনি বলেন, জাকজমক ও প্রচারের ডামাঢোলে বিভ্রান্ত হয়ে ভোট প্রত্যাশী ব্রিটিশ রাজনীতিকদের কেউ কেউ ঐ অপশক্তিকেই ব্রিটেনে বাঙালির প্রকৃত প্রতিনিধি হিসেবে ভুল করে থাকেন। অথচ ঐ অপশক্তির পিতৃসংগঠন জামায়াতে ইসলামী ’৭১ এ বাংলাদেশ ও বাঙালির বিরুদ্ধে শুধু অবস্থানই নেয়নি, বাঙালির অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করতে মানবতাবিরোধী ঘৃণ্য অপরাধে লিপ্ত ছিল।

তিনি আরও বলেন, ৭১ এ বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত এই অপশক্তি ব্রিটেনের বিগত পার্লামেন্ট নির্বাচনসহ টাওয়ার হ্যামলেটস এর আসন্ন মেয়র নির্বাচনেও বাঙালি চেতনার বিরোধীতা করছে।’
অ্যান্ড্রু গিলিগ্যান বলেন, প্রথম বাঙালি এমপি রোশনারার বিরুদ্ধে মূলধারা বিচ্যুত একটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীকে নিয়ে ওরা বিগত পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রচার চালাতে গিড়য়ে ধর্মের অপব্যবহার করেছিল।  ঠিক তেমনিভাবে আসন্ন মেয়র নির্বাচনেও লেবারপ্রার্থী ব্রিটিশ-বাঙালি মেয়র প্রার্থী হেলাল আব্বাসের বিরুদ্ধে ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে অপপ্রচার চালাচ্ছে। 

তিনি বলেন, এদের অপতৎপরতা বিশ্ব-সভ্যতার জন্যেও হুমকি। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম সফল হলে ব্রিটিশ জনগণসহ বিশ্ববাসীর কাছে মৌলবাদী এই অপশক্তির মুখোশ উম্মোচিত হবে। এদিক থেকে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

গিলিগ্যান বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্যক্রমে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে অ্যান্ড্রু গিলিগ্যান বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের পক্ষে সকলেরই অবস্থান নেওয়া উচিত। বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের রাজনীতি যেন যুদ্ধাপরাধীসহ কোন অপরাধীর পক্ষে ভূমিকা না রাখে । অপরাধীদের পক্ষে ভূমিকা রাখে এমন নেতিবাচক রাজনীতি যেন বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে প্রভাব না ফেলতে পারে, এটিই আমার কামনা।’

বাংলাদেশে মৌলবাদীদের জঙ্গি তৎপরতা সম্পর্কে আরেক প্রশ্নের জবাবে ডেইলি টেলিগ্রাফের লন্ডন এডিটর গিলিগ্যান বলেন, ‘জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান প্রশংসাযোগ্য।’

তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ তার বর্তমান অবস্থান ধরে রাখতে পারলে পাকিস্তানের মত এত বিপদজ্জনক জঙ্গি তৎপরতা এখানে বিস্তার লাভ করতে পারবে বলে আমি মনে করি না।’

জঙ্গি সম্পৃক্ততায় অভিযুক্ত ও সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে গ্রেফতারকৃত দুই ব্রিটিশ নাগরিক গ্রিন ক্রিসেন্ট -এর ফয়সাল ও মোস্তফার বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া উচিত কি না, এ প্রশ্ন করা হয় তাকে। জবাবে গিলিগ্যান বলেন, ফয়সালের জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতা নিয়ে ব্রিটেনেও অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ও ব্রিটিশ সরকারের একযোগে কাজ করা উচিত।

বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীরের লন্ডন তৎপরতা নিয়ে অন্য এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিক অ্যান্ড্রু গিলিগান বলেন, ক্ষমতায় আসার আগে কনজারভেটিভ পার্টিও বলেছিল হিযবুত তাহরিরকে নিষিদ্ধ করবে।  তবে আমার মনে হয় বিষয়টি নিয়ে এখন আর তারা ভাবছে না।

তিনি বলেন,` ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি নিষিদ্ধ করে নয়, তৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়েই জনগণের কাছে তাদের সভ্যতাবিরোধী কর্মকান্ড প্রমাণ করা উচিত। তাছাড়া যতক্ষণ না সন্ত্রাসী কোন কর্মকান্ডের অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যাবে, ততক্ষণ কাউকে নিষিদ্ধ করাও সমীচীন হবে না। `

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মৌলবাদী সংগঠনগুলো তাদের অপকর্মের মাধ্যমেই জনগণের কাছে ধিকৃত হবে। , আর গণধিক্কারই কোনো সংগঠনের জন্যে সর্বোচ্চ শাস্তি বলে আমি মনে করি।’

বাংলাদেশ সময় ১৯০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১০
Link to Article

0 comments:

Post a Comment

Popular Posts