Syed Anas Pasha

Syed Anas Pasha

বাংলানিউজ২৪;;;;; অটোয়ায় নিরাপদ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছে কানাডীয় সংবাদ মাধ্যম

ঢাকা: জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত নুর চৌধুরীর কানাডীয় নিরাপদ অবস্থান নিয়ে এবার সরব হচ্ছে দেশটির শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। চলতি সপ্তাহে কানাডার শীর্ষ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম ‘দ্য স্টার.কম’ এবং কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘ম্যাকলিনস’ পৃথক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নুর চৌধুরীর কানাডায় নিরাপদ অবস্থান নিয়ে দুটো বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

‘দ্যাস্টার.কম’ এবং  ‘ম্যাকলিনস’ এ প্রকাশিত ‘কনভিকটেড এসাসিন লিভিং ফ্রিলি ইন এটোবিকক’ এবং ‘দি এসাসিন এমং আছ’ শীর্ষক দুটি বিশেষ প্রতিবেদনে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট স্বপরিবারে জাতীর জনককে হত্যার বর্ণনা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত নুর চৌধুরী ১৯৯৬ সাল থেকে কানাডার অটোয়ায় নিরাপদে বসবাস করছে। দেশ হিসেবে কানাডা মৃত্যুদণ্ড বিধানের বিরোধী থাকায় বঙ্গবন্ধুর এই খুনিকে বাংলাদেশে ফেরৎ পাঠাতে পারছে না।

প্রতিবেদন দুটোতে উল্লেখ করা হয়, কানাডিয়ান সরকার নুর চৌধুরীকে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার আদালত অনুমতি অনেক আগে পেলেও মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত হওয়ায় তা তামিল করতে পারছে না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের জাতীর পিতাকে হত্যার দায়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত নুর চৌধুরী মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত হলেও এ দণ্ডের কারণেই এখনও অটোয়াতে বহাল তবিয়তে বসবাস করছেন।

কারণ দেশের নিয়ম অনযায়ী মুত্যদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো অপরাধীকে অটোয়া ফেরত পাঠাতে পারে না। আর এর কারনেই দেশে নিয়ে বিচারের মুখোমুখি করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ তাকে ফিরিয়ে নিতে চাইলেও শেখ মুজিবের এই খুনি এখনও কানাডায় নিরাপদ জীবন যাপন করছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রিফিউজি হিসেবে কানাডাতে বসবাসের জন্যে নুর চৌধুরীর করা আবেদন নাকচ করে কানাডার আদালত তাকে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার আদেশ দিলেও এটি খুব তাড়াতাড়ি সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জাতীর পিতার হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়াটি অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল স্বচ্ছ ও নিরপে হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছো।

কানাডীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর রিপোর্টে বলা হয়, আদালতের রায়ে বলা হয়েছে নুর চৌধুরী ও তার সঙ্গীদের সাবমেশিন গানের গুলিতেই বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিহত হন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নুর চৌধুরী কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন ও রিফিউজি বোর্ড এ দাখিল করা তার স্টেইটমেন্টে শেখ মুজিব হত্যার সঙ্গে তার জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।

তবে তার ওই স্ট্রেটমেন্ট প্রত্যাখ্যান করে কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন ও রিফিউজি বোর্ড।

শীর্ষ ম্যাগাজিন ম্যাকলিনসের প্রতিবেদনে বলা হয়, কানাডার সুপ্রীম কোর্ট ২০০১ সালে এই বলে রুল জারি করে যে, অটোয়া ততদিন পর্যন্ত শেখ মুজিবের এই খুনীকে বহিস্কার করতে পারবে না, যতদিন তাকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানো হবে না বলে বাংলাদেশ সরকার নিশ্চয়তা দেয়।

কানাডিয়ান সুপ্রীমকোর্টের রুলে বলা হয়, বাংলাদেশ যদি নুর চৌধুরীর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড থেকে নামিয়ে আরও কম শাস্তিতে নিয়ে আসে, তাহলে তাকে কানাডা থেকে বহিস্কারে আর কোনো বাধা থাকবে না।

কানাডিয়ান সুপ্রীম কোর্টের ওই আদেশ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ঐ সময় কানাডাস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ‘ম্যাকলিনস’ কে বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশের আগের অবস্থায় ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির আসন্ন অটোয়া সফরের সময় বিষয়টি উত্থাপিত হবে বলে প্রতিবেদনে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

টরেন্টোতে বসবারত বাংলাদেশি সাংবাদিক আসান চৌধুরীর উদ্ধৃতি দিয়ে কানাডিয়ান সংবাদ মাধ্যমের বলা হয়, নুর চৌধুরী যে অটোয়ায় বসবাস করছে এ বিষয়টি কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের অজানা নয়।

আসান চৌধুরী বলেন, বাঙালি কমিউনিটির অধিকাংশ মানুষই নুর চৌধুরীকে একজন অপরাধী হিসেবেই মনে করে। ১৯৭৫ এর ঘটনা নিয়ে যে যাই ভাবুক, নুর চৌধুরী এখন একজন পলাতক অপরাধী, তাকে অবশ্যই বাংলাদেশে ফেরৎ পাঠানো উচিত।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ৭৫ এর ১৫ আগষ্টের ঘটনার সময় নুর চৌধুরীর বয়স ছিল ২৪ বছর। এই ঘটনার আগেই তিনি সেনাবাহিনী ত্যাগ করেন এবং ১৫ আগষ্টের ঘটনার দুইদিন আগে ওই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত হন।

ঘাতকদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সাহসি উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, মৃত্যুর আগে বাংলাদেশের জাতীর পিতা ঘাতকদের উদ্দেশ্যে সাহস নিয়ে কঠোর ভাষায় প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তোমরা কি আমাকে হত্যা করতে এসেছো? পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যেটি পারেনি, সেটি তোমরা পারবে এটি ভাবলে কি করে?’

রিপোর্টে রাসেলের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে বলা হয়, চেয়ারের আড়ালে লুকিয়েও ১০ বছরের এই ছেলেটি ঘাতকদের হাত থেকে বাঁচতে পারেনি। ঘাতকরা শুধু জাতীর জনককে হত্যা করেই ান্ত হয়নি, তার পুরো পরিবারকেই নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছে।

রিপোর্টে বলা হয়, শেখ হাসিনা সরকার মতায় আসার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রনাালয় ঘাতকদের দেশে ফিরে আসার নির্দেশ দিলে ঘাতক নুর চৌধুরী আর বাংলাদেশে ফেরৎ যায়নি। এই আদেশের পর পরই তিনি ও তার স্ত্রী রাশিদা খানম কানাডায় চলে আসেন এবং এখানে ভিজিটর স্টেট্যাস লাভ করেন। এর পরপরই তারা রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেন বলে উল্লেখ করা হয় রিপোর্টে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৫ সালে নুর চৌধুরী ও তার স্ত্রী রাশিদা খানম ১ লাখ ৮৫ হাজার কানাডিয়ার ডলার দিয়ে অটোয়ার এটোবিকক এলাকার কেন্দ্রস্থলে তৃতীয় তলায় অবস্থিত একটি ফ্যাট ক্রয় করে এখানেই নিরাপদে বসবাস করতে থাকেন। এটোকক এর অভিজাত এলাকার এই ফাটে বসবাসরত নুর চৌধুরীর প্রতিবেশীরা তাকে খুব একটা ঘনিষ্টভাবে চেনেন না উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়, ফ্যাটে ঢুকা ও বাইর হওয়ার সময় প্রতিবেশীদের সঙ্গে শুধুমাত্র চোখাচোখি বা বড়জোড় হাই হ্যালোই হয় নুর চৌধুরীর।

কানাডিয়ান সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে ১৫ ফেব্র“য়ারি মঙ্গলবার যখন নুর চৌধুরীর দরজায় কড়া নাড়েন, তখন ভেতর থেকে বঙ্গবন্ধুর এই ঘাতক পরিচয় জানতে চান। যখন বলা হয় যে সাংবাদিক, তখন আর কোনো উত্তর আসেনি নুর চৌধুরীর কাছ থেকে। এমনই বলা হয় ‘দ্যাস্টার.কম’ এর প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয় নুর চৌধুরী তার কানাডিয়ান পাসপোর্ট ইতোমধ্যে ফেরত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপকে এবং প্রতি সপ্তাহে ইমিগ্রেশন অথরিটি  অফিসে হাজিরা দিতে হয় তাকে। বঙ্গবন্ধুর এই খুনী ডিপোর্টেশন অর্ডারের অধীনে আছেন উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, নুর চৌধুরীর গতিবিধি সব সময় কানাডা সরকারকে জানাতে তিনি বাধ্য। এক বছর আগেও নুর চৌধুরী কানাডায় বিভিন্ন কমিউনিটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন।

উল্লেখ্য,  শীর্ষ ম্যাগাজিন ‘ম্যাকলিনস’ এ চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি উল্লেখ করা হয়। তবে গত বছরের মার্চ মাসে ম্যাকলিনস এ দেওয়া অন্য একটি সাাতকারে কানাডায় তার পিতার হত্যাকারী নুর চৌধুরীর নিরাপদ অবস্থানে প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘কানাডা সব সময় হিউম্যান রাইটস এর পে জোড়ালো ভূমিকা পালন  করে থাকে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর এই ঘাতকরা মহিলা শিশুসহ পুরো একটি ফ্যামিলিকে হত্যা করার মাধ্যমে হিউম্যান রাইটস ভঙ্গ করার পরও  কানাডা কেন এদের আশ্রয় দিচ্ছে?

তিনি সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘কেন তোমারা একজন খুনীকে আশ্রয় দিচ্ছো তা আমি বুঝতে পারছি না’।


বাংলাদেশ সময়: ২০০৮ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১১
Link to Article

0 comments:

Post a Comment

Popular Posts