Syed Anas Pasha

Syed Anas Pasha

সমকাল: বাঙালির পছন্দ লেবার পার্টিএগিয়ে আছেন রুশনারা

সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন
ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনের ক্ষণ গণনা এখন দিন থেকে ঘণ্টায় নেমে এসেছে। নির্বাচনের বাকি ৭২ ঘণ্টারও কম সময়। সময় যত ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনী প্রচার ততই জোরালো হচ্ছে। এবারের নির্বাচনকে বলা হচ্ছে, ব্রিটেনের ইতিহাসে প্রথম ডিজিটাল ইলেকশন। প্রধান তিনটি দলের নেতাদের প্রাণবন্ত বিতর্ককে কেন্দ্র করে নির্বাচনী জরিপের ফলাফলও ওঠানামা করছে। সর্বশেষ নির্বাচনী জরিপের ফলাফল অনুযায়ী লেবার পার্টি কিছুটা বেকায়দায় থাকলেও যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাঙালিদের পছন্দের তালিকায় এখনও লেবার পার্টি শীর্ষে রয়েছে। সমকালের পক্ষ থেকে ব্রিটেনে বসবাসরত নেতৃস্থানীয় একশ' বাঙালির মধ্যে
পরিচালিত এক টেলিফোন জরিপে শতকরা ৮১ জনের লেবার পার্টির প্রতি সমর্থন পাওয়া গেছে। বাঙালিদের অভিমত, লেবার পার্টির পরাজয় ঝুঁকি থাকলেও অভিবাসীদের জন্য এর বিকল্প নেই। পছন্দের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। জরিপে ১৩ জন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে সমর্থন জানিয়েছেন। কনজারভেটিভ পার্টির প্রতি সমর্থন দিয়েছেন চার জন এবং টাওয়ার হ্যামলেটস কেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল রেসপেক্টের প্রতি সমর্থন রয়েছে মাত্র দু'জনের।
যুক্তরাজ্যের লন্ডন, বার্মিংহাম, ম্যানচেস্টার, ওল্ডহাম, কার্ডিফ, নিউক্যাসেল, লিডস, লিভারপুল, প্লেমাউথ, শেফিল্ড, সাউদাম্পটন ও লুটনে বসবাসরত বাঙালিদের মধ্যে পারিচালিত সমকালের এই জরিপে বাঙালিদের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে উঠে এসেছে লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনালগ্রিন-বো আসন। যুক্তরাজ্যে বাঙালি জনগোষ্ঠীর হালনাগাদ সরকারি কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও বাঙালির সংখ্যা পাঁচ লাখেরও বেশি। ১০ বছর আগে জনসংখ্যা ছিল প্রায় তিন লাখ।
বাংলাদেশি নির্বাচনী আমেজ শুধু টাওয়ার হ্যামলেটসে : সমকালের জরিপে লেবার পার্টির প্রতি বাঙালির সমর্থন পাওয়া গেলেও একমাত্র বাঙালি অধ্যুষিত দুই আসন বেথনালগ্রিন ও বো এবং পপলার ও লাইম হাউস ছাড়া অন্য কোনো আসনে বাঙালিদের মধ্যে নির্বাচনী আমেজ নেই। টাওয়ার হ্যামলেটসের দুটো আসনে প্রতিদিন মিটিং, সমাবেশ, র‌্যালি, ঘরে ঘরে ভোট প্রার্থনায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
ভোট কেন্দ্রে যাবেন ৩৯ শতাংশ বাঙালি : বাঙালিদের মধ্যে দুটি আসনে বাংলাদেশের মতো নির্বাচনী আমেজ পরিলক্ষিত হলেও এশিয়ানদের মধ্যে পরিচালিত অপর এক জরিপে পাওয়া গেছে ভিন্ন তথ্য। বিবিসি এশিয়ান নেটওয়ার্ক পরিচালিত সাম্প্রতিক আইসিএম জরিপে জানা গেছে, আসন্ন পার্লামেন্ট নির্বাচনে ব্রিটেনে বসবাসকারী অর্ধেক এশিয়ান ভোট দিতে আগ্রহী নয়। মাত্র ৪৪ শতাংশ এশিয়ান বলেছেন, তারা ভোট দেবেন। এ সংখ্যা প্রতি ১০ জনের মাত্র ৪ জন। জাতীয় পর্যায়ে এই হার ৫৫ শতাংশ। এশিয়ান ভোটারদের মধ্যে আবার ভাগাভাগি রয়েছে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভোটারদের ৫১ শতাংশ ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে ৩৯ শতাংশ বাংলাদেশি এবং ৩৮ শতাংশ পাকিস্তানি ভোট দেবেন, এমন পরিসংখ্যান জরিপে উঠে এসেছে।
এ বছর প্রধান তিনটি দল থেকে ৮৯ জন এশিয়ান নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২০০৫ সালে এ সংখ্যা ছিল ৬৮। এদিকে আইসিএম জরিপে মাত্র ১৫ শতাংশ ভোটার এশিয়ান বংশোদ্ভূত প্রার্থীকে ভোট দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ব্রিটেনের জনসংখ্যার মোট ৪ শতাংশ হচ্ছে এশিয়ান। ২০০৫ সালে ৬৪৬ আসনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মাত্র ৬ জন এশিয়ান এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
লেবার পার্টির ২০টি আসনের একটি বেথনালগ্রিন-বো
ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি ২০টি টার্গেট আসনের একটি হিসেবে বাঙালি অধ্যুষিত বেথনালগ্রিন-বো আসনকে বেছে নিয়েছে। বাঙালির শত বছরের ইতিহাসসমৃদ্ধ এ আসনটি ২০০৫ সালের নির্বাচনে নবগঠিত রাজনৈতিক দল রেসপেক্ট প্রধান জর্জ গ্যালওয়ে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন লেবারের উনা কিংয়ের কাছ থেকে। লেবার পার্টির সেইফ সিট খ্যাত এ আসনটি কয়েক দশক থেকেই লেবার এমপিদের দখলে ছিল। ২০০৫ সালের এই পরাজয়ের জ্বালা এখনও ভুলতে পারেনি লেবার পার্টি। আর তাই এবারের নির্বাচনে এই আসন পুনরুদ্ধারের টার্গেট নিয়ে নির্বাচনে নেমেছেন পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলীয় প্রার্থী অক্সফোর্ড গ্র্যাজুয়েট রুশনারার পক্ষে প্রচারে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন, ফরেন সেক্রেটারি ডেভিড মিলিব্যান্ডসহ শীর্ষস্থানীয় লেবার নেতারা ইতিমধ্যে বাঙালিপাড়াখ্যাত এই আসন সফর করে গেছেন। জনমত এবারও লেবার পার্টির পক্ষে। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী এখনও রুশনারা এগিয়ে আছেন। এই আসনের বাঙালিদের আবেগ-অনুভূতি এখন রুশনারাকে ঘিরে।
৬ মে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির দুটি আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী আলোচিত প্রার্থী রুশনারা ছাড়াও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীদের বিভিন্ন দল মনোনয়ন দিয়েছে। কনজারভেটিভ পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন জাকির খান, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে আফজল মশরুর, রেসপেক্ট পার্টি থেকে আবজল মিয়া ও গ্রিন পার্টি থেকে ফরিদ বখত।

৪ মে' ২০১০
Link to Article

0 comments:

Post a Comment

Popular Posts