Photo: Syed Sheesh |
হাইকমিশনার ড. সাইদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে ও প্রেস মিনিস্টার রাশেদ চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় মূল বক্তা ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী।
গাফ্ফার চৌধুরী তার বক্তৃতায় বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের জলদগম্বীর কন্ঠস্বর, স্বাধীনতার ঘোষণা ইত্যাদি নিয়েই আমরা সব সময় আলোচনা করি, স্মৃতিচারণ করি। কিন্তু তাঁর ঐ ভাষণের বিস্তারিত অর্থ খোঁজার চেষ্টা আমরা অনেকেই করি না।’
তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের এই ঐতিহাসিক ভাষণ সম্পর্কে তাঁর কাছে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- স্বাধীনতার সংগ্রাম বলতে আমি স্বাধীন একটি রাষ্ট্রের কথা বলেছিলাম আর মুক্তির সংগ্রাম বলে বুঝাতে চেয়েছিলাম ুধা, দারিদ্র, অশিা, ধর্মান্ধতা ইত্যাদি থেকে বেরিয়ে আসার কথা।’
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, ‘১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর আমরা একটি সামরিক যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মুক্তির সংগ্রামে জয়ী হতে পারিনি। সামরিক বিজয় পেলেও ওই সময় আমরা রাজনৈতিক বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারিনি, যে সংগ্রাম এখনও আমাদের করতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যে সাহসী উদ্যোগ নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা, সেটি শুধু কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীকে শাস্তি দিলেই শেষ হবে না, রাজনৈতিকভাবেও এদের নিশ্চিহ্ন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের প্রাণ এতই শক্ত, যা অনেকটা রূপকথার সেই রাসের মত। সাগরের নিচে, কুঠুরির মধ্যে যেমন ছিল রূপকথার সেই রাসের প্রাণ, ঠিক তেমনি বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে বিরোধী সাম্প্রদায়িক যুদ্ধাপরাধীদের মূল শেকড় তেমনি আজ আমাদের সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে বিস্তৃত। এদের সমূলে উপড়ে ফেলতে না পারলে এক যুদ্ধাপরাধীর রক্ত থেকে আরো হাজারোটা জন্ম নেবে।’
জনাব চৌধুরী বলেন, ‘বাঙালির রাজনৈতিক মুক্তির জন্যে সবচেয়ে জরুরি অর্থনৈতিক মুক্তি। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারলে কোনো অপশক্তিই সমাজে স্থান পাবে না। বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে সেই সংগ্রামই শুরু হয়েছে বলে আমি মনে করি। যা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে হাইকমিশনার ড. সাইদুর রহমান খান বলেন, ‘স্বাধীনতার ৩৯ বছরেও আমরা কাঙ্খিত বাংলাদেশ না পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো- দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক শাসনের অনুপস্থিতি। সামরিক শাসনের ছায়ায় দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা ও কপমুণ্ডুকতা এমনভাবে সমাজে বিস্তৃতি লাভ করেছিল, যার দায় এখনও আমাদের বহন করতে হচ্ছে।’
বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের অর্থনীতি দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে উল্লেখ করে হাইকমিশনার বলেন, ‘আমাদের বিদেশি বন্ধুরাও এখন এ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের প্রশংসা করছে।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে যে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে লন্ডনকে তাঁর মূল ঘাঁটি উল্লেখ করে বলেন, ‘চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীরা এখানে বসে তাদের ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তৃত করে যাচ্ছে।’
বক্তারা সম্প্রতি লন্ডনে বসবাসরত বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম নায়ক হিসেবে অভিযুক্ত একজন যুদ্ধাপরাধীর প্রতিষ্ঠিত চ্যারিটি সংস্থার কর্মকর্তার বাংলাদেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাাৎ করার বিষয়টির প্রতি হাইকমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘বিদেশে কোনো চ্যারিটি সংস্থা কার স্বার্থে কাজ করছে এগুলো সম্পর্কে সরকারকে সব সময় সতর্ক রাখা উচিত। বিদেশে বসে যে চ্যারিটি সংস্থা বা সংস্থার কোনো কর্মকর্তা দেশের বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ড চালায়, সেই যদি বাংলাদেশে গিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাাতের সুযোগ পায়, তাহলে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে।’
আলোচনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- মুক্তিযুদ্ধের প্রবাসী সংগঠক সুলতান শরীফ, নুরুল ইসলাম, আবু মুসা হাসান, সামসুদ্দিন খান, এমএ গণি, সৈয়দ ফারুক, হারুনুর রশীদ, ডা. ফয়জুল ইসলাম, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিজয় দিবসের বাণী পড়ে শোনানো হয়।
আলোচনা সভা শেষে অনুষ্ঠিত হয় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে সঙ্গীত পরিবেশ করেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী গৌরি চৌধুরী, শিশু শিল্পী নাহিয়ান পাশা প্রমুখ। ছোট্ট মেয়েদের একটি গ্র“প অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১০
Link to Article
0 comments:
Post a Comment