Syed Anas Pasha

Syed Anas Pasha

ফুলবাড়ী আন্দোলনে লন্ডন ভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠনের সমর্থন : এশিয়া এনার্জির বিরুদ্ধে লন্ডনে বিক্ষোভ

টাওয়ার হিল, লন্ডন: বাংলাদেশের দিনাজপুরের ফুলবাড়ী কয়লাখনিতে এশিয়া এনার্জি কোম্পানির (নতুন নাম ‘জিসিএম’) প্রস্তাবিত উম্মুক্ত কয়লা খনি প্রকল্পের বিরুদ্ধে সোমবার লন্ডনে বিক্ষোভ হয়েছে।

লন্ডনের টাওয়ার হিলে জিসিএম তথা এশিয়া এনার্জির বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) সভাস্থলের সামনে এই বিােভ প্রদর্শন করে ব্রিটেনে বসবাসরত অভিবাসী বাঙালিসহ সেখানকার বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন।

বাংলাদেশের তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ রা জাতীয় কমিটি, ব্রিটেন সোশালিস্ট পার্টি ও লন্ডন মাইনিং নেটওয়ার্কের সহযোগিতায় প্রটেক্ট রিসোর্সেস অব বাংলাদেশ এই বিক্ষোভের আয়োজন করে। মাইনস অ্যান্ড কমিউনিটিস ইউকে, ওয়ার্ল্ড ডেভেলাপমেন্ট মুভমেন্ট, লন্ডন প্ল্যাটফরম এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি প্রজেক্ট ইউএসএ এই বিক্ষোভ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানায়।

ডিসেম্বরের হাড়-কাঁপানো শীত উপো করে পূর্ব-ঘোষিত সময় অনুযায়ী সোমবার সকাল সাড়ে দশটার আগেই বিক্ষোভকারীরা টাওয়ার হিলের ডিএলআর স্টেশনের সামনে সমবেত হয়। বিক্ষোভকারীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে জিসিএম এর এজিএম স্থলের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলে নিরাপত্তাকর্মীরা ভবনের মূল ফটক তালাবদ্ধ করে দেয়। বিক্ষুব্ধ জনতা এ সময় ফটকের সামনে অবস্থান নেয় এবং এক ঘন্টারও বেশি সময় ধরে তা অবরোধ করে রাখে।

বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন লন্ডন মাইনিং নেটওয়ার্ক এর কো-অর্ডিনেটর রিচার্ড স্যালি, সোশ্যালিস্ট পার্টির ইস্ট লন্ডনের সাধারণ সম্পাদক ম্যানি থাইন, রিফিউজি রিসার্চ কাউন্সিলের ডিরেক্টর পল ডুডম্যান, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ রা কমিটির আহ্বায়ক স্বাধীনবাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী মাহমুদুর রহমান বেনু, গোলাম মোস্তফা, সিপিবি যুক্তরাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ এনাম, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির ওয়ালীউর রহমান, ড. আখতার সোবহান মাশরুর, ইসহাক কাজল ও বাসদ সমর্থক ফোরামের মোস্তফা ফারুক প্রমুখ।

জিসিএম এর এজিএমস্থলের বাইরে বিক্ষোভকারীরা এক প্রতিবাদ সভা করে। এতে সূচনা বক্তব্য রাখেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে উম্মুক্ত খনিপ্রকল্প বিরোধী গণমানুষের প্রতিরোধ বিষয়ে গবেষণারত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপিকা সামিনা লুৎফা।

তিনি বলেন, “গবেষণার কাজে ফুলবাড়ীতে গিয়ে স্থানীয় মানুষের সাথে কথা বলে তাদের যে তীব্র প্রতিরোধস্পৃহা আমি দেখেছি, তাতে আমার ধারণা জিসিএম এর প্রস্তাবিত উন্মুক্ত কয়লাখনি অসম্ভব একটি প্রকল্প। এ খনির সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে স্থানীয় জনগণ পূর্ণ মাত্রায় সচেতন। এটি তাদের কাছে জীবন-মরণ সমস্যা এবং তারা জীবন দিয়ে হলেও এই উন্মুক্ত খনি প্রকল্প প্রতিরোধ করতে সংকল্পবদ্ধ।”
সভাচলাকালীন জিসিএম’র কয়েকজন শেয়ারহোল্ডার নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় সভাস্থলে প্রবেশ করতে গেলে উপস্থিত বিক্ষোভকারীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা "ব্লকেইড জিসিএম", "শেইম অন জিসিএম" ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে।

এ পর্যায়ে লন্ডন মাইনিং নেটওয়ার্কের কো-অর্ডিনেটর রিচার্ড স্যালি তার বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশের জনগণের এই আন্দোলনের প্রতি লন্ডন মাইনিং নেটওয়ার্কের পূর্ণ সমর্থন জানাতে আজ আমি এখানে এসেছি। জিসিএমের কার্যক্রম এবং তাদের শেয়ারহোল্ডারদের আগ্রাসী ও আক্রমণাত্মক আচরণ আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা।’’

তিনি বলেন, “তারা উম্মুক্ত ইন্টারনেট ফোরামে বেসবলের ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে সম্ভাব্য বিক্ষোভ দমনের হুমকি দিয়েছে, খনি-বিরোধীদেরকে নানাভাবে হয়রানি করে যাচ্ছে। কিন্তু এভাবে তারা বিােভ দমন করতে পারবে না। আমরা ফুলবাড়ীর জনগণের সংগ্রামে তাদের পাশে আছি এবং থাকবো।”

ব্রিটিশ সোসালিস্ট পার্টি ইস্ট লন্ডন শাখার সেক্রেটারি ম্যানি থাইন তার বক্তব্যে বলেন, ‘‘সোসালিস্ট পার্টি বাংলাদেশের এ আন্দোলনকে দীর্ঘদিন ধরে সমর্থন করে আসছে। আজও আমরা এসেছি বাংলাদেশি জনগণের দাবির প্রতি আমাদের সমর্থন জানাতে।”

উপস্থিত বাঙালী বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের মাধ্যমে আমি ফুলবাড়ীর জনগণকে এটুকু বলতে চাই ব্রিটিশ সোসালিস্ট পার্টি এই আন্দোলনে সবসময় পাশে থাকবে।

তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ রা কমিটির আহবায়ক স্বাধীনবাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী মাহমুদুর রহমান বেনু তার বক্তব্যে সতর্ক করে দেন, “বাংলাদেশে দ্রুতহারে কমতে থাকা চাষযোগ্য জমি ও খাদ্য সংকটকে আরো ঘনীভূত করবে ৬ হাজার হেক্টর জমি ধ্বংস করার এই প্রস্তাবিত উম্মুক্ত খনি প্রকল্প। ফলে দারিদ্র্য আরো বাড়বে, বাড়বে খাদ্যবঞ্চিত মানুষের সংখ্যা।”

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ড. আখতার সোবহান মাশরুর, বাংলাদেশের কমুনিস্ট পার্টির সৈয়দ এনাম, গোলাম মোস্তফা, যুব ইউনিয়নের শাহরিয়ার মুখ।

সমাবেশের শেষ পর্যায়ে ইস্ট লন্ডন ইউনিভার্সিটির গবেষক ও খন্ডকালীন শিকিা রুমানা হাশেম যখন তাঁর  লিখিত বক্তব্য পড়ছিলেন তখন জিসিএম এর একজন শেয়ারহোল্ডার ফটকের বাইরে এসে রুমানার বক্তব্য বানচাল করার উদ্দেশ্যে বিােভকারীদের সাথে তর্কে লিপ্ত হতে চেষ্টা করেন। প্তি কর্মীরা "কিলার", "বার্গলার", "ব্লাডসাকার" বলে তার দিকে তেড়ে গেলে তিনি দ্রুত সরে পড়েন।

রুমানা এরপর আবেগঘন ভাষায় ২০০৬ সালের ফুলবাড়ী আন্দোলনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, “আমাদের বন্ধুদের হত্যা করে সেই রক্তমাখা হাতে এশিয়া এনার্জি তাদের নাম বদলে জিসিএম রেখেছে। আমরা সুদূর ফুলবাড়ীর মানুষদের কাছে এই বার্তা পৌঁছাতে চাই যে, আমরা তাদের সাথে আছি, আমরা এশিয়া এনার্জির লন্ডন সভা পর্যন্ত এসেছি।”

সকাল ১১টায় জিসিএম এর সভা আরম্ভ হওয়ার কথা থাকলেও হাতেগোনা কয়েকজন শেয়ারহোল্ডার ছাডা তেমন কাউকে সভাস্থলে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। বেলা ১১.২০ মিনিটের দিকে নিরাপত্তাকর্মী এবং পুলিশের সহায়তায় কয়েকজন সভাস্থল থেকে বের হলেও তাদের হাতে বার্ষিক সভার কোনো বুকলেট বা কোনো প্রকার কাগজপত্র দেখা যায়নি। বেলা ১১.৪৬ মিনিটে জিসিএম লন্ডনের একটি অনলাইন ফাইনান্সিয়াল নিউজ পোর্টালে তাদের সভা সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

এদিকে সর্বশেষ খবর অনুযায়ী লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে জিসিএমের শেয়ারের দর পতন হতে শুরু করেছে। সোমবারের শেয়ারপ্রতি দর সর্বোচ্চ ২.৬৫ পেন্স থেকে আজ দাম কমে দাঁড়িয়েছে ২.৩৩ পেন্স এ।

বিােভ আয়োজকরা আশা করছেন, এই বিক্ষোভের ফলে জিসিএম এর শেয়ার-হোল্ডাররা এই কোম্পানিতে বিনিয়োগের ঝুঁকি সম্পর্কে নতুন করে ভাববেন এবং তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৪ ঘন্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১০
Link to Article

0 comments:

Post a Comment

Popular Posts