লন্ডন: বড়দিন সামনে রেখে নাশকতা সৃষ্টির পাঁয়তারার অভিযোগে গত সোমবার ব্রিটেনে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশিসহ অন্যদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
এদিকে বড়দিন সামনে রেখে বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকায় ইসলামি চরমপন্থিদের এক পোস্টার ক্যাম্পেইন নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে পূর্ব লন্ডনে।
ব্রিটেনের সাউথ ওয়েলসের আঞ্চলিক পত্রিকা ‘সাউথ ওয়েলস একো’তে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে প্রেসিডেন্ট ওবামা সন্দেভাজনদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান। জবাবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ১২ সন্দেহভাজনের গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া, তদন্ত কার্যক্রম ও বিস্তারিত পরিচয় সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অবহিত করেন।
এদিকে, ব্রিটেনের শীর্ষস্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে গ্রেপ্তার হওয়াদের পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করা না হলেও তাদের অধিকাংশই যে বাংলাদেশি তা বার বার উল্লেখ করা হচ্ছে। প্রথম দিকে ‘কিছু বাংলাদেশি’ বলা হলেও এখন বলা হচ্ছে ‘অধিকাংশই বাংলাদেশি’।
প্রসঙ্গত, অপরাধ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত ব্রিটিশ পুলিশ সাধারণত অভিযুক্তদের সম্পর্কে মিডিয়াকে কোনো তথ্য দিতে চায় না। তাই এদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি।
তবে বাংলানিউজের অনুসন্ধানে গ্রেপ্তার হওয়া ১২ জনের ১০ জনকেই বাংলাদেশি মনে করা হচ্ছে। এদের মধ্যে ৫ জনের নাম পরিচয়ও সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।
ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফ থেকে ২৩ থেকে ২৮ বছর বয়সী এই ৫ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের দু’জন পেশায় ট্যাক্সিচালক। একজন একটি বাংলাদেশি রেস্তোরাঁর মালিক ও বাকী দু’জন অন্য কাজে জড়িত।
ট্যাক্সিচালক আব্দুল মান্নান ও তার সহোদর আব্দুল মালিকের নামও রয়েছে গ্রেপ্তার হওয়া ৫ জনের মধ্যে। তারা দু’জনই কার্ডিফের রিভারসাইড এলাকায় বসবাস করেন। গ্রেফতার হওয়া অন্যরা হলেন-জয়নাল আবেদিন, বাবলু আবেদিন ও রিপন উমর। জয়নাল আবেদিন ও বাবলু আবেদিনও সহোদর। তাদের বাস কার্ডিফের ইলি এলাকায়। আর রিপন ওমর একজন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী। তাদের সবার বাড়িই সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলায়।
কার্ডিফে বসবাসরত কয়েকজন বাংলাদেশি বাংলানিউজকে জানান, গ্রেপ্তার সবাই বাংলাদেশে নিষিদ্ধ-ঘোষিত হিজবুত তাহরীরের সমর্থক। মাঝে মধ্যেই তারা এ বিষয়ক বিভিন্ন লিফলেট ও অডিও ক্যাসেট বের করতেন। এসবে ইসলামের দৃষ্টিতে জেহাদ সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী, ভোট হারাম ইত্যাদি প্রচার করা হতো।
সম্প্রতি কার্ডিফে স্থানীয় লেবার পার্টির উদ্যোগে এক ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে গিয়ে এরা লেবার পার্টির বিরুদ্ধেও প্রচারণা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা ফতোয়া দিয়ে বলেছেন, ইসলামিক দল ছাড়া লেবার বা অন্যান্য দলকে সমর্থন করা হারাম।
বাংলানিউজের অনুসন্ধানে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃতরা একসময় মাদকাসক্ত ছিলেন। এরপর হঠাৎই তারা ইসলামিক বেশভূষা ধারণ করেন।
কার্ডিফের স্থানীয় অধিবাসীরা জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা সুযোগ পেলেই মানুষকে জেহাদের পথে নামার নসিহত করতেন। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে এরা সিদ্ধহস্ত। স্থানীয়ভাবে ‘ইন্টারনেট মওলানা’ হিসেবে এদের আলাদা পরিচিতি আছে। গ্রেপ্তারকৃতদের সবাই যুদ্ধাপরাধের দায়ে বাংলাদেশে গ্রেপ্তারকৃত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ভক্ত। এদের প্রত্যেকের গাড়ি ও বাড়ীতে সময়ই সাঈদীর ওয়াজের ক্যাসেট বাজে।
এখনও এদের ব্যাপক পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে জানা গেছে। এরা বসবাস করতো বা আনাগোনা ছিল কার্ডিফের এমন ৮টি বাড়িতে পুলিশ ব্যাপক অনুসন্ধান চালাচ্ছে। এসব বাড়িতে বসবাসরত লোকজনকে সরিয়ে হোটেলে নিয়ে রাখা হয়েছে।
সাউথ ওয়েলস পুলিশের স্পেশাল ক্রাইম ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিসট্যান্ট চিফ কনস্টেবল ম্যাট জুকস এক বিবৃতিতে সন্দেহভাজনদের সম্পর্কে কেউ কিছু জানলে তা পুলিশকে জানানোর অনুরোধ জানিয়েছে।
এ ঘটনা তদন্তে পুলিশকে সহযোগিতা করায় বিবৃতিতে স্থানীয় বাঙালি কমিউনিটিকে পুলিশের প থেকে ধন্যবাদও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার স্থানীয় মসজিদ কমিউনিটির সঙ্গে পুলিশের আবারও বৈঠক হওয়ার কথা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কার্ডিফে গ্রেপ্তার করা সবাইকে মিডল্যান্ডের কভেন্ট্রিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানকার থানায় তাদের আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরপর হয়তো তাদের ওয়েস্ট মিনস্টার কোর্টে হাজির করা হবে।
এদিকে লন্ডন, স্টক-অন ট্রেন্ট ও বার্মিংহামে গ্রেপ্তার করা বাকি ৭ জনকেও পুলিশ ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে জানা গেছে।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এদের সবাইকে এক সঙ্গে আদালতে তোলার সম্ভাবনা রয়েছে।
কার্ডিফের বাইরে অন্যান্য শহর থেকে গ্রেপ্তারকৃতদের পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা না গেলেও মূলধারার সংবাদ মাধ্যমে এদের প্রায় সবাইকেই বাংলাদেশি বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
পূর্ব লন্ডনের নিউহ্যাম ও টাওয়ার হ্যামলেটস থেকে গ্রেপ্তার করা ৩ জনের মধ্যে ২ জনই বাংলাদেশি বলে আগেই জানা গিয়েছিল। বাকী একজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
এদিকে, আসন্ন বড়দিনকে সামনে রেখে বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকায় ইসলামিক চরমপন্থিদের এক পোস্টার ক্যাম্পেইন নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে পূর্ব লন্ডনে।
‘দি ইভিল অব ক্রিসমাস’ নামের ওই পোস্টারে বলা হয়েছে- ক্রিসমাস হলো সমাজে অপরাধ বৃদ্ধি, ধর্ষণ, কিশোরী গর্ভধারণ, গর্ভপাত, ব্যভিচার, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে যৌন আগ্রহ সৃষ্টি ইত্যাদির মৌসুম। ইসলাম বলেছে- এসবকে আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে।
পোস্টারে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন সম্পর্কে বিভিন্ন আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়। বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস এর বিভিন্ন স্থানে এই পোস্টার টানানো হলেও সারাদেশব্যাপী এই পোস্টার ক্যাম্পেইন চালানো হচ্ছে বলে ব্রিটেনের একটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে।
জানা গেছে,এই পোস্টার ক্যাম্পেইনের মূল হোতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশে নিষিদ্ধ-ঘোষিত হিযবুত তাহরীরের যুক্তরাজ্য শাখার একজন নেতা।
ইসলামি চরমপন্থি হিসেবে অভিযুক্ত বাংলাদেশ জামায়তে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্কিত একটি সংগঠন এই ক্যাম্পেইনের মূল অর্থ যোগানদাতা ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
টাওয়ার হ্যামলেটসের স্থানীয় শ্বেতাঙ্গরা এ বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।
সোমবার গ্রেপ্তার করা ১২ সন্দেহভাজনের সঙ্গে এই পোস্টারের কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
বর্ণবাদবিরোধী রাজনীতিক টাওয়ার হ্যামলেটসের পপলার ও ক্যানিংটাউনের লেবার দলীয় এমপি সাবেক মন্ত্রী জিম ফিটজ প্যাট্রিক এই পোস্টারের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘সমাজে সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য উগ্রপন্থিরা এসব অপকর্ম করছে বলেই আমার ধারণা।’
তিনি অবিলম্বে টাওয়ার হ্যামলেটস থেকে এই পোস্টার তুলে ফেলতে স্থানীয় কাউন্সিলর কর্তৃপরে প্রতি অনুরোধ জানান।
টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র লুৎফুর রহমান বলেছেন, ‘এই পোস্টার জনগণের মতামতের প্রতিফলন নয়। এর সঙ্গে কমিউনিটির কোনো সম্পর্ক নেই।’
তিনি বলেন, ‘এই পোস্টার বারার অনেক নাগরিককে বিক্ষুব্ধ করেছে। এটির ভাষাও আক্রমণাত্মক।’
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১০
Link to Article
Syed Anas Pasha
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Popular Posts
-
বৌদ্ধদের উপর হামলার প্রতিবাদে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভ বক্তব্য রাখছেন একজন ভিক্ষু বক্তব্য রাখছেন বৌদ্ধিষ্...
-
Link to Article মঈনুদ্দিনের বিচার দাবিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলীপী
-
বিএনপিকে অর্থ দেওয়ার কথা স্বীকার সাবেক আইএসআই প্রধানের সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম লন্ডন : ১৯...
-
Syed Anas pasha, London Correspondent banglanews24.com LONDON: Senior vice-chairman of BNP Tarrique Rahaman asserted that the next ...
-
সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী- ছবি: মনিরুজ্জামান সামি ...
-
Amnesty for probe into Sylhet deaths London Correspondent banglanews24.com DHAKA: Amnesty International demanded investigation in...
-
সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম লন্ডন: যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াতের মদদপুষ্ট হেফাজতি ভোটের কথ...
-
UK court awards 9 men, including 6 Bangladeshis Syed Anas Pasha, London Correspondent banglanews24.com LONDON: A British Court award...
-
সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম লন্ডন: মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশের...
0 comments:
Post a Comment