লন্ডন: ব্রিটিশ হোম অফিসের এক নতুন নিয়মে হুমকির মুখে পড়েছে বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ সেক্টর। এ নিয়মে শর্টেজ অকুপেশন তালিকা থেকে শেফ, কুক, কিচিন, প্রোটার ইত্যাদি পদ বাদ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে এসব পেশায় চাকরি নিয়ে বাংলাদেশ থেকে আর কোন কর্মী ব্রিটেন আসতে পারবেন না। আগামী মাস থেকে এই নতুন নিয়ম চালু হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ব্রিটেনের টোরি-লিবডেম জোট সরকারের ইমিগ্রেশন নীতির কড়াকড়ির ফলেই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা এই সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছেন। এর ফলে রেস্তোরাঁ সেক্টর থেকে বাংলাদেশের মোটা অংকের বৈদেশিক মুদ্রা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এছাড়া নতুন ইমিগ্রেশন নীতির কারণে ইউরোপের বাইরে থেকে শেফ, কুক, কিচিন, প্রোটার ইত্যাদি পেশায় নতুন কর্মী নিয়ে আসার সুযোগ থাকছে না।
মাইগ্রেশন এডভাইজরি কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, বিদেশি শেফের জন্য পাঁচ শতাংশ পদ কোটা হিসেবে বরাদ্দ রাখা হলেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়ায় বাংলাদেশ এই কোটায়ও কোন সুবিধা করতে পারবে না। উপরন্তু এ কোটায় আসতে ইচ্ছুক শেফদের শিাগত যোগ্যতা হতে হবে গ্রাজুয়েশন লেভেলের। আর সংশ্লিষ্ট পেশায় থাকতে হবে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা।
শুধু তাই নয়, যে শর্তটি এই কোটায় আগ্রহীদের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা, তা হলো থাকা খাওয়া বাদে নূন্যতম বেতন হতে হবে বছরে ২৮ হাজার ২৬০ পাউন্ড, যা বাংলাদেশি মালিকানাধীন কোন রেস্টেুরেস্টের পক্ষে প্রায় অসম্ভবই বটে। ব্রিটেনের ৯৫ শতাংশ ইন্ডিয়ান পরিচয়ধারী বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টের এত উচ্চ হারে বেতন দেওয়ার সামর্থ নেই।
এদিকে রেস্টুরেন্ট শেফ ছাড়াও আরও আটটি পেশাকে পয়েন্ট বেইজড সিস্টেমের শর্টেজ অকুপেশন তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে হোম অফিস। এগুলোর মধ্যে রয়েছে পাইপ ওয়েল্ডার্স, এয়ারফ্রেম ফিটার, ইলেকট্রিশিয়ান, বুচার, এস্টেট এজেন্ট, হেয়ার ড্রেসার, সেলুন ম্যানেজার ইত্যাদি। এর ফলে এসব পেশায় কাজ করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের কোন দেশ থেকে কোন কর্মী এখন থেকে আর ব্রিটেন আসতে পারবে না।
বিগত লেবার সরকারের আমলে উপমহাদেশীয় শেফ নিয়োগের উপর কড়াকড়ি আরোপ করা হলে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের মধ্যে তীব্র ােভ সৃষ্টি হয়। এর প্রতিবাদে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক ট্রাফালগার স্কোয়ারে বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে বিশাল বিােভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। চায়নিজ ও ইন্ডিয়ানসহ বিভিন্ন বর্ণের হাজারো মানুষের এই সমাবেশের দাবির ফলে তৎকালীন সরকারের মাইগ্রেশন ইমিগ্রেশন এডভাইজরি কমিটি পয়েন্ট বেইজড সিস্টেমের শর্টেজ অকুপেশন তালিকায় শেফ পেশাকে অন্তর্ভুক্ত করে। এই নিয়মে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশীয় দেশগুলো থেকে দতা প্রমাণ সাপেে শেফদের ব্রিটেনে আসার সুযোগ ছিল।
কিন্তু বর্তমান জোট সরকারের নতুন নিয়মের ফলে এই সুযোগও আর থাকছে না। ২০০৮ সালে যখন পয়েন্ট বেইজড সিস্টেম চালু করা হয়, তখন নন ইউরোপীয় লেবার ফোর্সের জন্য প্রায় ১০ ল দ পদে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
হোম অফিসের মতে, বর্তমান নিয়ম বাস্তবায়ন হলে এই সংখ্যা বছরে ২ লাখ ৩০ হাজারে নেমে আসবে। ফলে দ ব্রিটিশ ওয়ার্ক ফোর্সের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
ইমিগ্রেশন মন্ত্রী ডামিয়ান গ্রিন বলছেন, ‘শর্টেজ অকুপেশন তালিকার এই পরিবর্তনের ফলে কেবল দতাসম্পন্ন ব্যক্তিরাই ব্রিটেনে প্রবেশ করতে পারবেন। এতে লাভবান হবে ব্রিটেন।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার মানুষের কর্মসংস্থান চায় এবং দ ব্রিটিশ ওয়ার্কফোর্স দিয়েই চাকরি খালি থাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর পদ পূরণ করতে চায়।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট সেক্টর থেকে প্রতি বছর ব্রিটেনের অর্থনীতিতে বিলিয়ন বিলয়ন পাউন্ড রাজস্ব জমা হয়। এক সময় নিজেদের কমিউনিটি থেকেই রেস্টুরেন্ট সেক্টরের কর্মী চাহিদা পূরণ হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নতুন প্রজন্ম এই সেক্টরে কাজ করতে আগ্রহী না হওয়ায় তা আর সম্ভব হচ্ছিল না। বাধ্য হয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ থেকে কর্মী এনে এই অভাব পূরণ করছিলেন।
বিগত লেবার সরকারের আমলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থেকে কর্মী আনার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করলে রেস্টুরেন্ট সেক্টরের সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশন সরকারের সাথে দীর্ঘ দেন-দরবার করে। এসময় সরকারের প থেকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী আনার এই সুযোগটির ব্যপক অপব্যবহারেরও অভিযোগ তোলা হয়।
এদিকে, সুযোগটি অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ সরকারের প থেকেও প্রয়োজনীয় যোগাযোগ করা হয় ব্রিটেনের সাথে।
শুধু তাই নয়, এই সুযোগের বিনিময়ে ব্রিটিশ চরমপন্থি সন্দেহভাজনদের স্বীকারোক্তি আদায়ে বাংলাদেশের এলিট ফোর্সখ্যাত র্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ন এর (র্যাব) ইন্টারোগেশন সেল ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হবে বলে বাংলাদেশের প থেকে একটি প্রস্তাবও দেওয়া হয়।
কিন্তু এত কিছুর পরও রেস্তোরাঁ সেক্টরে কাজ নিয়ে বাংলাদেশি কর্মীদের আর ব্রিটেনে আসার সুযোগ থাকছে না।
ব্রিটিশ হোম অফিসের নতুন এই নিয়মের ফলে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের মধ্যে নেমে এসেছে হতাশা। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশি মালিকানাধীন এই ব্যবসা সেক্টরটি টিকে থাকবে কি না, তা নিয়েই ব্যবসায়ীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে দুঃচিন্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১১
Link to Article
Syed Anas Pasha
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Popular Posts
-
বৌদ্ধদের উপর হামলার প্রতিবাদে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভ বক্তব্য রাখছেন একজন ভিক্ষু বক্তব্য রাখছেন বৌদ্ধিষ্...
-
Link to Article মঈনুদ্দিনের বিচার দাবিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলীপী
-
বিএনপিকে অর্থ দেওয়ার কথা স্বীকার সাবেক আইএসআই প্রধানের সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম লন্ডন : ১৯...
-
Syed Anas pasha, London Correspondent banglanews24.com LONDON: Senior vice-chairman of BNP Tarrique Rahaman asserted that the next ...
-
সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী- ছবি: মনিরুজ্জামান সামি ...
-
Amnesty for probe into Sylhet deaths London Correspondent banglanews24.com DHAKA: Amnesty International demanded investigation in...
-
সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম লন্ডন: যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াতের মদদপুষ্ট হেফাজতি ভোটের কথ...
-
UK court awards 9 men, including 6 Bangladeshis Syed Anas Pasha, London Correspondent banglanews24.com LONDON: A British Court award...
-
সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম লন্ডন: মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশের...
0 comments:
Post a Comment