লন্ডন: ব্রিটেনের টোরি-লিবডেম জোট সরকারের নতুন ইমিগ্রেশন নীতির নেতিবাচক প্রভাব সবচেয়ে বেশি মোকাবেলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশি কমিউনিটিকে। তাদের নেওয়া কঠোর ইমিগ্রেশন নীতির কারণে কঠিন সংকটের মুখে পড়েছে পুরো কমিউনিটি। বাঙালি কমিউনিটির রুটি রুজির সবচেয়ে বড় সেক্টর রেস্তোরা সেক্টরে বাংলাদেশ থেকে কর্মী আনার সুযোগ আগামী মাস থেকে কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরপরই, স্টুডেন্ট ভিসা ক্ষেত্রে হোম অফিসের নতুন করে কঠোর শর্তারোপ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছে ব্রিটেনে অধ্যায়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের। আর এর প্রভাবও পড়ছে বাঙালির রেস্তোরা শিল্পে।
গত মঙ্গলবার জোট সরকারের নতুন ইমিগ্রেশন নীতি ঘোষণাকালে হোম সেক্রেটারি থেরেসা মে পার্লামেন্টে বলেছেন, পড়াশোনার জন্যে ব্রিটেনে আসা ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা নিয়েই থাকতে হবে। আর তাই স্টুডেন্ট বিষয়ক ইমিগ্রেশন নীতিতে জোট সরকার কিছু নতুন শর্তারোপ করেছে। বিগত ১০ বছরে ব্রিটেনে বিদেশি স্টুডেন্টদের সংখ্যা তিনগুন বেড়ে যাওয়ায় জোট সরকারের ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত অঙ্গিকার বাস্তবায়নে সরকার বিদেশি স্টুডেন্টদের ক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে জানান হোম সেক্রেটারি।
নতুন ইমিগ্রেশন নীতিতে ছাত্রছাত্রীদের কাজের সুযোগ কার্যত অনেকটা বন্ধ করে দিয়ে ব্রিটেনে তাদের ঠিকে থাকাই কঠিন করে দেওয়া হয়েছে। পড়াশোনার নামে কাজ করে শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের লক্ষ্য নিয়ে যারা ব্রিটেনে এসেছেন নতুন নিয়মের মাধ্যমে তাদের প্রতি এই বার্তাই দেওয়া হচ্ছে যে, ‘তোমাদের জন্যে ব্রিটেন উপযুক্ত জায়গা নয়’ ।
স্টুডেন্ট ইমিগ্রেশন নীতিতে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ও পাবলিক ফান্ড পরিচালিত ফার্দার এডুকেশন কলেজগুলোর স্টুডেন্টরা কাজের সুযোগ পাবেন। অন্য কোন স্টুডেন্ট কাজের সুযোগ পাবেন না। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্টুডেন্টরা ওয়ার্ক প্লেসমেন্টেও যেতে পারবেন না। বর্তমানে স্টুডেন্টদের জন্যে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ ছিল। নতুন নিয়মে এই সুযোগ আর থাকছে না। ফলে যেসব স্টুডেন্ট কাজ করে নিজেদের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতেন তাদেরকে পড়তে হচ্ছে কঠিন সমস্যায়। অর্থাৎ এখন থেকে শুধুমাত্র ধনীলোকদের সন্তানেরা যারা দেশ থেকে টাকা নিয়ে আসতে পারবেন তারাই ব্রিটেনে পড়াশোনার সুযোগ পাবেন, এমনই নিয়ম আরোপ হচ্ছে নতুন স্টুডেন্ট ইমিগ্রেশন নীতিতে। শুধু তাই নয়, একজন স্টুডেন্ট পড়শোনা ও কাজের মাধ্যমে ১০ বছর ব্রিটেনে থাকার পর স্থায়ী হওয়ার যে সুযোগ ছিল এটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নতুন নীতিতে।
এখন থেকে নিচের লেভেলের একজন স্টুডেন্ট এর কোর্সের সময়সীমা হলো ৩ বছর। উচ্চতর শিক্ষার জন্যে সর্বোচ্চ মেয়াদকাল হচ্ছে ৫ বছর। এর বেশি সময় কেউ ব্রিটেনে থাকতে পারবেন না। পয়েন্ট বেইজ সিস্টেমে টিয়ার ওয়ান এর অধীনে কোর্স শেষে স্টুডেন্টরা ২ বছরের জন্যে যে চাকরির সুযোগ পেতেন তাও আর থাকবে না।
শুধুমাত্র যেসব গ্রাজুয়েশন শেষে টিআর টু এর অধীনে দক্ষ হিসেবে স্পন্সর এমপ্লায়ারের চাকরির অফার পাবেন তারাই চাকরির সুযোগ নিতে পারবেন।
ডিগ্রি পর্যায়ে পড়াশোনার জন্য যেসব স্টুডেন্ট ব্রিটেনে আসতে চাইবেন, তাদের ‘আপার ইন্টারমিডিয়েট’ লেভেলের ইংরেজী জানা থাকতে হবে। বিমান বন্দরে স্টুডেন্টরা ইন্টারপ্রেটার ছাড়া কথা বলতে না পারলে তাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। হোম সেক্রেটারির পরিকল্পনায় স্পন্সর করার ক্ষেত্রে ব্রিটেনের কলেজগুলোকে আরও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার কথাও বলা হয়েছে। অতি বিশ্বস্ত স্পন্সর কলেজ ছাড়া আর কেউ স্টুডেন্টদের ভিসা স্পন্সর করতে পারবে না।
নতুন নীতিমালায় ডিপেন্ডেন্ট হিসেবে স্টুডেন্টদের পোষ্যদেরও ব্রিটেনে আসার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ইউনিভার্সিটির পোস্ট গ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট ও সরকারি আমন্ত্রণে আসা স্টুডেন্টরাই তাদের পোষ্যদের ব্রিটেনে আনতে পারবেন।
বর্তমানে দীর্ঘমেয়াদী কোর্সে পড়াশোনারত সকল স্টুডেন্টই তাদের পোষ্যদের ব্রিটেনে নিয়ে আসতে পারেন।
এদিকে, স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে নতুন কড়াকড়ির ফলে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় পড়েছেন ব্রিটেনে অধ্যায়নরত বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরা। বর্তমান ভিসার মেয়াদ শেষ হলে নতুন করে ভিসা লাগাতে গেলে যে কঠিন সমস্যার সম্মুখিন হবেন এই চিন্তায়ই হতাশ হয়ে পড়েছেন অনেক ছাত্রছাত্রী। পার্টটাইম কাজ করে যারা নিজেদের পড়াশোনার অর্থ জোগাড় করছেন, নতুন কঠোর ভিসা নীতির ফলে এই পথটিও তাদের বন্ধ হতে যাওয়ায় তীব্র মানষিক অশান্তি শুরু হয়েছে তাদের মধ্যে।
বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন রেস্তোরাগুলোতে যেসব স্টুডেন্ট কাজ করছেন, নতুন নিয়মের ফলে তারাও চাকরি ছেড়ে দেবেন এমন আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রেস্তোরা ব্যবসায়ীরাও। কারণ এমনিতেই কাজের লোকের অভাব। ব্রিটেনে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্ম এই পেশায় আসছে না। বাংলাদেশ থেকেও কর্মী আনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ভরসা ছিল ব্রিটেনে পড়তে আসা বাংলাদেশি ছাত্ররা। পার্টটাইম কাজে নিয়ে এসে এই স্টুডেন্টদের দিয়েই কর্মীর অভাব অনেকটা পুরণ হচ্ছিল। কিন্তু নতুন স্টুডেন্ট ভিসা নীতিতে এটিও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ছোট ছোট প্রাইভেট কলেজের স্পন্সর নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে প্রচুর বাংলাদেশি স্টুডেন্টরা ব্রিটেনে এসে নিজেরে উজ্জল ভবিষ্যতের যে স্বপ্ন দেখছিলেন, নতুন স্টুডেন্ট ইমিগ্রেশন নীতির ফলে তাদের সেই স্বপ্ন এখন স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে। আর তাই স্টুডেন্টদের অনেকেই এখন খুঁজছেন বিকল্প পথ। পার্শ্ববর্তী ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে পাড়ি দিয়ে হলেও সুন্দর একটি আগামীর স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ এখন খুঁজছেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৫ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১১
Link to Article
Syed Anas Pasha
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Popular Posts
-
বৌদ্ধদের উপর হামলার প্রতিবাদে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভ বক্তব্য রাখছেন একজন ভিক্ষু বক্তব্য রাখছেন বৌদ্ধিষ্...
-
Link to Article মঈনুদ্দিনের বিচার দাবিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলীপী
-
বিএনপিকে অর্থ দেওয়ার কথা স্বীকার সাবেক আইএসআই প্রধানের সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম লন্ডন : ১৯...
-
Syed Anas pasha, London Correspondent banglanews24.com LONDON: Senior vice-chairman of BNP Tarrique Rahaman asserted that the next ...
-
সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী- ছবি: মনিরুজ্জামান সামি ...
-
Amnesty for probe into Sylhet deaths London Correspondent banglanews24.com DHAKA: Amnesty International demanded investigation in...
-
সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম লন্ডন: যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াতের মদদপুষ্ট হেফাজতি ভোটের কথ...
-
UK court awards 9 men, including 6 Bangladeshis Syed Anas Pasha, London Correspondent banglanews24.com LONDON: A British Court award...
-
সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম লন্ডন: মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশের...
0 comments:
Post a Comment