লন্ডন: বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি কমর উদ্দিনের মৃত্যুর খবর নিয়ে লুকোচুরি, ভুল তথ্য প্রদান ও মরদেহ দেখার সুযোগ না দেওয়ায় যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা-কর্মীসহ কমিউনিটির মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি তারেক রহমানের পরিবার নিয়ে লন্ডন থেকে প্রায় ১৫০ মাইল দূরে কিডারমিনিস্টার সাফারি পার্কে বেড়াতে গিয়ে তার মৃত্যু হলেও যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ স্থানীয় সিনিয়র নেতারা বিষয়টি গোপন রাখেন। তারা প্রচার করেন- বার্মিংহাম থেকে ফেরার পথে গাড়িতে কমর উদ্দীনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, বিএনপি ও জিয়া পরিবারকে অক্লান্ত সেবা দানকারী, সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত এই বিএনপি নেতার মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে কেন এই লুকোচুরি।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মিয়া মনিরুল আলম এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘তারেক রহমানের পরিবার নিয়ে জনাব কমর উদ্দিন বৃহস্পতিবার সকালে কিডারমিনিস্টার সাফারি পার্কে গিয়েছিলেন। এটা ছিল তারেক রহমানের পারিবারিক বিনোদনমূলক সফর। বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী এ সম্পর্কে কিছু জানতেন না। এই না জানার কারণেই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।’
মিয়া মনিরুল আলম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সারাদিন সাফারি পার্কে কাটিয়ে তারেক রহমানের পরিবারসহ কমর উদ্দিন রাত যাপন করেন কিডার মিনিস্টারের রামাদা হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে। স্ত্রী ও মেয়েসহ তারেক রহমানের সঙ্গে তিনি একাই ছিলেন। শুক্রবার সকালে তিনি হোটেল থেকে হাঁটতে বের হলে বুকে ব্যথা অনুভব করে আবার হোটেলে ফিরে আসেন। হোটেল কর্মীরা ধরাধরি করে তাকে রুমে নিয়ে গেলে সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে তার মৃত্যু হয়।’
অন্য একটি সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, কমর উদ্দিনের বুকে ব্যথার খবর শুনে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী কমর উদ্দিনের রুমে এসে হোটেল কর্মীদের অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে বলেন। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স আসার আগেই তারেক পরিবারের সামনেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
কমর উদ্দিনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ব্রিটেনের বিভিন্ন শহর থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরা তার মৃত্যুর কারণ ও কোথায় আছেন জানতে ফোন করেন সিনিয়র নেতাদের। কিন্তু কেউ প্রকৃত তথ্য দিতে পারছিলেন না।
স্থানীয় সাংবাদিকরা যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমএ সালামকে ফোন করলে তিনিও শুধু মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে আর কিছু বলতে চাননি। ফলে যুক্তরাজ্য বিএনপি সভাপতির মৃত্যু নিয়ে শুরু হয় গুজব-গুঞ্জন। কেউ বলেন তার মৃত্যু হয়েছে লন্ডন আসার পথে গাড়িতে, কেউ বলেন তিনি মারা গেছেন বার্মিংহামে।
এদিকে মিডল্যান্ডসহ বার্মিংহাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বিএনপি নেতা-কর্মীরা যখন জানতে পারেন, কিডারমিনিস্টার রামাদা হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে মারা গেছেন তাদের নেতা, তখন তারা হোটেলের সামনে ভিড় জমান। কমর উদ্দিনের সঙ্গে তারেক রহমানও আছেন জেনে প্রিয় নেতার মৃত্যুতে শোকাহত নেতা-কর্মীরা দেখা করতে চান দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে। কিন্তু তারেক রহমান তাদের সঙ্গে দেখা না করে হোটেল কর্মীদের বলে পাঠান, তিনি নেই। এতে অনেক নেতা-কর্মী অসন্তুষ্ট হন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপিকর্মী বাংলানিউজকে বলেন, ‘যে ব্যক্তি অক্লান্তভাবে বিএনপি ও জিয়া পরিবারকে সেবা দিয়ে আসছেন দীর্ঘ দিন, তার মৃত্যুর পর তারেক রহমান নিজেকে গোপন রাখার বিষয়টিই গুরুত্ব দিলেন বেশি। শোকাহত নেতা-কর্মীদের সামনে এসে সান্ত¡না দেওয়ার প্রয়োজনও মনে করলেন না। এটি মোটেই ঠিক হয়নি।’
বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মিয়া মনিরুল আলম অবশ্য বাংলানিউজকে বলেন, ‘মিডল্যান্ডের হুপিটস এলাকার এডউইন ফিউনারেল সার্ভিসে রক্ষিত কমর উদ্দিনের মরদেহ দেখতে তারেক গিয়েছিলেন শুক্রবার বিকেলে।’
তিনি বলেন, ‘কমর উদ্দিনের মৃত্যু যেহেতু হাসপাতাল ও নিজের এলাকার বাইরে হয়েছে, তাই স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মরদেহ না রেখে নিয়ম অনুযায়ী তা পাঠিয়ে দিয়েছে মিডল্যান্ডের হুপিটস এলাকার স্থানীয় এডউইন ফিউনারেল সার্ভিসে। আগামী সোমবার পর্যন্ত ইস্টার হলিডে থাকায় সংশি¬ষ্ট চিকিৎসকের ছাড়পত্র পেতে অপেক্ষা করতে হবে মঙ্গলবার পর্যন্ত। ছাড়পত্র পেলেই মরদেহ লন্ডন নিয়ে আসা হবে।’
মিয়া মনিরুল আলম আরও বলেন, ‘মৃত্যুর আগে কমর উদ্দিন বলে গেছেন, তার মরদেহ যেন সিলেটের বিয়ানীবাজারে দেশের বাড়িতে পাঠনো হয়। মঙ্গলবার মরদেহের ছাড়পত্র পাওয়ার পর নামাজে জানাজার সময় নির্ধারণ করা হবে। এরপর মরদেহ সিলেটে পাঠানো হবে।’
উলে¬খ্য, তিন মেয়ে ও দুই ছেলের বাবা কমর উদ্দিনের বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। ৬০ এর দশকের মধ্যভাগে তিনি ব্রিটেনে পাড়ি জমান। প্রথমে বিভিন্ন ধরনের চাকরি করলেও পরে ব্যবসা শুরু করেন। রেস্টুরেন্ট, ট্রাভেল এজেন্সি, মানি ট্রান্সফারসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার সঙ্গে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জড়িত ছিলেন।
৮০ এর দশকের মধ্যভাগ থেকে কমর উদ্দিন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হন। ৯৪ সালে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হলেও ২০০৬ সালের দিকে এই পদ লাভে সক্ষম হন। শুধু তাই নয়, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক হিসেবেও নিয়োগ পান তিনি। শুধু ব্রিটেন নয়, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশেও বিএনপির সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদারে তিনি বূমিকা রাখেন।
বাংলাদেশ সময় : ১৯৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১১
Link to Article
Syed Anas Pasha
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Popular Posts
-
বৌদ্ধদের উপর হামলার প্রতিবাদে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভ বক্তব্য রাখছেন একজন ভিক্ষু বক্তব্য রাখছেন বৌদ্ধিষ্...
-
Link to Article মঈনুদ্দিনের বিচার দাবিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলীপী
-
বিএনপিকে অর্থ দেওয়ার কথা স্বীকার সাবেক আইএসআই প্রধানের সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম লন্ডন : ১৯...
-
Syed Anas pasha, London Correspondent banglanews24.com LONDON: Senior vice-chairman of BNP Tarrique Rahaman asserted that the next ...
-
সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী- ছবি: মনিরুজ্জামান সামি ...
-
Amnesty for probe into Sylhet deaths London Correspondent banglanews24.com DHAKA: Amnesty International demanded investigation in...
-
সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম লন্ডন: যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াতের মদদপুষ্ট হেফাজতি ভোটের কথ...
-
UK court awards 9 men, including 6 Bangladeshis Syed Anas Pasha, London Correspondent banglanews24.com LONDON: A British Court award...
-
সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম লন্ডন: মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশের...
0 comments:
Post a Comment