বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বিলেতে প্রথম ২৪ ঘন্টার বাংলা ভাষাভাষী রেডিও স্টেশন বেতার বাংলার উদ্যোগে এই লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে রেফারেন্স সেন্টার হিসেবে কাজ করবে এই লাইব্রেরি। লাইব্রেরি’র নামও দেওয়া হয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধ লাইব্রেরি’।
মুক্তিযুদ্ধ লাইব্রেরি’র উদ্বোধন করতে গিয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেছেন, বিলেতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চায় এই লাইব্রেরি মাইল ফলক হিসেবে কাজ করবে।
প্রবাসে বেড়ে ওঠা আমাদের নব প্রজন্ম তাদের শেকড়ের সন্ধান পাবে এখান থেকে, জানবে তাদের জন্যে পূর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া সেই অমূল্য সম্পদ ‘মুক্তিযুদ্ধ’ সম্পর্কে।
তিনি বলেন, বাঙালির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট অর্জন মহান মুক্তিযুদ্ধ দেশের মানুষের মত এই ব্রিটেনের প্রবাসী বাঙালিদেরও রয়েছে গৌরোবজ্জল ইতিহাস।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ব্রিটেন প্রবাসী বাঙালিদের যেমন রয়েছে ঐতিহাসিক ভূমিকা, ঠিক তেমনি আবার এই ব্রিটেনেই গঠিত হয়েছিল পাকিস্তান পুনোরুদ্ধার কমিটি নামে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের একটি সংগঠন।
সুতরাং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে ব্রিটেনের রয়েছে একটি ঘনিষ্ট যোগাযোগ। গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে বিভিন্ন স্বৈরাচার, সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ব্রিটেন প্রবাসী বাঙালিরা যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন, ঠিক তেমনি স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পরও বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এখনও যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে সেটিরও অন্যতম ঘাটি হচ্ছে এই ব্রিটেন।
ব্রিটেনে সংগঠিত মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তির এইসব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হলে, ব্রিটেনে বেড়ে ওটা আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। আর এই ইতিহাস জানাতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লাইব্রেরি’র বিকল্প নেই। বেতার বাংলার উদ্যোগে সেই লাইব্রেরিটিই আজ যাত্রা শুরু করলো।
এটি একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগ। ধন্যবাদ বেতার বাংলাকে।
বুধবার রাতে পূর্ব লন্ডনের বেথনালগ্রীনস্থ বেতার বাংলা স্টুডিওতে আয়োজিত মুক্তিযুদ্ধ লাই্েব্ররি‘র এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিলেতের বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা প্রচ্ছায়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কর্নেল (অব:) শহীদ উদ্দিন খান পিএসসি’র সৌজন্যে স্থাপিত এই লাইব্রেরিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কিত বইগুলো সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।
বিলেতের ইতিহাস অনিসন্ধিৎসু গবেষক ও পাঠকসহ সর্বসাধারণের জন্যে উম্মুক্ত এই লাইব্রেরি থেকে বই সংগ্রহের নিয়ম কানুন পরবর্তীতে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন বেতার বাংলা কর্তৃপক্ষ।
লাইব্রেরি‘র দাতা কর্নেল শহীদ উদ্দিন খান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে।
তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিলেত প্রবাসীদের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, বেতার বাংলা’র এই লাইব্রেরি এদেশে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মকে তাদের পূর্ব পুরুষের গৌরবগাঁথা ইতিহাসের কথা জানাতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশা রাখি।
অনুষ্ঠানে রাজনীতিক, সাংবাাদিক, সঙ্গীতশিল্পী, কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ বেতার বাংলার বিপুল সংখ্যক শ্রোতাও উপস্থিত ছিলেন।
লাইভ সম্প্রচারিত এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রবীন রাজনীতিক সুলতান শরীফ, বেতার বাংলা’র উপদেষ্টা সাংবাদিক আবু মুসা হাসান, রাজনীতিক সৈয়দ এনাম, সঙ্গীতশিল্পী হিমাংশু বিশ্বাস, আলাউর রহমান ও সাবেক কাউন্সিলর হেলাল রহমান প্রমুখ।
বেতার বাংলা’র বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উপস্থাপকবৃন্দ পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
দেশের বাইরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কোন লাইব্রেরি এটিই প্রথম। লাইব্রেরিতে বাংলা পিডিয়া ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ বইসমূহ স্থান পেয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণসহ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসনির্ভর বিভিন্ন সিডিও রয়েছে লাইব্রেরিতে।
এতে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি ভাষায় রচিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থও সংযোজন করা হবে বলে জানিয়েছেন বেতার বাংলা কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের চল্লিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে বেতার বাংলায় বছরব্যাপী অনুষ্ঠান ‘গৌরবের চল্লিশ বছরকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনার আরেকটি উদ্যোগ নিয়েছে বেতার বাংলা কর্তৃপক্ষ।
প্রতিদিনের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষকসহ সমাজের বিভিন্নস্তরের ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপচারিতার বিষয়টি নিয়ে ৭১ -এর মুক্তিযুদ্ধের একটি ইতিহাস তৈরির পরিকল্পনা করছে বেতার বাংলা।
বাংলাদেশ সময়: ০৬০১ ঘন্টা, মে ০৫, ২০১১
Link to article
0 comments:
Post a Comment