Syed Anas Pasha

Syed Anas Pasha

Banglanews24.com::::: আসছেন খালেদা, বাড়ছে টেনশন: মা-ছেলের মিলন হতে পারে রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট

লন্ডন: বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া শনিবার লন্ডন পৌঁছবেন। তার সফর যতই এগিয়ে আসছে, পদ লাভ ও পদ রক্ষায় যুক্তরাজ্য বিএনপিতে বাড়ছে ততই টেনশন।

কমর উদ্দিনের মৃত্যুর পর যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতির পদ এখন শুধু যুক্তরাজ্যের সিনিয়র নেতাদেরই টার্গেট নয়, দলের বাইরের অনেক প্রভাবশালীর টার্গেটেও পরিণত হয়েছে। চলছে তারেক রহমানের আর্শিবাদ পাওয়ার প্রতিযোগিতা। কিন্তু তারেক কাউকেই কোনো কথা দিচ্ছেন না। সবাইকে তিনি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

কমর উদ্দিনের মৃত্যুর পর যুক্তরাজ্য বিএনপির দু’এক জন সিনিয়র নেতা ছাড়া কেউই তারেকের পাশে ভিড়তে না পারলেও, বিভিন্ন মাধ্যমে তারা তারেকের নজরে আসার প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

নেতা-কর্মীদের অস্থিরতা
সভাপতি পদ ছাড়াও বর্তমান কমিটির অন্যান্য পদে অধিষ্ঠিতদের মধ্যে পদ রক্ষা নিয়ে চলছে চরম অস্থিরতা। কারণ এই কমিটির অনেকেই অযোগ্য এবং মরহুম কমর উদ্দিনের আশির্বাদপুষ্ট বলে অভিযোগ রয়েছে। যোগ্যতার ভিত্তিতে যদি কমিটি পুনর্গঠনের প্রশ্ন ওঠে, তাহলে বাদ পড়তে পারেন অনেকেই।

দলীয় চেয়ারপারসনের এ সফরে কমিটি পুনর্গঠন বা সভাপতির শূন্য পদ পূরণের কোনো কর্মসূচি না থাকলেও সবারই ধারণা, তারেকের পরামর্শে খালেদা এই সফরেই সভাপতি ঠিক করে দিয়ে যাবেন।

জামায়াত সমর্থক ব্রিটেনের একটি প্রভাবশালী বিতর্কিত সংগঠন ও স্থানীয় লেবার পার্টি থেকে বহিষ্কৃত বিদ্রোহী গ্রুপ বিএনপি রাজনীতিতে একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীকে নিয়ে আসতে চাইছে বলে জানা গেছে।

বিএনপি সভাপতি পদ লাভে আগ্রহীদের মধ্যে ব্রিটেনের সুপরিচিত একজন ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগের একজন এমপির ভাইয়ের নামও শোনা যাচ্ছে। এজন্য তিনি সমর্থকদের মাঠে নামিয়েছেন বলেও জানা গেছে।

সাবেক সভাপতি মহিদুর রহমান ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিয়া মনিরুল আলমের নাম যুক্তরাজ্য বিএনপির পরবর্তী সভাপতি হিসেবে কমিউনিটিতে ব্যাপক আলোচিত হলেও জামায়াত সমর্থক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এবং আওয়ামী লীগের এমপির ভাইয়ের তৎপরতা নিয়েও বিএনপির সাধারণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে চলছে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা।

ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিয়া মনিরুল আলম একজন সজ্জন ও সহজ সরল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। কমিউনিটির সবার সঙ্গে তার সুসম্পর্ক। পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মহিদুর রহমানও একজন ভদ্রলোক রাজনীতিক। দলমত নির্বিশেষে সব মহলেই রয়েছে তার আলাদা ইমেজ। তবে কোনোদিক দিয়েই তারা কমর উদ্দিনের সমান নন বলে দলের নেতা-কর্মীদের ধারণা।

তবে এই দুই নেতা সম্পর্কে দলীয় নেতা-কর্মীর মূল্যায়ন যাই থাকুক, কমর উদ্দিনের শূন্য পদে দলীয় কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় কারোর ব্যাপারে, অন্য দল বা গ্রুপের আশির্বাদপুষ্ট কোনো প্রভাবশালী ব্যবসায়ী বা প্রতিদ্বন্দ্বী দলের কোনো এমপির ভাইয়ের ব্যাপারে ব্যাপক আপত্তি রয়েছে নেতা-কর্মীদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন কর্মী এই প্রতিবেদককে বলেন, সুসময় ও দুঃসময়ে যিনি দলের কাজে সক্রিয় থেকেছেন তাকেই সভাপতি করা উচিত। তাছাড়া যুদ্ধাপরাধ ইস্যু নিয়ে বিএনপি এমনিই বেকায়দায়, তার ওপর জামায়াত সমর্থিত কাউকে এই মূহুর্তে দলীয় সভাপতি পদে আনলে যুক্তরাজ্যে দলটি ভাবমূর্তি সংঙ্কটে পড়বে। আর আওয়ামী এমপির ভাই কেন এখন বিএনপি সভাপতি হতে চান এটিও একটি রহস্যের বিষয়।’

কোন্দল নিয়েছে নতুন মোড়
সভাপতি পদ ঘিরে যুক্তরাজ্য বিএনপির দীর্ঘদিনের কোন্দলও আবার নতুন মোড় নিয়েছে। সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমএ মালেকের বিদ্রোহী গ্রুপ আবার নড়ে চড়ে বসছে। পুরনো অনুসারীরা আবারও তার গ্রুপে ফিরছেন। নেতা-কর্মীদের ধারণা, এই মূহুর্তে তাদের আশ্রয় (শেল্টার) দেওয়ার মতো কোনো দক্ষ নেতা বর্তমান কমিটিতে নেই। এক্ষেত্রে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মালেকই হতে পারেন তাদের অভিবাবক।

সফরের সমন্বয় নেই
আসন্ন ব্রিটেন সফরে দলীয় চেয়ারপারসনকে যেখানে বিপুল সংবর্ধনা দেওয়ার কথা ছিল, কমর উদ্দিনের মৃত্যুর পর ঘটা করে সংবর্ধনার এখন আর কোনো খবর নেই। নেতা-কর্মীদের একটি কর্মীসভার মধ্যেই খালেদা জিয়ার দলীয় কর্মসূচি সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। এমনকি দলের নেত্রীর সফরসূচি সম্পর্কেই বর্তমান কমিটির নেতারা সাংবাদিকদের বিস্তারিত কিছু বলতে পারেননি। অনেকে মনে করছেন এটা বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আস্থাহীনতার প্রমাণ। চেয়ারপার্সনের সফরকে কেন্দ্র করে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে ব্রিটেনে অবস্থানরত দলের দুই উপদেষ্টা সাবেক হাইকমিশনার সাবিহ উদ্দিন আহমেদ ও সাংবাদিক শফিক রেহমানকেও তারা উপস্থিত করাতে পারেননি।

কমর উদ্দিনের অভাব
খালেদা জিয়ার সফর নিয়ে কমিউনিটিতে যে সাজ সাজ রব ওঠার কথা ছিল, তার কিছুই নজরে না আসায় হতাশ দলীয় নেতা-কর্মীরা। তাদের ধারণা কমর উদ্দিন না থাকার কারণেই এমনটি হচ্ছে। তাছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের সফরের বিরোধিতা করে আওয়ামী লীগের প্রচারণারও সঠিক জবাব দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বর্তমান কমিটি।

বিএনপির বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। তারা প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তাদের এসব কর্মসূচি রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায়ও বর্তমান নেতৃত্বের কোনো কর্মসূচি নেই, এমনই অভিযোগ দলের অনেক নেতা-কর্মীর।

মায়ের অপেক্ষায় তারেক
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর মায়ের সঙ্গে মিলিত হওয়ার আশায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ১/১১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জেল থেকে বের হয়ে কমর উদ্দিনের আশ্রয়ে লন্ডনে আসার পর এই প্রথম মায়ের সঙ্গে দেখা হচ্ছে তার ।

মা-ছেলের মিলন হতে পারে রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট
মা-ছেলের এই মিলন শুধুই কি পারিবারিক মিলন না অন্য কিছু? এমন অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কমিউনিটিতে। ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এই মিলন বাংলাদেশের রাজনীতির টার্নিং পয়েন্টও হতে পারে।

দেশের রাজনীতির বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে মা-ছেলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।

খালেদার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সমান মর্যাদা চায় বিএনপি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডন সফরে ব্রিটেনের কাছ থেকে যে মর্যাদা পেয়েছিলেন, খালেদা জিয়াও যাতে তা পান, বিএনপি সে চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে একটি সূত্র থেকে জানা গেছে। আর তাই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ লাভের আশায় এখন চলছে লবিস্টদের সর্বশেষ দৌড়ঝাঁপ। এই দৌড়ঝাঁপে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের দুই উপদেষ্টা সাংবাদিক শফিক রেহমান ও ব্রিটেনে বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার সাবিহ উদ্দিন আহমেদ।

এছাড়া ব্রিটেনের বিরোধী দলীয় নেতা অ্যাড মিলিব্যান্ডসহ ব্রিটেনের সরকার ও বিরোধী দলীয় সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেও খালেদা জিয়ার বৈঠক কর্মসূচির চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময় : ১২৪০ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১১
Link to Article

0 comments:

Post a Comment

Popular Posts