বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
লন্ডন সময় মধ্যরাত সাড়ে বারোটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। স্থানীয় সময় রাত ৮ টা ৪৫ মিনিটে দলীয় চেয়ারপার্সনের হিথরোতে অবতরণের অনেক আগ থেকেই বিএনপি নেতা-কর্মীরা বিমানবন্দরের ওয়েটিং এলাকায় এসে অবস্থান নেন।
সভাপতি সুলতান শরীফ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফারুক ও সহ-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ৫০/৬০ জন কর্মীর একটি গ্রুপও খালেদা জিয়ার সফরের প্রতিবাদ জানাতে উপস্থিত ছিলেন একই সময় ওয়েটিং এলাকার অন্যপার্শ্বে। তাদের হাতে কালো পতাকা ও বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ছিল।
খালেদা জিয়া বিমান থেকে বের হওয়ার আগমুহূর্তে কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এনামুল হক লিটনের নেতৃত্বে যুবদলের একটি গ্রুপ আওয়ামী লীগের অবস্থান নেওয়া ওয়েটিং এলাকায় গিয়ে বসার চেষ্টা করলে দু’দলের কর্মীদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।
এ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পুলিশ এসে হস্তক্ষেপ করে এবং যুবদলের কর্মীদের ওই স্থান থেকে বের করে নিয়ে যায়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই খালেদা জিয়া ভিআইপি লাউঞ্জের গেইট দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলে আবারও দু’ গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
বিএনপি কর্মীরা এ সময় দলীয় নেত্রীকে স্বাগত জানিয়ে স্লোগান শুরু করলে আওয়ামী লীগ কর্মীরাও বিরোধী দলীয় নেত্রীর সফরের প্রতিবাদে পাল্টা স্লোগান দেয় ও কালো পতাকা প্রদর্শন করে।
ফলে দু’দলের মধ্যে শুরু হয় বাদানুবাদ। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় ডগ স্কোয়াড নিয়ে দ্রুত পুলিশ এসে দু’দলের মাঝখানে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।
কিন্তু পুলিশি বেষ্টনীর মধ্যেই হঠাৎ করে বিএনপির ২/৩ জন কর্মী আওয়ামী লীগ কর্মীদের দিকে তেড়ে যান।
এ সময় তারা কিল ঘুষি মারার চেষ্টা করলে যুবলীগের ফখরুল ইসলাম মধু, সেলিম খান ও জামাল খানসহ অন্যান্য কর্মীরাও পাল্টা জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেন। শুরু হয় হৈ হুল্লোড়, চিৎকার চেঁচামেচি।
এ পর্যায়ে পুলিশ বিএনপি কর্মী মুজিবুর রহমান ও যুবদলের মাহবুবুল আলম লাহিনকে মাটিতে ফেলে চেপে ধরে গ্রেপ্তার করে।
এদের গ্রেপ্তারে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে দু’দলের কর্মীরা শেষ পর্যন্ত বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। দু‘ গ্রুপের কর্মীদের স্লোগান পাল্টা স্লোগানের মধ্যেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে দ্রুত তাঁর গাড়িতে ওঠে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।
এর আগে স্থানীয় সময় রাত ৮ টা ৪৫ মিনিটে আমিরাত এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে করে লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেন খালেদা জিয়া।
এ সময় বিমানের সিঁড়িতে বিরোধী দলীয় নেত্রীকে স্বাগত জানান বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার রাশেদ চৌধুরী ও খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী দলের অগ্রবর্তী সদস্য বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমদ।
বিমান থেকে নেমে বিরোধী দলীয় নেত্রী ভিআইপি লাউঞ্জে এসে পৌঁছলে এখানে তাকে স্বাগত জানান বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রোটকল অফিসার মনসুর উল্লাহ খান, যুক্তরাজ্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিয়া মনিরুল আলম ও সাবেক কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মহিদুর রহমান।
ভিআইপি লাউঞ্জে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে খালেদা জিয়া তাঁর হোটেলের দিকে রওয়ানা হন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন সফরসঙ্গি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক, রিয়াজ রহমান, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার নুরুদ্দিন আহমেদ ও একজন গৃহ পরিচারিকা।
বিমানবন্দরে দু‘দলের উত্তেজনার খবরে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিয়া মনিরুল আলমের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ম্যাডামের সঙ্গে ভিআইপি লাউঞ্জে ছিলাম। কোনও উত্তেজনা কিংবা অন্য কোনও দলের বিক্ষোভ আমার চোখে পড়েনি, আমি জানিও না। সুতরাং আমার কোনও প্রতিক্রিয়া নেই।’
বিদেশের মাটিতে বিক্ষোভের নামে উত্তেজনা সৃষ্টির মতো কাজ দেশের ভাবমূর্তির জন্য সঠিক কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফ বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিদেশে অপপ্রচার করে দেশের ভাবর্মূর্তি যাতে ক্ষুণœ না করেন সেদিকে বিরোধী দলীয় নেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই আমরা পুলিশের অনুমতি নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে কালো পতাকা দেখাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বিএনপি কর্মীরা আমাদের উপর সন্ত্রাসী আক্রমণ করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে উত্তেজনায় নিয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় তাদেরই দু’জন কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। সুতরাং বিদেশে কারা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে তা পুলিশের গ্রেপ্তারকৃত দু’ কর্মীর দিকে লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়।
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করে দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশিলতা সৃষ্টির যে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন সেই ষড়যন্ত্র আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও বিস্তৃত করতেই খালেদা জিয়া লন্ডন এসেছেন। তার শাসনামলের হত্যা, খুন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সেই বিভীষিকা এখনও বাংলাদেশের মানুষকে দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করে।’
সুলতান শরীফ বলেন, ‘আমরা এর আর পুনরাবৃত্তি চাই না। যুদ্ধাপরাধী সাম্প্রদায়িক শক্তির লন্ডনভিত্তিক ষড়যন্ত্রের পালে হাওয়া দিতে আসা খালেদা জিয়ার এই সফরের প্রতিবাদে আমাদের বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে।’
বাংলাদেশ সময়: ০৭১৫ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১১
Link to Article
0 comments:
Post a Comment