Syed Anas Pasha

Syed Anas Pasha

Banglanews24.com:::::: ব্রিটেনে বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে সমর্থন

লন্ডন: ওসামা বিন লাদেন, লিবীয় নেতা গাদ্দাফিপুত্র বা ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের হত্যাকাণ্ড কোন্‌ ফেয়ার ট্রায়ালে হয়েছে তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জানতে চেয়েছেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশের সাবেক সেনা প্রধান লে. জেনারেল হারুন অর রশীদ।
সোমবার বাংলাদেশ সময় মধ্যরাত ১২টায় বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আয়োজিত এক সেমিনারে ’৭১ এর মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের ফেয়ার ট্রায়াল নিশ্চিত করার পরামর্শের জবাবে জেনারেল হারুন বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন।
সেমিনারে অংশ  নেন ব্রিটিশ এমপি, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক ও ব্রিটেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বাংলাদেশি কমিউনিটির শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা।
এতে  কোনও কোনও বক্তা অভিযুক্তদের ফেয়ার ট্রায়ালের নিশ্চয়তার পরামর্শ দেন। তরব তারা সবাই  ‘৭১ এর মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানান।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ‘লিবারেশন’ এর উদ্যোগে ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ব্রিটেনের প্রবীণ রাজনীতিক লেবার দলীয় এমপি জেরিমি করভিন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন ব্রিটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ড. সাইদুর রহমান খান। সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সেক্রেটারি লে. জেনারেল (অব.) হারুন ছিলেন সেমিনারের মূল বক্তা।



অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টে কনজারভেটিভ পার্টির ফরেন অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক মুখপাত্র ড. চার্লস টেনক, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ব্রাড অ্যাডামস, চ্যানেল ফোর-এর  খ্যাতিমান সাংবাদিক ও ’৭১ এর যুদ্ধাপরাধ নিয়ে নির্মিত ডকুমেন্টারি ‘ওয়ার ক্রাইমস ফাইল’ প্রযোজক গীতা সায়গল, ডারহাম ইউনিভার্সিটির লেকচারার ড. নয়নিকা মুখার্জি,  খ্যাতিমান ব্রিটিশ কলামিস্ট ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন, বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার নোরা শরীফ, বাংলাদেশের সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও প্রচ্ছায়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) শহিদ উদ্দিন খান এবং ব্রিটেনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান শরীফ প্রমুখ।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যুক্তরাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদকের একটি লিখিত বক্তব্য অনুষ্ঠানের শুরুতে উপস্থিত বক্তাদের মধ্যে বিলি করা হয়।

সেমিনারের মূল বক্তা লে. জেনারেল হারন অর রশীদ ’৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বর্তমান উদ্যোগের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন কামনা করে বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে ব্রিটেনসহ বিশ্বের প্রতিটি দেশই সোচ্চার হবে এটিই আমরা আশা করি।’
যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের স্বচ্ছ ট্রায়াল, আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন ’৭৩ ও বাংলাদেশে র‌্যাবের কর্মকাণ্ড নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে সোচ্চার হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ব্রাড অ্যাডামসের বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে জেনারেল হারুন বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষেত্রে ফেয়ার ট্রায়ালের কথা বলা হয়। কিন্তু ফেয়ার ট্রায়াল কি? উসামা বিন লাদেনকে যেভাবে হত্যা করা হলো এটি কি ফেয়ার ট্রায়াল? লিবীয় নেতা গাদ্দাফির  পুত্রকে যেভাবে হত্যা করা হলো সেটি কি ফেয়ার ট্রায়াল? ইরাকী নেতা সাদ্দাম হোসেনের বিচার কার্যক্রম কি ফেয়ার ট্রায়াল? এসব বিষয় নিয়ে তো কেউ প্রশ্ন তোলে না।’
বিশ্ব সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিক মানের অবশ্যই হবে, এটি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে ’৭১ এর ভিকটিমদের অপমান করা কারো উচিত নয়।’
এর আগে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ব্রাড অ্যাডামস ওয়ারক্রাইমস ট্রাইব্যুনালের স্বচ্ছতার দিকে সেমিনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের বিচারের লক্ষে বাংলাদেশের উদ্যোগ বর্তমান বিশ্বে অবশ্যই একটি ব্যতিক্রমী শুভ উদ্যোগ। তবে এই উদ্যোগ যাতে বিতর্কিত না হয়, তার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ’৭৩ সালের ওয়ারক্রাইম অ্যাক্ট নিয়ে কোনও কোনও  বিশ্বসংস্থা বিভিন্ন সুপারিশ করেছে। বাংলাদেশ যদি এসব সুপারিশ আমলে নেয়, তাহলে যুদ্ধাপরাধ বিচারটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য হবে।’
হিউম্যান রাইট ওয়াচের কর্মকর্তা ব্রাড অ্যাডামস তার বক্তৃতায় বাংলাদেশে র‌্যাব-এর বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‌বাংলাদেশ সরকার যদিও বলছে এধরনের ঘটনা এখন ঘটছে না, কিন্তু বাস্তবতা হলো এখনও এগুলো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।`
ব্রাড অ্যাডামসের এই অভিযোগের জবাবে বাংলাদেশের সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও প্রচ্ছায়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কর্নেল (অব:) শহীদ উদ্দিন খান বলেন, ‌আইন শৃংখলা রক্ষায় র‌্যাব জনগণের বন্ধু হিসেবে এরইমধ্যে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।`

‌`২/১ টি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে পুঁজি করে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে সফল এই এলিট ফোর্সের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামাত ও তাদের সহযোগীরা সরকারের সবচেয়ে শক্তিশালী ও সফল এই বাহিনীকে বিতর্কিত করতে বিপুল অংকের অর্থ নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে,` এমন অভিযোগ করে কর্নেল শহীদ বলেন, ‌যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে দেশে অস্থিতিশিলতা সৃষ্টির চেষ্টার বিরুদ্ধে র‌্যাব সবচেয়ে বড় বাধা, যুদ্ধাপরাধীরা এটি বুঝতে পেরেই এই বাহিনীকে বিতর্কিত করতে বিশাল ফান্ড নিয়ে মাঠে নেমেছে।`
কর্ণেল শহীদ বলেন, ‌নিকট অতীতে বাংলাদেশ মৌলবাদী জঙ্গিদের যে অভয়ারণ্য ছিল বর্তমান সরকারের আমলে তা আজ আর নেই। এটি র‌্যাবের সাফল্য।` তিনি র‌্যাব সম্পর্কে বিভ্রান্তি না ছড়াতে হিউম্যান রাইটস সংগঠনসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানান।
চ্যানেল ফোর-এর সাংবাদিক গীতা সায়গল তার বক্তৃতায় ব্রিটেনে বসবাসরত ’৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ ব্রিটেনে নেওয়া যায় কি না, এ বিষয়ে চিন্তা করার জন্য সেমিনারের সভাপতি জেরিমি করভিন এমপির প্রতি আহবান জানান।
ডারহাম ইউনিভার্সিটির লেকচারার ড. নয়নিকা মুখার্জি ’৭১ এ পাক হানাদার ও তাদের দোসরদের কাছে ধর্ষিতাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারের প্রতি সেমিনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বিশিষ্ট কলামিস্ট ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনে বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেন, ‘৭১ এর ভিকটিমদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নির্ভর করছে ট্রাইব্যুনালের দক্ষতার উপর।’
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে কনজারভেটিভ পার্টির ফরেন অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক মূখপাত্র ড. চার্লস টেনক যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে জামায়াত সমর্থকদের লবিং এর কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ব্রিটেন ডেথ পেনাল্টির বিরুদ্ধে। এ বিষয়টি সামনে নিয়েই ওরা লবিং করছে।’
ব্যারিস্টার নোরা শরিফ চার্লস টেনকের ডেথ পেনাল্টির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের আরও বিভিন্ন দেশে ডেথ পেনাল্টি চালু আছে। অন্যদের ক্ষেত্রে ডেথ পেনাল্টি থাকবে, আর যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষেত্রে এটি থাকবে না তা হয় না।’
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে হাই কমিশনার ড. সাইদুর রহমান খান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষে গঠিত নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালেও  অভিযুক্তদের আপিলের সুযোগ ছিলো না; সেখানে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে সে সুযোগ রাখা হয়েছে। অভিযুক্তদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা এর চেয়ে আর বেশি কি হতে পারে?’
ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সুলতান শরীফ বলেন, ‘মানবতাবিরোধী যেকোন অপরাধের বিচারই বিশ্ব সভ্যতার জন্য অপরিহার্য।’
সেমিনারের সভাপতি জেরিমি করভিন এমপি বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সফলতা কামনা করে বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কেবল ’৭১ এর ভিকটিমদের পরিবারকেই সান্ত্বনা দেবে না, বিশ্ব সভ্যতার জন্যেও এটি আরেকটি উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
অল পার্টি পার্লামেন্টারি হিউম্যান রাইটস গ্রুপের ভাইস চেয়ার লর্ড অ্যাভিবুরি অন্য একটি প্রোগ্রামে ব্যস্ত থাকায় সেমিনারে উপস্থিত থাকতে পারেননি। লর্ড অ্যাভিবুরির সহকারী সুজিত সেন বাংলানিউজকে জানান, লর্ড সেমিনারের সাফল্য কামনা করে বলেছেন একটি নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ ট্রায়ালের মাধ্যমে ৭১ এর ভিকটিমরা ন্যায়বিচার পাবেন এটিই তিনি আশা করছেন।
সেমিনারে উপস্থিত হতে না পেরে ই-মেইল বার্তায় সাফল্য কামনা করেছেন লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস এর ডিপার্টমেন্ট অব সোসাল পলিসি`র শিক্ষক অধ্যাপক ডেভিড লুইস। ই-মেইলবার্তায় তিনি `৭১ এর ভিকটিমদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালকে সহযোগিতা করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানান।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫১ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১১
Link to Article

0 comments:

Post a Comment

Popular Posts