Syed Anas Pasha

Syed Anas Pasha

Banglanews24.com:::::::লন্ডন ছাড়লেন খালেদা : তারেককে দেখে রাখতে বলে গেলেন বিদ্রোহী নেতাকে

কেন্দ্রীয় লন্ডনের হোটেল ত্যাগ করছেন খালেদা জিয়া
ছবি-আশরাফ আলী খান, বাংলানিউজ২৪.কম
লন্ডন : লন্ডন ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের পথে রওয়ানা হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া। শনিবার বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৩টায় ভার্জিন এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর ছেড়ে যান বাংলাদেশের  সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

বিমানবন্দরে খালেদাকে বিদায় জানান বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রটোকল কর্মকর্তা মনসুর উল্লা খান, বিএনপি’র সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মহিদুর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিয়া মনিরুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম প্রমুখ। বিরোধী দলীয় নেত্রীর সাথে ছিলেন তাঁর দুই সফরসঙ্গী সাবিহ উদ্দিন আহমদ ও ডঃ ওসমান ফারুক।

‘মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি আজ সার্বজনীন দাবি’

হিথরো ত্যাগের আগে উপস্থিত সাংবাদিকদের এক সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় খালেদা জিয়া তাঁর লন্ডন সফর সফল  হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি’র মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি আজ সার্বজনীন দাবিতে পরিণত হয়েছে। সরকার মধ্যবর্তী নির্বাচন দিয়ে নিজেদের জনপ্রিয়তাটি যাচাই করতে পারে।‘

সরকার মধ্যবর্তী নির্বাচন না দিলে জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে তা আদায় করা হবে বলে তিনি জানান সাংবাদিকদের। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্রিটেন বাংলাদেশের অন্যতম বড় উন্নয়ন সহযোগী।’ বাংলাদেশকে দেয়া ব্রিটেনের উন্নয়ন সহযোগিতার পরিমাণ আরও বাড়িয়ে তা অব্যাহত রাখতে তিনি ব্রিটিশ সরকারের নীতি নির্ধারকদের অনুরোধ জানিয়েছেন বলেও সাংবাদিকদের জানান।

ব্রিটিশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সাথে তাঁর সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করে বিরোধী দলীয় নেত্রী বলেন, ‘ব্রিটেন গণতান্ত্রিক রাজনীতির একটি প্রতীক। বাংলাদেশও যাতে তাদের এই সাফল্যটি অনুসরণ করে তার জন্যে বাংলাদেশ সরকারের উপর প্রভাব রাখতে অনুরোধ জানিয়েছি ব্রিটিশ নেতৃবৃন্দকে।‘

দীর্ঘদিন পর ব্রিটেন সফও এলেন বলে উল্লেখ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও দীর্ঘদিনের দাবি ছিল আমি যাতে ব্রিটেনে আসি। আমার অসুস্থ ছেলে তারেক রহমানকেও তাঁর বাংলাদেশ ত্যাগের পর আর দেখতে আসতে পারিনি। সুতরাং সবকিছু মিলিয়েই আমার এবারের এই ব্রিটেন সফর।’

তারেক রহমানের শারিরিক অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাঁকে এখনও ফিজিও থেরাপি দেওয়া হচ্ছে। আগের চেয়ে যদিও এখন সে অনেক ভালো, তবুও পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও অনেক সময় লাগবে বলে তারেকের ডাক্তাররা জানিয়েছেন।’
 তিনি নিজেও ডাক্তার দেখিয়েছেন বলে জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘কিছুটা শারিরীক অসুস্থতার জন্য ডাক্তার দেখানোর সুযোগটি নিয়ে নিলাম।’ অনেক দিন পর অসুস্থ ছেলেকে দেখতে পেরে তিনি আনন্দিত একথা জানিয়ে খালেদা আরও বলেন, ‘ছেলেবউ ও নাতনীকে কাছে পেয়ে দারুন ভালো লেগেছে।’ তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে তাঁর ছেলেদের জন্যে সবার দোয়া কামনা করেন ।

ছেলেকে দেখে রাখতে বললেন যুক্তরাজ্য কমিটির বিদ্রোহী নেতাকে
এর আগে কেন্দ্রীয় লন্ডনের হোটেল ত্যাগ করার আগে গাড়িতে ওঠার সময় সেখানে উপস্থিত যুক্তরাজ্য বিএনপি’র বিদ্রেুাহী নেতা হিসেবে পরিচিত সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ মালেককে উদ্দেশ্যে করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘কমর উদ্দিন তো এখন নেই। তারেক কে আপনি দেখে রাখবেন। ব্রিটেনে দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখে মধ্যবর্তী নির্বাচন আদায়ের চলমান আন্দেলনকে প্রবাসেও বেগবান রাখার নির্দেশ দিয়ে যান তিনি যুক্তরাজ্যের বর্তমান কমিটির এই বিদ্রোহী নেতাকে।

 হোটেল লবি ত্যাগের সময় ছেলে তারেক রহমান সেখানে ছিলেন না। তার পিঠের ব্যথা বেড়ে যাওয়া ও  মিডিয়ার সামনে আবেগ প্রকাশ হওয়ার ভয়ে তিনি তখন উপরের কক্ষেই অবস্থান করছিলেন। তবে তারেকের স্ত্রী ডাঃ জোবাইদা ও নাতনী জাইমা গাড়ির দরজা পর্যন্ত  এসে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।

লন্ডনের বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকদের ক্ষোভ
এদিকে, যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতারা বার বার সাংবাদিকদের তালিকা নেয়ার পরও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাংবাদিকদের আলাদা কোন বৈঠকের ব্যবস্থা না করায় বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকরা ক্ষুব্ধ। বিরোধী দলীয় নেত্রীর সফরের শেষদিন শুক্রবার পর্যন্ত সাংবাদিকরা অপেক্ষা করেছেন আমন্ত্রণের। যুক্তরাজ্য বিএনপি’র নেতারাও চেষ্টা হচ্ছে বলে বারবার আশ্বাস দিয়েছেন সাংবাদিকদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৈঠক না হওয়ার কোন ব্যাখ্যা না দিয়েই সাবেক প্রধানমন্ত্রী লন্ডন ত্যাগ করেন।

এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত যুক্তরাজ্য বিএনপিও এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কোন ব্যাখ্যা দেননি।

এ বিষয়ে বাংলানিউজের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাপ্তাহিক ‘সুরমা’র প্রধান সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল আহমেদ বলেন, ‘আসলে আমার ধারণা বিরোধী দলীয় নেত্রী ব্রিটেনের বাংলা মিডিয়ার বর্তমান উজ্জ্বল অবস্থান অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছেন অথবা এখানকার বাংলা মিডিয়াকে অবজ্ঞা করছেন।’

প্রেসক্লাব সভাপতি বলেন, ‘স্থানীয় বিএনপি’র তো বাংলা মিডিয়ার অবস্থান না জানার কথা নয়? তারাও নিশ্চয়ই বিষয়টি নিয়ে নেত্রীর কাছাকাছি যেতে ব্যর্থ হয়েছেন।’

বেলাল বলেন, ‘আমরা সংবাদকর্মীরা নিরপেক্ষভাবে সব সংবাদই পাঠকের হাতে পৌঁছাতে চাই। আর এজন্যেই খবরের খোঁজে, রাজনীতিকদের সাথে আমাদের এমন সাক্ষাতের  চেষ্টা। কিন্তু রাজনীতিকদের কথা যদি তারা মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণের কাছে পৌছাতে না চান তাহলে আমাদের আর করার কিইবা থাকে!’

এ প্রসঙ্গে প্রেসক্লাব সভাপতি নিকট অতীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লন্ডন সফরের সময়েও সাংবাদিকদের সাক্ষাৎ না দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন।

ব্রিটেনের প্রাচীনতম বাংলা সাপ্তাহিক ‘জনমত’ এর সম্পাদক নবাব উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আসলে বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ব্রিটেন শাখার নেতারা কতটুকু নিজেদের নেতানেত্রীর কাছে ভিড়তে পারেন বিরোধী দলীয় নেত্রীর সাথে সাংবাদিকদের সাক্ষাৎ আদায়ে ব্যর্থতার বিষয়টি তাই আমাদের চোখে আঙল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে, বিভিন্ন সময় সামরিক শাসন বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সব খবরা খবর ব্রিটেনের বাংলা মিডিয়াই মূলত বিশ্বব্যাপী প্রচার করতে মূল ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু আমাদের রাজনীতিকরা বিশেষ করে বড় দুই দলের শীর্ষ নেতারা ব্রিটেনে এসে বারবারই বাংলামিডিয়াকে করেছেন উপেক্ষা। নেতা নেত্রীদের অনেক দুর্বল কর্মকান্ড প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয়েই হয়তো তারা সাংবাদিকদের সাথে মিলিত হতে চান না।

উল্লেখ্য, গত জানুয়ারী মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লন্ডন সফরের সময়ও স্থানীয় বাংলা মিডিয়ার সাথে বৈঠক নিয়ে শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছিল। ঐ সময় দুই দুই বার সাক্ষাতের অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েও শেষ পর্যন্ত তা হয়ে ওঠেনি। তৃতীয়বার সাক্ষাৎ সময়সূচি দিলেও সাংবাদিকরা শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে উপস্থিত হতে অপারগতা প্রকাশ করেন। অবশ্য পরে ব্যাখ্যা দেওয়া হয় যে, আসলে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাংবাদিকদের সাক্ষাতের বিষয়টি তিনি নিজে জানতেন না।

অনেকেই মনে করেন এ কারণেই প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন চিফ প্রটোকল অফিসারকে দেশে যাওয়ার পর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রীর সাথে লন্ডনের সাংবাদিকদের সিডিউল বিপর্যয়ের জন্যে চীফ প্রটোকল অফিসার যদি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পান, তাহলে বিরোধী দলীয় নেত্রীর সাথে সাক্ষাতের শিডিউল বিপর্যয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কি সিদ্ধান্ত নেন এটিই এখন দেখতে চান লন্ডনের সাংবাদিকরা।

বাংলাদেশ সময়: ২২১৩ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১১
Link to Article

0 comments:

Post a Comment

Popular Posts