Syed Anas Pasha

Syed Anas Pasha

Banglanews24.com:::::: লন্ডনে অ্যাভিবুরিকে ড. মিজান : বাংলাদেশের মানবাধিকার কমিশন স্বাধীন

লন্ডন: জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে ও সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ডঃ মিজানুর রহমান।

মঙ্গলবার লন্ডনে ব্রিটেনের অল পার্টি পার্লামেন্টারি হিউম্যান রাইটস গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান লর্ড অ্যাভিবুরির সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন।

লন্ডন সময় বেলা ১টায় হাউস অব লর্ডসে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে ডঃ মিজানুর রহমানের সঙ্গে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হিউম্যান রাইটস কমিশনের স্থায়ী সদস্য কাজী রিয়াজুল হক ও সদস্য অধ্যাপক নিরু কুমার চাকমা।

প্রায় ১ ঘণ্টার এই বৈঠকে বাংলাদেশের হিউম্যান রাইটস কমিশনের বিভিন্ন দিক ও কর্মকা- নিয়ে মিজান-অ্যাভিবুরি আলোচনা হয়। লর্ড অ্যাভিবুরি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও তা মোকাবেলায় কমিশনের ভূমিকা সম্পর্কে ডঃ মিজানের কাছে জানতে চান।

অ্যাভিবুরির সহকারী সুজিত সেন বাংলানিউজকে জানান, মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিদল তাদের প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান কাঠামো, জনবল ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে অবহিত করেছেন।

মিজানুর রহমান লর্ড অ্যাভিবুরিকে জানান, বর্তমানে ২৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে কমিশন বাংলাদেশে কাজ করছে। এই সংখ্যা ৯৩ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা শিগগিরই সরকারের কাছে দাখিল করা হবে।

সুজিত সেন আরও জানান সম্প্রতি র‌্যাবের গুলিতে আহত লিমনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে গিয়ে অ্যাভিবুরি মিজানুর রহমানের কাছে প্রশ্ন রাখেন ‘লিমন কি র‌্যাবের ইচ্ছকৃত ক্রসফায়ারের শিকার, না কি এটি কোনো দুর্ঘটনা।’
এর উত্তরে মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান জানান, কমিশন এ বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারবে না। তবে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত যাই হোক, এই ঘটনার সুষ্টু তদন্ত ও আহত লিমনের ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছে কমিশন।

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের আন্তর্জাতিক মান ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকারকে করা ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশনের সুপারিশ বিষয়ে এইচআরসি চেয়ারম্যানের মন্তব্য জানতে চাইলে ডঃ মিজানুর রহমান বলেন, ৭১ এর যুদ্ধাপরাধীরা মানবতার শত্রু। দীর্ঘ ৪০বছর পর এদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু, মানব সভ্যতাকে কলঙ্কমুক্ত করার একটি মহতি উদ্যোগ বলেই আমরা মনে করি। আর ১৯৭৩ সালের যুদ্ধাপরাধ আইনকে বর্তমান সময়ের সময়োপযোগী করেই সরকার এই ট্রাইবুনাল গঠন করেছে।

অ্যাভিবুরিকে এইচআরসি চেয়ারম্যান জানান, যুদ্ধাপরাধ ট্রায়াল কোন ক্যামেরা ট্রায়াল নয়, এটি একটি পাবলিক ট্রায়াল। এই ট্রায়াল পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ রয়েছে সারাবিশ্বের। সুতরাং এটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য না হওয়ার কোন কারণই নেই।

বৈঠকে ডঃ মিজান বলেন, যুদ্ধাপরাধ আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক দূত রেপ্স ও ইন্টারন্যাশনেল বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রস্তাব থেকে সরকার নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় সুপারিশগুলো গ্রহণ করেছে।

এইচআরসি চেয়ারম্যান তাকে বলেন, ‘৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে, এবং বাংলাদেশ মনে করে আপনিসহ ইন্টারন্যাশনেল কমিউনিটির সবাই তা চায়। এ বিষয়ে আপনার সুনির্দিষ্ট কোন পরামর্শ থাকলে বাংলাদেশ সরকার তা অবশ্যই তা আমলে নেবে।’

সরকারের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে ডঃ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে এইচআরসি বাংলাদেশের জনগনের মানবাধিকার রক্ষায় বলিষ্ট ভূমিকা রাখতে পারবে, বৈঠক শেষে এ মন্তব্য করেছেন লর্ড অ্যাভিবুরি। সুজিত এমনটাই জানিয়েছেন বাংলানিউজকে।

বৈঠকে কি আলোচনা হয়েছে, বাংলানিউজের এমন প্রশ্নের উত্তরে এইচআরসি চেয়ারম্যান ডঃ মিজানুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন একজন মানবাধিকারকর্মী হিসেবে লর্ড অ্যাভিবুরি বাংলাদেশের জনগণের মানবাধিকার বিষয়গুলো নিয়ে জানতে খুবই আগ্রহী। মানবাধিকার ও যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাকে স্বচ্ছ ধারণা দেওয়ার ইচ্ছে নিয়েই আমাদের এই বৈঠক।

বাংলানিউজকে এইচআরসি চেয়ারম্যান বলেন, সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবেই কাজ করছে এইচআরসি। সরকারের কোন মহল থেকেই আমাদের কাজে হস্তক্ষেপ করার কোন চেষ্টা নেই, লর্ড এভিবারীকে আমরা এটি আশ্বস্থ করেছি।
ডঃ মিজান বলেন, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল নিয়েও অনেক কিছু জানতে চেয়েছেন লর্ড অ্যাভিবুরি। আমরা তাকে বলেছি, ৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। এই বিষয়ের সঙ্গে সভ্য দুনিয়ার কেউই দ্বিমত পোষণ করবে বলে আমরা মনে করি না। এক্ষত্রে ব্রিটেনসহ সারা বিশ্বের অভিজ্ঞতাই কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ, এভাবেই তাকে বিষয়টি বুঝিয়েছি আমরা।

মানবাধিকার কমিশনের কাজের বর্ণনা দিতে গিয়ে এইচআরসি চেয়ারম্যান বাংলানিউজকে বলেন, মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশের এমন প্রতিটি ঘটনা আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি, রিপোর্ট দিয়েছি, সরকারের রিপোর্ট সম্পর্কেও জানতে চেয়েছি।
বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কোন কোন কর্মকা-ে এইচআরসি সময় সময় কঠোর সমালোচনাও করেছে জানিয়ে ডঃ মিজান বলেন, কিন্তু আমাদের এই সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রীসহ কোন মন্ত্রীই অসন্তুষ্টি জানিয়ে মন্তব্য করেননি।

উল্লেখ্য, ডেনিস ইনস্টিটিউট অব হিউম্যান রাইটসের আমন্ত্রণে এক কর্মসূচিতে অংশ নিতে ডেনমার্কে আগত বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস কমিশনের ৭ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি গত ২৫ জুন শনিবার লন্ডনে এসে পৌঁছেন। ২৭ জুন লন্ডনে ব্রিটেনের ইকুয়েলিটি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয় ডঃ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বাধীন এইসআরসি’র এ প্রতিনিধিদল।
২৮ জুন, মঙ্গলবার সকালে লন্ডনে কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটের হিউম্যান রাইটস ইউনিটের সঙ্গেও বৈঠক করেন তারা। ডঃ মিজান আগামী কাল বৃহস্পতিবার লন্ডন ত্যাগ করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৪ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১১
Link to Article

0 comments:

Post a Comment

Popular Posts