|
Photo: Naheed Monsur |
লন্ডন: মহাজোটের অন্যতম শরীক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, মহাজোটভুক্ত দলগুলোকে পাশ কাটিয়ে আওয়ামী লীগের একলা চলো নীতির কারণে আজ আমরা উদ্বিগ্ন। সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধীদের সাথে নিয়ে বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রকাশ্য চক্রান্ত আওয়ামী লীগের একলা চলো নীতির কারণে পুরো মহাজোট সরকারকেই হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে।
রোববার পূর্ব লন্ডনের ওয়াটার লিলি ব্যাঙ্কুইটিং হলে যুক্তরাজ্য জাসদের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
হাসানুল হক ইনু বলেন, আওয়ামী লীগের একলা চলো নীতি ও বিরোধী দলীয় নেত্রীর প্রকাশ্য চক্রান্তের কারণে আমি একটি গুরুতর নিম্নচাপ সৃষ্টির আশঙ্কা করছি। দীর্ঘ চল্লিশ বছর পর ৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ঢাকা বিভক্তির মত অযথা নতুন ইস্যু সৃষ্টি করা সরকারের দুরদর্শিতার পরিচয় নয়।
তিনি বলেন, শাসন-প্রশাসনে সরকারকে ব্যর্থ করার জন্যে সরকারের ভেতরেই একটি শক্তি ঘাপটি মেরে বসে আছে। এদের চিহ্নিত করতে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে।
ইনু বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে দলবাজি, ঠেন্ডারবাজি হচ্ছে, অথচ আওয়ামী লীগ বুঝতে চাইছে না যে, দলবাজরা ঠেন্ডার দখল করতে পারে, কিন্তু ক্ষমতা দখল করতে পারে না।
সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় নতুন নিয়োগ ও দপ্তর পুনর্বিন্যাসের কথা উল্লেখ করে ইনু বলেন, মন্ত্রী হিসেবে আবুল-ফারুকের ব্যর্থতা নিয়ে জনগণ ততদিনই সোচ্চার থাকবে, যতদিন এই মন্ত্রণালয়গুলো আবার সঠিক মতো পরিচালিত না হয়। এই সমালোচনা বন্ধ হবে কি না, তা নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছের উপর। কিন্তু সরকারের মন্ত্রীদের এই ব্যর্থতা অব্যাহত থাকলে মহাজোটের যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গিবাদবিরোধী টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন খালেদা জিয়ার চক্রান্তের কাছে হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জাসদ সভাপতি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, আমি ইনু মন্ত্রী হলাম কি-না, সেটি কোনও বিষয় নয়, আগামী নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গিবাদ ও এদের পৃষ্ঠপোষকদের ক্ষমতার বাইরে রাখতে পারবো কি-না, এটিই এখন বিবেচ্য বিষয়।
তিনি বলেন, জাসদ মন্ত্রীত্ব চায়না, যুদ্ধপরাধী জঙ্গিবাদী ও তাদের দোষরদের আগামীতেও ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে চায়, শরীক দলগুলোকে সাথে নিয়ে এমন পরিকল্পনাই করবে আওয়ামী লীগ, আমাদের প্রত্যাশা এটিই।
সম্প্রতি এরশাদের সরকার বিরোধী কিছু বক্তব্য সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ইনু বলেন, সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদকে আমরা মহাজোটে মেনে নিয়েছিলাম গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের স্বার্থে। এই সুবিধাবাদী সাবেক স্বৈরশাসক সুবিধা অনুযায়ী ভোল পাল্টাবেন এটিই স্বাভাবিক। এ বিষয়ে আমরা সচেতনও। আজ তিনি মহাজোট ছাড়ার হুমকি দিচ্ছেন। কিন্তু আমরা মহাজোট ভাঙতে চাই না, মহাজোটের ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করতে চাই, যাতে সাম্প্রদায়িক অপরাজনীতিকে বাংলাদেশ থেকে চিরতরে বিদায় করতে পারি।
যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রকাশ্য অবস্থান নেওয়ার তীব্র সমালোচনা করে হাসানুল হক ইনু বলেন, খালেদা জিয়া ঘোমটা না পড়লেও যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে তিনি তার রাজনৈতিক ঘোমটা এবার খুলে ফেলেছেন। স্বামীর পুনর্বাসিত করা যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করাই তার রাজনীতির মূলনীতি, এটিই এবার তিনি প্রকাশ্যে জানান দিয়েছেন।
হাসিনা-খালেদাকে বাদ দিয়ে তৃতীয় শক্তির সম্ভাবনার কথা যারা বলেন, তাদের তীব্র সমালোচনা করে ইনু বলেন, ১/১১ এর মতো তৃতীয় শক্তির অপেক্ষা যারা করেন, তারা মূলত খালেদা জিয়াকেই সমর্থন দিতে চান।
ড. কামাল হোসেনের নাম উল্লেখ করে ইনু বলেন, তৃতীয় শক্তির জন্যে প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার মতো আত্মঘাতী খেলায় নামবেন না, গণতান্ত্রিক রাজনীতির ভবিষ্যত অন্ধকারাচ্ছন্ন করলে সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদই আবার বাংলাদেশে মাথাচারা দিয়ে উঠবে। ৭১ এর পরাজিত শক্তি যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি থেকে নির্বাসিত করার সুযোগ আবার হাতছাড়া হয়ে যাবে।
টিপাইমুখ ইস্যুতে মন্তব্য করতে গিয়ে ইনু বলেন, যৌথ সমীক্ষা ছাড়া উজানের কোনও নদীতে বাঁধ দেওয়া আন্তর্জাতিক নিয়মের লঙ্ঘন। এ বিষয় নিয়ে ভারত সরকারের সাথে আমাদের সরকারেরে আলোচনা চলছে।
এ ধরনের জাতীয় সমস্যা নিয়ে রাজনীতি না করার আহবান জানিয়ে ইনু বলেন, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জাতির ঐক্যই জরুরি, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা এক্ষেত্রে জাতির সঙ্গে তামাসার সামিল।
যুদ্ধাপরাধ বিচার ইস্যুতে প্রবাসীদের আসস্থ করে ইনু বলেন, অস্থির হলে চলবে না। চল্লিশ বছর অপেক্ষা করেছি। আর কয়টা দিন না হয় অপেক্ষা করলাম। ইনশাল্লাহ ২০১৩ এর মধ্যেই আমরা শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় বাস্তবায়ন দেখতে পারবো বলে আশা করছি।
এই সরকার কোন চমক দেখাতে পারেনি বলে যারা মন্তব্য করেন, তাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করে ইনু প্রশ্ন রাখেন, সাকা চৌধুরীর মত দুধর্র্ষ যুদ্ধাপরাধীকে কারাগারে নেওয়া কি চমক নয়?
সংগঠনের যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি শামসুল আবেদিন নেসাওয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া। আওয়ামী লীগ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও স্থানীয় জাসদ নেতৃবৃন্দ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১১ | |
0 comments:
Post a Comment