‘বঙ্গবন্ধু হত্যার পর অনেকে জয়বাংলা বলা ছেড়ে দিয়েছিলেন’
সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম |
লন্ডন: জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার কর্ণেল (অব.) শওকত আলী বলেছেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর আমাদের অনেক বন্ধুই জয় বাংলা বলা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু জাতির জনকের হতাকাণ্ডের দীর্ঘকাল পরে হলেও বাংলার মাটি আবারও জয়বাংলা শ্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে। ভুলে যাওয়া শ্লোগান এখন আবারও কণ্ঠে তুলে নিয়েছেন আমার ঐসব বন্ধুরা। এটি শুভ লক্ষণ।’
বুধবার বিকেলে পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্টস সেন্টারে প্রজন্ম-৭১ যুক্তরাজ্য শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এক কনভেনশনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সংগঠনের শাখা সভাপতি আহমেদ নুরুল টিপুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এই কনভেনশন উদ্বোধন করেন প্রজন্ম-৭১ এর কেন্দ্রীয় সভাপতি শহীদ সন্তান আজিজুর রহমান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ব্রিটেনের লিবারেল ডেমোক্রেটিক দলের ডেপুটি লিডার সায়মন হিউজ এমপি, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ব্রিটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ডঃ সাইদুর রহমান খান, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির লেকচারার ডঃ নাজনিন আহমেদ, মিসেস শওকত আলী, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ ও উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শামসুদ্দিন খান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উত্থাপন করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও টেলিভিশন উপস্থাপক বুলবুল হাসান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডেপুটি স্পি আরও বলেন, ‘চলার পথে আপনি হোচট খেতে পারেন, এটি বড় কথা নয়, বড় কথা হলো হোচট খেয়েও আবার আপনি উঠে দাড়াতে পারলেন কি না। ৭৫ এ জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি যে হোচট খেয়েছিল, সেটি কাটিয়ে উঠে এখন আবার পথচলা শুরু হয়েছে। জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার বলিষ্ট নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আগ্রহের কেন্দ্র হয়ে উঠছে।’
ডেপুটি স্পীকার বলেন, ‘মোশতাক-জিয়ার মত চরিত্র সমাজ ও রাজনীতিতে বার বারই আসবে। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্রের কাছে সাময়িক হোচট খেলেও পরাজিত হওয়া চলবে না।’
তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে তরুণ প্রজন্মের ঐতিহাসিক রায় প্রমাণ দিয়েছে, আমাদের প্রজন্মের রক্তাক্ত ত্যাগের ফসল বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধরে রাখা তাদের দ্বারা সম্ভব। আর তাইতো মুক্তিযুদ্ধের চল্লিশ বছর পর হলেও ৭১ এর ঘাতকদের বিচার শুরু হয়েছে। এই বিচার সম্পন্নের পেছনে মূল শক্তি তরুণ প্রজন্মসহ দেশের জনগনের সমর্থন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা নিষ্কণ্টক করতে হলে অনিষ্পন্ন কাজ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্নের বিকল্প নেই। মুক্তিযুদ্ধের পর পরই এই বিচার সম্পন্ন করা আমাদের উচিত ছিল। কিন্তু পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও বঙ্গবন্ধুর হতাকাণ্ড এই পবিত্র কাজটি সম্পন্ন করার সুযোগ দেয়নি আমাদের। এবার এই কাজটি সম্পন্ন করতে চায় জাতি।’
তিনি বলেন, ‘শুধু অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধ করা ব্যক্তি বা রাজনৈতিক কর্মী যিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, তাদেরই তালিকা হয়, অথচ ২৫ মার্চের কালো রাতে যে রিকশাওয়ালা পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে জীবন দেয়, বা ক্ষুধার্থ মুক্তিযোদ্ধাকে নিজের ক্ষুধা নিবারণের শেষ খাদ্য চিড়ে মুড়িগলো দিয়ে যে বৃদ্ধা আত্মতৃপ্তি অনুভব করেন, তাদের তালিকা হয় না, এটি দু:খজনক। কারণ, মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান কম নয়।’
মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী বলেন, ‘মুষ্টিমেয় রাজাকার আলবদর ছাড়া সারা জাতিই মুক্তিযুদ্ধ করেছে এই সত্যটুকু স্বীকার করা ও রাষ্ট্রীয় পরযায়ে এই স্বীকৃতি লিপিবদ্ধ করা জাতি হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্রিটেনের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল লিবডেমের ডেপুটি লীডার সায়মন হিউজ এমপি বলেন, ‘চল্লিশ বছর পূর্ণ হলো বাংলাদেশের। এই দীর্ঘ পথ চলায় ব্রিটেনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক বরাবরই ছিল ঘনিষ্ট পরযায়ের, যার ধারাবাহিকতা চলছে আজও।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর পারষ্পরিক আস্থাহীনতা আমাদের হতাশ করে। গণতন্ত্রের পথ চলায় সংঘাত ও সংঘর্ষের রাজনীতি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, এমন পরিবেশে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীসহ অতীতের কোন প্রধানমন্ত্রীই বিতর্কের বাইরে থাকতে পারেননি।’
ব্রিটেনের প্রভাবশালী রাজনীতিক সায়মন হিউজ বলেন, ‘৭১ এর ভিকটিমদের ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। দীর্ঘ চল্লিশ বছর তারা এই অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর মাধ্যমে ৭১ এর ভিকটিমদের ন্যায় বিচার পাওয়ার একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার সম্পন্নের মাধ্যমে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ্ ট্রাইব্যুনাল যেন বিশ্বের একটি মডেল হয়, এটিই আমাদের কামনা।’
যুদ্ধাপরাধ বিচারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সায়মন হিউজ বলেন, ‘বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেসব জায়গায় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠিত হয়েছে সেসব অপরাধের বিচারের পক্ষে আমরা আমাদের দৃঢ় অবস্থানের কথা ঘোষণা করতে চাই প্রজন্ম-৭১ এর আজকের এই কনভেনশনে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র মসৃন পথে চলুক, রাজনৈতিক দলগুলো পারষ্পরিক আস্থার বন্ধনে আবদ্ধু হউক, ব্রিটিশ রাজনীতিকদের পক্ষ থেকে এটিই আমাদের চাওয়া।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১১
বুধবার বিকেলে পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্টস সেন্টারে প্রজন্ম-৭১ যুক্তরাজ্য শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এক কনভেনশনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সংগঠনের শাখা সভাপতি আহমেদ নুরুল টিপুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এই কনভেনশন উদ্বোধন করেন প্রজন্ম-৭১ এর কেন্দ্রীয় সভাপতি শহীদ সন্তান আজিজুর রহমান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ব্রিটেনের লিবারেল ডেমোক্রেটিক দলের ডেপুটি লিডার সায়মন হিউজ এমপি, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ব্রিটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ডঃ সাইদুর রহমান খান, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির লেকচারার ডঃ নাজনিন আহমেদ, মিসেস শওকত আলী, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ ও উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শামসুদ্দিন খান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উত্থাপন করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও টেলিভিশন উপস্থাপক বুলবুল হাসান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডেপুটি স্পি আরও বলেন, ‘চলার পথে আপনি হোচট খেতে পারেন, এটি বড় কথা নয়, বড় কথা হলো হোচট খেয়েও আবার আপনি উঠে দাড়াতে পারলেন কি না। ৭৫ এ জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি যে হোচট খেয়েছিল, সেটি কাটিয়ে উঠে এখন আবার পথচলা শুরু হয়েছে। জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার বলিষ্ট নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আগ্রহের কেন্দ্র হয়ে উঠছে।’
ডেপুটি স্পীকার বলেন, ‘মোশতাক-জিয়ার মত চরিত্র সমাজ ও রাজনীতিতে বার বারই আসবে। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্রের কাছে সাময়িক হোচট খেলেও পরাজিত হওয়া চলবে না।’
তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে তরুণ প্রজন্মের ঐতিহাসিক রায় প্রমাণ দিয়েছে, আমাদের প্রজন্মের রক্তাক্ত ত্যাগের ফসল বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধরে রাখা তাদের দ্বারা সম্ভব। আর তাইতো মুক্তিযুদ্ধের চল্লিশ বছর পর হলেও ৭১ এর ঘাতকদের বিচার শুরু হয়েছে। এই বিচার সম্পন্নের পেছনে মূল শক্তি তরুণ প্রজন্মসহ দেশের জনগনের সমর্থন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা নিষ্কণ্টক করতে হলে অনিষ্পন্ন কাজ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্নের বিকল্প নেই। মুক্তিযুদ্ধের পর পরই এই বিচার সম্পন্ন করা আমাদের উচিত ছিল। কিন্তু পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও বঙ্গবন্ধুর হতাকাণ্ড এই পবিত্র কাজটি সম্পন্ন করার সুযোগ দেয়নি আমাদের। এবার এই কাজটি সম্পন্ন করতে চায় জাতি।’
তিনি বলেন, ‘শুধু অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধ করা ব্যক্তি বা রাজনৈতিক কর্মী যিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, তাদেরই তালিকা হয়, অথচ ২৫ মার্চের কালো রাতে যে রিকশাওয়ালা পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে জীবন দেয়, বা ক্ষুধার্থ মুক্তিযোদ্ধাকে নিজের ক্ষুধা নিবারণের শেষ খাদ্য চিড়ে মুড়িগলো দিয়ে যে বৃদ্ধা আত্মতৃপ্তি অনুভব করেন, তাদের তালিকা হয় না, এটি দু:খজনক। কারণ, মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান কম নয়।’
মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী বলেন, ‘মুষ্টিমেয় রাজাকার আলবদর ছাড়া সারা জাতিই মুক্তিযুদ্ধ করেছে এই সত্যটুকু স্বীকার করা ও রাষ্ট্রীয় পরযায়ে এই স্বীকৃতি লিপিবদ্ধ করা জাতি হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্রিটেনের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল লিবডেমের ডেপুটি লীডার সায়মন হিউজ এমপি বলেন, ‘চল্লিশ বছর পূর্ণ হলো বাংলাদেশের। এই দীর্ঘ পথ চলায় ব্রিটেনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক বরাবরই ছিল ঘনিষ্ট পরযায়ের, যার ধারাবাহিকতা চলছে আজও।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর পারষ্পরিক আস্থাহীনতা আমাদের হতাশ করে। গণতন্ত্রের পথ চলায় সংঘাত ও সংঘর্ষের রাজনীতি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, এমন পরিবেশে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীসহ অতীতের কোন প্রধানমন্ত্রীই বিতর্কের বাইরে থাকতে পারেননি।’
ব্রিটেনের প্রভাবশালী রাজনীতিক সায়মন হিউজ বলেন, ‘৭১ এর ভিকটিমদের ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। দীর্ঘ চল্লিশ বছর তারা এই অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর মাধ্যমে ৭১ এর ভিকটিমদের ন্যায় বিচার পাওয়ার একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার সম্পন্নের মাধ্যমে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ্ ট্রাইব্যুনাল যেন বিশ্বের একটি মডেল হয়, এটিই আমাদের কামনা।’
যুদ্ধাপরাধ বিচারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সায়মন হিউজ বলেন, ‘বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেসব জায়গায় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠিত হয়েছে সেসব অপরাধের বিচারের পক্ষে আমরা আমাদের দৃঢ় অবস্থানের কথা ঘোষণা করতে চাই প্রজন্ম-৭১ এর আজকের এই কনভেনশনে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র মসৃন পথে চলুক, রাজনৈতিক দলগুলো পারষ্পরিক আস্থার বন্ধনে আবদ্ধু হউক, ব্রিটিশ রাজনীতিকদের পক্ষ থেকে এটিই আমাদের চাওয়া।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১১
0 comments:
Post a Comment