লন্ডনে জামায়াতকর্মীরা জড়ো হচ্ছে হাইকমিশনের সামনে
সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ছবি: নাজমুল হাসান / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম |
লন্ডন: উল্লাসে ভাসছে লন্ডনের বাঙালিপাড়া, প্রবাসী বাঙালিদের ঘরে-ঘরেও আনন্দ। দীর্ঘ চল্লিশ বছরের অপেক্ষার পালা শেষ। ৭১ এর ঘাতককূলশিরোমনি গোলাম আযম কারাগারে, খবরটি যখন বাংলানিউজে আপলোড হয় লন্ডনে তখন শেষ রাত। ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই খবর ছড়িয়ে পড়ে পুরো কমিউনিটিতে। ফোন, টেক্স মেসেজ ও ফেইসবুকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ব্রিটেনে দীর্ঘকাল ধরে আন্দোলনরত সবাই একে অপরকে অভিনন্দন জানাতে থাকেন।
বেলা বাড়ার সাথে সাথেই অনেকে সমবেত হন বাঙালিপাড়া নামে খ্যাত ব্রিকলেনে। সাধারণ প্রবাসীদের অনেকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠনগুলোর নেতাদের টেলিফোনে অনুরোধ করতে থাকেন আনন্দের এই ঐতিহাসিক মূহূর্তটি উদযাপনের।
শেষে সবার পক্ষ থেকে ঘোষণা হয় আজ বুধবার বিকেল চারটায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা) ব্রিকলেনে অনুষ্ঠিত হবে আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ। বুকের ভেতর জমে থাকা দীর্ঘ চল্লিশ বছরের চাপা ক্ষোভ, দু:খ, গ্লানি, বেদনা-ক্লেদ সবই আজ আনন্দ উচ্ছ্বাসের সুনামিতে ভেসে যাবে দিগ্বিদিক ।
বাংলানিউজ প্রতিনিধির কাছে আজকের এই আনন্দঘন মূহুর্তের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বিশিষ্ট সাংবাদিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে হাসিনা সরকার শেষ পর্যন্ত আইনের মাধ্যমে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে গ্রেফতার করে জাতীয় আকাঙ্ক্ষার প্রতিই সম্মান দেখালেন। এজন্যে এই সরকারকে অভিনন্দন।’
তিনি বলেন, ‘গোলাম আযমের গ্রেপ্তারই শেষ নয়, বিচারের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির রায় কার্ককরের মাধ্যমেই জাতীর ললাট থেকে কলঙ্কতিলক মুছে ফেলতে হবে।বর্তমান সরকারের দ্ধারা যে এটি সম্ভব হবে, গোলাম আযমের গ্রেফতারের মাধ্যমেই এটি প্রমাণ হলো। আমরা আশাবাদী।’
গাফ্ফার চৌধুরী গোলাম আযমের গ্রেফতারের পর সরকারকে চোখ কান খোলা রেখে সব ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যুদ্ধাপরাধীদের যে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে, তা অবজ্ঞা করলে চলবে না। এরা মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করবেই। এদের মোকাবেলায় শুধু সরকার নয়, প্রবাসী বাঙালিদেরও আরও সক্রিয় হতে হবে।’
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফ বলেন, ‘ব্যর্থতার একটি গ্লানি বুকের ভেতর পুষে রেখে যে কষ্ট পাচ্ছিলাম দীর্ঘ চল্লিশ বছর, সেই কষ্ট কিছুটা লাঘব হতে শুরু করেছে। গোলাম আযমসহ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির রায় কার্যকর হওয়ার পর এই কষ্ট পুরোপুরি লাঘব হবে।’
তিনি যত শিগগিরই সম্ভব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে শাস্তির রায় কার্যক্রম করার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে প্রকাশ্য যুদ্ধ শুরু করেছে, গোলাম আযমের গ্রেফতারের পর বাঙালির আনন্দ উচ্ছ্বাস দেখে আশা করি এখন তাঁরা আর ঐ পথে পা বাড়াবে না। রাজনীতি যদি দেশের জন্যে, দেশের মানুষের জন্যে হয়, তাহলে জনতার আজকের উচ্ছ্বাস থেকে নিশ্চয়ই বিরোধী দল শিক্ষা নেবে।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সমন্বয়ক আনসার আহমেদ উল্লা বলেন, ‘আমরা আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত, তবে ঘরে এখনই ফিরে যাবো না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের শাস্তি কার্হকর হওয়ার পরই আমরা ঘরে ফিরতে চাই।’
জাসদ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবুল মনসুর লীলু বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ সম্পন্ন করে আমাদের ললাটের কলঙ্কতিলক মুছে ফেলতে হবে। গোলাম আযমকে গ্রেফতারের মাধ্যমে সেই প্রক্রিয়াই শুরু হয়েছে বলে আমরা মনে করি। অভিনন্দন মহাজোট সরকারকে।’
ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক কাজল বলেন, ‘যে অপরাধবোধ নিয়ে দীর্ঘ চল্লিশ বছর পথ চলছি, সেটি থেকে এবার হয়তো মুক্তি পাবো। গোলাম আযমের গ্রেফতার এই আশার আলোই দেখাচ্ছে এখন। নিজেকে অনেকটা হালকা অনুভব করছি। এই মূহূর্তে মনে পড়ছে ৭১ এর রণাঙ্গনে নিহত আমার সহযোদ্ধাদের কথা।’
কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ এনাম বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দিয়ে বাংলাদেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতাকে চীরতরে বিদায় দিতে হবে। সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদী রাজনীতির আইকন গোলাম আযমকে গ্রেফতারের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার যে নতুন সম্ভাবনা সুষ্টি হয়েছে তা কাজে লাগাতে হবে।
তিনি সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘শত ষড়যন্ত্রের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে গোলাম আযমকে গ্রেফতারের মাধ্যমে যে সাহসী ভুমিকা রেখেছে সরকার, এই সাহসী ভূমিকা যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে, অব্যাহত রাখতে হবে একটি অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল এবং ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার আগ পর্যন্ত।
এদিকে, গোলাম আযমের গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানাতে জামায়াতের কিছু সংখ্যক কর্মী লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে জড়ো হচ্ছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার রাশেদ চৌধুরী। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কয়েকজন কর্মী হাইকমিশনের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১২
বেলা বাড়ার সাথে সাথেই অনেকে সমবেত হন বাঙালিপাড়া নামে খ্যাত ব্রিকলেনে। সাধারণ প্রবাসীদের অনেকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠনগুলোর নেতাদের টেলিফোনে অনুরোধ করতে থাকেন আনন্দের এই ঐতিহাসিক মূহূর্তটি উদযাপনের।
শেষে সবার পক্ষ থেকে ঘোষণা হয় আজ বুধবার বিকেল চারটায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা) ব্রিকলেনে অনুষ্ঠিত হবে আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ। বুকের ভেতর জমে থাকা দীর্ঘ চল্লিশ বছরের চাপা ক্ষোভ, দু:খ, গ্লানি, বেদনা-ক্লেদ সবই আজ আনন্দ উচ্ছ্বাসের সুনামিতে ভেসে যাবে দিগ্বিদিক ।
বাংলানিউজ প্রতিনিধির কাছে আজকের এই আনন্দঘন মূহুর্তের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বিশিষ্ট সাংবাদিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে হাসিনা সরকার শেষ পর্যন্ত আইনের মাধ্যমে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে গ্রেফতার করে জাতীয় আকাঙ্ক্ষার প্রতিই সম্মান দেখালেন। এজন্যে এই সরকারকে অভিনন্দন।’
তিনি বলেন, ‘গোলাম আযমের গ্রেপ্তারই শেষ নয়, বিচারের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির রায় কার্ককরের মাধ্যমেই জাতীর ললাট থেকে কলঙ্কতিলক মুছে ফেলতে হবে।বর্তমান সরকারের দ্ধারা যে এটি সম্ভব হবে, গোলাম আযমের গ্রেফতারের মাধ্যমেই এটি প্রমাণ হলো। আমরা আশাবাদী।’
গাফ্ফার চৌধুরী গোলাম আযমের গ্রেফতারের পর সরকারকে চোখ কান খোলা রেখে সব ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যুদ্ধাপরাধীদের যে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে, তা অবজ্ঞা করলে চলবে না। এরা মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করবেই। এদের মোকাবেলায় শুধু সরকার নয়, প্রবাসী বাঙালিদেরও আরও সক্রিয় হতে হবে।’
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফ বলেন, ‘ব্যর্থতার একটি গ্লানি বুকের ভেতর পুষে রেখে যে কষ্ট পাচ্ছিলাম দীর্ঘ চল্লিশ বছর, সেই কষ্ট কিছুটা লাঘব হতে শুরু করেছে। গোলাম আযমসহ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির রায় কার্যকর হওয়ার পর এই কষ্ট পুরোপুরি লাঘব হবে।’
তিনি যত শিগগিরই সম্ভব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে শাস্তির রায় কার্যক্রম করার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে প্রকাশ্য যুদ্ধ শুরু করেছে, গোলাম আযমের গ্রেফতারের পর বাঙালির আনন্দ উচ্ছ্বাস দেখে আশা করি এখন তাঁরা আর ঐ পথে পা বাড়াবে না। রাজনীতি যদি দেশের জন্যে, দেশের মানুষের জন্যে হয়, তাহলে জনতার আজকের উচ্ছ্বাস থেকে নিশ্চয়ই বিরোধী দল শিক্ষা নেবে।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সমন্বয়ক আনসার আহমেদ উল্লা বলেন, ‘আমরা আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত, তবে ঘরে এখনই ফিরে যাবো না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের শাস্তি কার্হকর হওয়ার পরই আমরা ঘরে ফিরতে চাই।’
জাসদ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবুল মনসুর লীলু বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ সম্পন্ন করে আমাদের ললাটের কলঙ্কতিলক মুছে ফেলতে হবে। গোলাম আযমকে গ্রেফতারের মাধ্যমে সেই প্রক্রিয়াই শুরু হয়েছে বলে আমরা মনে করি। অভিনন্দন মহাজোট সরকারকে।’
ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক কাজল বলেন, ‘যে অপরাধবোধ নিয়ে দীর্ঘ চল্লিশ বছর পথ চলছি, সেটি থেকে এবার হয়তো মুক্তি পাবো। গোলাম আযমের গ্রেফতার এই আশার আলোই দেখাচ্ছে এখন। নিজেকে অনেকটা হালকা অনুভব করছি। এই মূহূর্তে মনে পড়ছে ৭১ এর রণাঙ্গনে নিহত আমার সহযোদ্ধাদের কথা।’
কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ এনাম বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দিয়ে বাংলাদেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতাকে চীরতরে বিদায় দিতে হবে। সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদী রাজনীতির আইকন গোলাম আযমকে গ্রেফতারের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার যে নতুন সম্ভাবনা সুষ্টি হয়েছে তা কাজে লাগাতে হবে।
তিনি সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘শত ষড়যন্ত্রের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে গোলাম আযমকে গ্রেফতারের মাধ্যমে যে সাহসী ভুমিকা রেখেছে সরকার, এই সাহসী ভূমিকা যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে, অব্যাহত রাখতে হবে একটি অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল এবং ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার আগ পর্যন্ত।
এদিকে, গোলাম আযমের গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানাতে জামায়াতের কিছু সংখ্যক কর্মী লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে জড়ো হচ্ছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার রাশেদ চৌধুরী। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কয়েকজন কর্মী হাইকমিশনের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১২
0 comments:
Post a Comment