গ্লোবাল হাঙার সম্মেলন
অলিম্পিক অর্জন পুষ্টিহীন শিশুদের উন্নয়নে কাজে লাগানোর ঘোষণা
সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
|
রোববার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে ব্রাজিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল টেমার ও ডাবল অলিম্পিক গোল্ড মেডেল বিজয়ী মো. ফারাহকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষুধা ও অপুষ্টি বিষয়ক সম্মেলন ‘গ্লোবাল হাঙার’ সামিটে ব্র্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এই ঘোষণা দেন।
অলিম্পিকের শেষ দিনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও ব্রাজিলের উপ রাষ্ট্রপতি মাইকেল টেমারের উদ্যোগে আয়োজিত ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে গ্লোবাল হাঙার সামিটে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নাইজেরিয়া, মোজাম্বিক ও আয়ারল্যাণ্ডের প্রতিনিধিসহ ইউনিসেফ, সেইভ দ্য চিলড্রেন, ওয়ান এবং বন্ড এর মতো স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় অন্যান্য অতিথিদের সঙ্গে জীবন্ত ফুটবল কিংবদন্তী পেলে ও ইথিওপিয়ান এথলিট হেইলি গ্রেভব্রেসেলিসিও সম্মেলনে যোগ দেন। এরা দু’জনই ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবত ক্যাম্পেইন করে আসছেন।
সামিটের উদ্যোক্তা নেতারা, বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ২০১৬-তে ব্রাজিলের রিও’তে অনুষ্টিত পরবর্তী অলিম্পিকের আগে পুষ্টিহীনতার শিকার বিশ্বের কোটি কোটি শিশুর জীবন মান উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন, সরকারের দায়বদ্ধতা, সরকার ও সুশীল সমাজ এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি সমন্বয়ের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে অপুষ্টির শিকার শিশুদের ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে একমত পোষণ করা হয় হাঙার সামিটে। এ বিষয়ে সম্মেলনে তিনটি বিশেষ উদ্যোগের ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞান ও উদ্ভাবন, প্রাইভেট সেক্টরের করণীয়ে এবং সরকারি দায়বদ্ধতা এই তিনটি বিষয়ে গুরত্ব দিয়ে সম্মেলনের ঘোষণায় বলা হয়, খরা প্রতিরোধ ও ভিটামিন সমৃদ্ধ ফসল উৎপাদনে কনসালটেটিভ গ্রুপ অন ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল রিচার্সকে (সিজিআইএআর) সহযোগিতা করতে ব্রিটেন অঙ্গীকারাবদ্ধ। উৎপাদিত ভিটামিন সমৃদ্ধ এই ফসল এশিয়া ও আফ্রিকার ৪৫ মিলিয়ন মানুষের খাদ্য সমস্যায় উপকারে আসবে।
এসময় কানাডা, আয়ারল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ফাউন্ডেশনের পাশাপাশি ব্রিটেনও পুষ্টি সমৃদ্ধ বীজ উদ্ভাবন খাতে বিনিয়োগ করবে বলেও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয় সম্মেলনে।
ইউনিলিভার, সিনজেনটা ও জিএসকে‘র মতো ব্রিটেনের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানীগুলো যাতে গরীব পরিবারগুলোর জন্যে স্বল্পমূল্যে পুষ্টিকর খাবার বাজারে ছাড়তে পারে সে বিষয়টি নিয়ে প্রাইভেট সেক্টরের সঙ্গে লিয়াজোঁর বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে ব্রিটেন বিবেচনা করবে বলে ঘোষণা করা হয়।
ঘোষণায় আরও বলা হয়, উন্নয়নশীল দেশুগলোর সরকারি দায়বদ্ধতার বিষয়টি আরও নিশ্চিত করতে একটি নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আয়ারল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ডের মতো দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ব্রিটিশ সরকার একযোগে কাজ করবে।
এই পরিকল্পনায় অপুষ্টিজনিত সমস্যার বিষয়ে আগেই যাতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে সতর্ক করা যায় তার ব্যবস্থা থাকবে বলেও জানানো হয়।
সম্মেলন শেষে ব্রিটেনের আর্ন্তজাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী এন্ড্রু মিচেল বলেন, “অলিম্পিকের বিশাল অর্জনের সুযোগটি বিশ্বের কোটি কোটি দরিদ্র শিশুর উন্নত জীবন শুরুর লক্ষ্যে আমরা কাজে লাগাতে চাই।
তিনি আরও বলেন, “বিশ্বের দারিদ্র মানুষের পুষ্টিহীনতা রোধে সরকার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও এনজিওগুলোকে এখন থেকে অবশ্যই পার্টনারশিপ ভিত্তিতে একযোগে কাজ করতে হবে।
তিনি এ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের দৃঢ়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, “পুষ্টিহীনতা রোধে ব্রিটেন সব ধরনের গ্লোবাল সহযোগিতার বিষয়ে কাজ করে যাবে। এটি হবে আমাদের ২০১২-এর অলিম্পক এর সবচেয়ে বড় অর্জন।
ব্রাজিলের উপ রাষ্ট্রপতি মাইকেল টেমার বলেন, “অপুষ্টিজনিত সমস্যার বিষয়টি আগে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হতো না। এ বিষয়টি নিয়ে সচেতনতার অভাব ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পুষ্টিহীনতা যে দরিদ্র জনগোষ্টি তথা বিশ্বের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর এটি সবাই অনুধাবন করতে পেরেছে। আর অনুধাবন করতে পারার জন্যেই আজকে এই সম্মেলনে বসার তাগিদ অনুভব করেছে ব্রিটেনসহ আমরা অনেকেই।”
সম্মেলনের সাফল্য বয়ে আনবে উল্লেখ করে অন্যান্য অংশগ্রহণকারীরা আশা প্রকাশ করে বলেন হাঙার সামিট বিশ্বের পুষ্টিহীনতা রোধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১২
Link to Article
0 comments:
Post a Comment