লন্ডনে ‘বাংলাটাউন’ নাম নিয়ে ষড়যন্ত্র
সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
১৯৯৭ সাল থেকে বাঙালি অধ্যুষিত লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস বরোর স্পিটালফিল্ড ওয়ার্ডকে ‘স্পিটালফিল্ড অ্যান্ড বাংলাটাউন’ নামকরণ করা হয়। কিন্তু কনজারভেটিভ পার্টির টাওয়ার হ্যামলেটস শাখা সম্প্রতি ব্রিটেনের লোকাল গভর্নমেন্ট বাউন্ডারি কমিশন অব ইংল্যান্ডের কাছে এই ওয়ার্ডের নাম থেকে বাংলাটাউন বাদ দিয়ে শুধু স্পিটালফিল্ড রাখার আবেদন জানায়।
জানা গেছে, যুক্তরাজ্যের বাউন্ডারি কমিশন সম্প্রতি ইংল্যান্ডের নির্বাচনী এলাকাগুলো পুনর্বিবেচনা( রিভিউ) করার সিদ্ধান্ত নিলে এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার, সংশ্লিষ্ট বরোগুলোর অধিবাসী ও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সুপারিশ আহবান করা হয়।
টাওয়ার হ্যামলেটস কনজারভেটিভ পার্টি এ বিষয়ে সুপারিশ দিতে গিয়ে স্পিটালফিল্ড থেকে বাংলাটাউন নাম বাদ দেয়ার আবেদন করে। তাদের যুক্তি, টাওয়ার হ্যামলেটস বরোর প্রায় সব ওয়ার্ডেই বাঙালিদের ব্যাপক বসবাস। তাই কোনো একটি নির্দিষ্ট ওয়ার্ডের নাম বাংলাটাউন রাখার প্রয়োজন নেই। এই নাম দিয়ে বাংলাদেশিদের অবস্থানকে সীমাবদ্ধ আকারে দেখানো হয়েছে।
বাউন্ডারি কমিশনের প্রস্তাবনা প্রতিবেদন থেকে জানা যায় বাংলাটাউনসহ টাওয়ার হ্যামলেটস বরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী মেয়র, লেবার পার্টি ও কনজারভেটিভ পার্টি ভিন্ন ভিন্ন সুপারিশ করেন। তবে নির্বাহী মেয়র ও লেবার পার্টির পক্ষ থেকে অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে ভিন্নতা থাকলেও বাংলাটাউন নাম বহাল রাখার বিষয়ে উভয় গ্রুপই একমত ।
লেবার পার্টির সুপারিশপত্রে বলা হয় বাংলাটাউন নাম এই ওয়ার্ডের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতিফলন। সুতরাং এই নাম বহাল রাখার বিকল্প নেই।
উল্লেখ্য, ব্রিটেনে অভিবাসী বাঙালিদের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ফসল বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির মূল কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস বরো। বর্ণবাদের বিরদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলন করেই আজকের এই অবস্থানে আসতে হয় বাংলাদেশিদের।
বিশ্বের বুকে তৃতীয় বাংলা হিসেবে খ্যাত ‘বাঙালিপাড়া’ টাওয়ার হ্যামলেটসের স্পিটালফিল্ড ওয়ার্ডের সাথে বাংলাটাউন নাম সংযুক্ত হয় ১৯৯৭ সালে। স্থানীয় কাউন্সিলে গৃহীত এ সিদ্ধান্তের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ।
২০০১ সালে ব্রিটেনের ইলেকটোরাল কমিশন স্থানীয় কাউন্সিলের এই সিদ্ধান্তকে অনুমোদন দিয়ে স্পিটালফিল্ড ওয়ার্ডের সঙ্গে বাংলাটাউন নাম সংযুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেই থেকেই বিশ্ব বাঙালির হৃদয়ে বাংলাটাউন একটি অহংকারের প্রতীক হিসেবে স্থান করে নেয়।
এবারের অলিম্পিকের সময়ও বাংলাটাউন পেয়েছে অফিসিয়াল মর্যাদা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাঙালিসহ অন্যান্য দেশের পর্যটক ও ভ্রমণকারীরা ব্রিটেন সফরে আসলে বাঙালি খাবারের স্বাদ নিতে আসেন বাংলা টাউনে।
তাই ব্রিটেন অভিবাসী বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত বাংলাটাউন নাম বাদ দেয়ার নতুন ষড়যন্ত্রে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে এখানকার বাঙালি কমিউনিটি।
এমনকি পরস্পরবিরোধী নির্বাহী মেয়র ও স্থানীয় লেবার পার্টি এ বিষয়ে পৃথক সাংবাদিক সম্মেলন করে বাংলা টাউন নাম বহাল রাখার পক্ষে তাদের দৃঢ় অবস্থানের কথা ঘোষণা করে।
এদিকে এই ইস্যুকে সামনে রেখে রাজনৈতিক কারণে দ্বিধা-বিভক্ত স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটি আবারও ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। বিভিন্ন কমিউনিটি সংগঠনও বাংলাটাউন নাম বহাল রাখার পক্ষে এরই মধ্যেই ক্যাম্পেইন শুরু করেছে।
বাংলাদেশ সময়:১৮১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১২
Link to Article
0 comments:
Post a Comment