লন্ডনে সেলিমা আফরোজ চৌধুরীর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত
সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
স্ত্রী বিয়োগে কাতর আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী নামাজে
জানাজা শেষে মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসছেন |
শুক্রবার বাদ জুমা ব্রিকলেন জামে মসজিদের প্রধান ইমাম মাওলানা জিল্লুর রহমান চৌধুরীর ইমামতিতে সদ্য প্রয়াত সেলিমা আফরোজ চৌধুরীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি ও রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ছেলে নাজমুল হাসান পাপন এমপি, বিচারপতি সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ব্রিটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মিজহারুল কায়েসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংষ্কৃতিক ও কমিউনিটি সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শুরুর আগে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তাঁর সদ্য প্রয়াত স্ত্রীর জন্যে দোয়া কামনা করেন।
স্ত্রীর মৃত্যুতে তাঁর ও তাঁর ছেলেমেয়ের প্রতি সর্বস্তরের মানুষের সহানুভূতির জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, “আমাদের প্রতি মানুষের এই ভালবাসার ঋণ শোধ করার শক্তি যেন আল্লাহ আমাকে দেন, এই দোয়াও কামনা করছি আপনাদের কাছে।” দীর্ঘ চলার পথে তাঁর স্ত্রী যদি কারও মনে কষ্ট দিয়ে থাকেন, সেজন্যও ক্ষমা প্রার্থনা করেন গাফ্ফার চৌধুরী।
জানাজা শেষে কিছুক্ষণ মরদেহ রাখা হয় ব্রিকলেন জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে। সেখানে মরহুমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন ও পরিচিত মহিলারা মরদেহের মুখ দর্শন করে দোয়া-দুরুদ পাঠ করেন। এসময় বাংলানিউজ প্রতিবেদকসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ একে একে গিয়ে গাফ্ফার চৌধুরীকে সমবেদনা জানান।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, “দীর্ঘ ৫৬ বছরের নিত্য সঙ্গী নিমিষেই হারিয়ে গেলো। এখন আমি বড় একা, নি:সঙ্গ। আপনারা আমার স্ত্রীর জন্যে দোয়া করবেন, দোয়া করবেন আমার ও আমার ছেলেমেয়েদের জন্যে।”
এদিকে, আগামী কাল শনিবার বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে বিমানের ফ্লাইটে প্রয়াত সেলিমা আফরোজ চৌধুরীর মরদেহ দেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে বলে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার জনাব আতিক চিশতি। মরদেহের সঙ্গে দেশে আসছেন প্রয়াতের স্বামী আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। ঢাকায় পৌঁছানোর পর দ্বিতীয় জানাজা এবং দাফনের সময় ও স্থান নির্ধারণ করা হবে বলে লন্ডনের বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে।
ঢাকায় শহীদ বুদ্ধিজীবি গোরস্তান বা বনানী গোরস্তানে প্রয়াত সেলিমা আফরোজ চৌধুরীকে দাফন করা হতে পারে বলে সূত্র বাংলানিউজকে জানায়।
উল্লেখ্য, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার লন্ডনে দিবাগত রাত ১০টা ৫০ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন সেলিমা আফরোজ চৌধুরী। এসময় তাঁর পাশে ছিলেন স্বামী আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী এবং তাঁর দুই ছেলে ও মেয়ে। মৃত্যুকালে তিনি স্বামী ছাড়াও ৪ মেয়ে ও ১ ছেলেসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
প্রয়াত সেলিমা আফরোজ চৌধুরী ১৯৭৩ সালে হঠাৎ করে পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হন। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহায়তায় স্বামী আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সঙ্গে চিকিৎসার জন্যে লন্ডন আসেন তিনি। তিনি লন্ডনে চিকিৎসাধীন থাকাকালেই ১৫ই আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু।
এরপর আর দেশে ফিরে যাননি গাফ্ফার চৌধুরী-সেলিমা আফরোজ দম্পতি। লন্ডনে চিকিৎসার ফলে বেঁচে গেলেও সারা জীবনের জন্যে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয় সেলিমা আফরোজ চৌধুরীকে। সেই থেকে গত ১২ ডিসেম্বর বুধবার মস্তিস্কে রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত হুইল চেয়ারে বসেই দৈনন্দিন কাজকর্ম করতেন সেলিমা আফরোজ চৌধুরী।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১২
Link to Article
0 comments:
Post a Comment