একাত্তরে গণহত্যা মানবসভ্যতার কলঙ্ক
সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
লন্ডন সোয়াসের আলোচনায় দেশি-বিদেশি ছাত্রছাত্রীবৃন্দ।
|
মঙ্গলবার ‘দ্য সেন্টার ফরসেক্যুলার প্লেইস’ এর উদ্যোগে লন্ডনের স্কুল অব অরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্ট্রাডিজ (সোয়াস)এর খালিলি মিলনায়তনে একাত্তরেরগণহত্যা নিয়ে আয়োজিত এক একাডেমিক আলোচনায় বক্তারা এ মন্তব্য করেন।
লন্ডনে অধ্যায়নরত বিভিন্ন দেশের ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিতে সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন ‘দ্য সেন্টার ফর সেক্যুলার প্লেইস’ এর পরিচালক খ্যাতিমান ব্রিটিশ সাংবাদিক গীতাসায়গল।
আলোচনা উদ্বোধন করেন সংগঠনের চেয়ারপার্সন পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ নাগরিক ইয়াসমীন রহমান। অনুষ্ঠানে মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের ৠাডিকেল ইসলামিস্ট আন্দোলনের সংগঠক, সাম্প্রতিক সময়ের প্রোগ্রেসিভ ব্যক্তিত্ব পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত গিয়াসুদ্দিন সিদ্দিকী এবং শহীদ বুদ্ধিজীবি মুনির চৌধুরীর সন্তান আসিফ মুনীর।
গিয়াসুদ্দিন সিদ্দিকী বক্তব্যে ১৯৭১ সালে তৎকালীন পাকিস্তানি- জামাতে ইসলামির আন্দোলন ও এর ধারা, গণহত্যার সাথে তাদের সম্পৃক্ততা এবং পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ব্রিটেনে সাংগঠনিক তৎপরতার বিষয়ও তাঁর আলোচনায় স্থান পায়। তিনি বলেন, একাত্তরের নারকীয় গণহত্যা মানব সভ্যতার কলঙ্ক তীলক হয়েই থাকবে। এই কলঙ্ক মুছে ফেলতে হলে ঐ গণহত্যার পরিকল্পক ও সংগঠকসহ সব যুদ্ধাপরাধীরবিচার করতে হবে।
শহীদ সন্তান আসিফ মুনীর তাঁর বক্তৃতায় বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করতে জামাতের অপতৎপরতা, ট্রাইব্যুনাল বন্ধের জন্য তাদের কর্মকান্ড নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার দীর্ঘ ৪১ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলেও এর স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করতে একাত্তরের গণহত্যার পরিকল্পক ও তাদের দোসররা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, মিলয়ন মিলিয়ন অর্থ নিয়ে মাঠে নেমেছে জামাত। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালকে বিতর্কিত করতে তারা শুরু করেছে অপপ্রচার। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানিয়ে শহীদ সন্তান আসিফ মুনীর বলেন, একজন শহীদের সন্তান হিসেবে পিতার হত্যার বিচার পাওয়া আমার নাগরিক অধিকার। আর এই অধিকার নিশ্চিত করাই সভ্য দুনিয়ার নৈতিক দায়িত্ব। এর বিপরীতে যারা অবস্থান নিতে চান, তারা সভ্যতার পক্ষ শক্তি হতে পারেন না।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সাংবাদিক গীতা সায়গল বলেন, যুদ্ধাপরাধ বিচারে কোন সময়ের সীমা নেই। যুদ্ধাপরাধ সংগঠিত হওয়ার একশ বছর পরও যদি কোন যুদ্ধাপরাধীকে পাওয়া যায়, তাকেও বিচারের কাঠগড়ায় আনতে হবে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার দীর্ঘ একচল্লিশ বছর পর একাত্তরের গণহত্যাকারীদের বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।এই বিচার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতা করা উচিত। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যুদ্ধাপরাধী সমর্থকদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সতর্কবানী উচ্চারণ করে গীতা সায়গল বলেন, সভ্য সমাজের অংশ হিসেবে নিজেদের যারা বড় গলায় পরিচয় দেন, যুদ্ধাপরাধী সমর্থকদের অপপ্রচারে তাদের মধ্যে কোন বিভ্রান্তি এলে তা সভ্যতাকেই কলঙ্কিত করবে।
অনুষ্ঠানে SOAS (University of London) এর বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক ও ছাত্র, ছাত্রীসহ বাংলাদেশি অনেক ছাত্রছাত্রীও অংশ গ্রহন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ইন্টারন্যাশনেল ক্রাইমস্ট্রেটেজি ফোরাম-এর সংগঠক রায়হান রশীদ বাংলানিউজকে বলেন,আজকের এই অনুষ্ঠানের মত এই ধরনের একাডেমিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই আমরা আস্তে আস্তে পুরো বিশ্ববাসীকে জানাতে পারি যে,কি করে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এই দেশীয় দোসর ৯টি মাসে আমাদের ৩০ লক্ষেরও বেশী মানুষ হত্যা করেছে।
এরা ৪ লক্ষ‘ও বেশী নারী, শিশু নির্যাতন করেছে। যুদ্ধাপরাধী সমর্থকদের একতরফা অপপ্রচার প্রতিরোধে এই ধরনের অনুষ্ঠান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ সময় : ২২০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১২
Link to Article
0 comments:
Post a Comment