লন্ডনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন কামনা
সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বৃষ্টি ভেজা প্রতিকুল আবহাওয়ার মধ্যে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, যুক্তরাজ্য জাসদ, কমিউনিস্ট পার্টি, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম স্ট্র্যাটেজি ফোরাম, ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ, ন্যাপ, উদীচীসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও কমিউনিটি সংগঠনসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে এ মানব বন্ধনের শুরুতে আশুলিয়ার গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে আগুনে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। হাজার খানেক মানুষের উপস্থিতিতে এই মানব বন্ধন অবাঙালি ব্রিটিশ জনগনের ব্যাপক নজর কাড়ে। শ্বেতাঙ্গ অনেককেই মানব বন্ধনের উদ্দেশ্য জানতে কৌতুহল দেখান ও জানতে পেরে তাদের সমর্থনের কথা জানান।
বিভিন্ন রংয়ের ব্যানার ফেস্টুন হাতে তরুণ প্রজন্মের একটি বিরাট গ্রুপও অংশ নেয় মানব বন্ধনে। ব্রিটেনের বিভিণ্ন শহর থেকেও এসে মানব বন্ধনে অংশ নেন অনেকে। তাদের সবার কন্ঠেই ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি। মানব বন্ধনে অংশগ্রহণকারী প্রবীন ব্যক্তিত্ব আলহাজ্ব সৈজ্জাদ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতি সপ্তাহের বেতন ঘরে না এনে মুক্তিযুদ্ধে ফান্ডে দিয়ে দিতাম। এত কষ্টে অর্জিত বাংলাদেশে আজো পরাজিত শক্তি জামাত-শিবির তাদের হিংস্র নখের আচর দেওয়ার সাহস পায়, এটি ভাবতেই কষ্ট হয়। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে এই লন্ডনেও যখন ষড়যন্ত্র হয়, তখন আর ঘরে বসে থাকতে পারিনি, ছুটে এসেছি আজকের এই মানব বন্ধনে।
ইন্টারন্যাশনেল ক্রাইম স্ট্র্যাটেজি ফোরামের তরুণ জনপ্রিয় ব্লগার নিজুম মজুমদার একটি তরুণ গ্রুপ নিয়ে এসেছিলেন মানব বন্ধনে। মানব বন্ধনের আগের দিন সোমবার ফেইসবুকে তিনি স্টেটাস দিয়েছিলেন-
“লন্ডনের ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে (ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাস ভবন) বর্তমানে চলতে থাকা আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালের পক্ষে এবং সারাবিশ্বের সকলেই যা আমাদের পাশে থাকেন সে দাবি নিয়ে মানব বন্ধন করতে যাচ্ছি। এই মানব বন্ধনে দলমত নির্বিশেষে (অবশ্যই জামাত, বিএনপি ও স্বাধীনতার বিরোধী সকল দল বাদে) সকলেই সবার নিজ নিজ দলীয় প্লাটফর্ম কিংবা এককভাবে এইঅনুষ্ঠানে আসবেন এবং পুরো বিশ্বকে জানাবেন এই বিচারেরপ্রয়োজনীয়তার কথা, এই বিচারের তাৎপর্যের কথা।
আমি অবশ্য কাউকে অনুরোধ করলাম না। কেননা আপনিবাংলাদেশের সবুজ পাসপোর্ট ব্যাবহার করেন, বাংলাদেশে জন্মনিয়েছেন, দেশের পরিচয়ে বাংলাদেশ নামটি বলেন, আপনার ৩০লক্ষ বা তারো বেশী স্বজনকে হত্যা করেছে ৪০ বছর আগে পাকিস্তানীহানাদার ও তাদের বাংলাদেশি ইয়ার দোস্তোরা, ৪ লক্ষ বা তারোবেশী মা-বোনদের ধর্ষন করেছে, নির্যাতন করেছে। আপনাকে কেনমেসেজ দিয়ে, টেক্সট দিয়ে, ফোন করে, আসতেবলতে হবে? জানিয়ে রাখলাম, আসলে আসবেন না আসলে নাই।
ইমিগ্রেশনে গট গট করে সবুজ পাসপোর্ট ব্যাবহার করবেন আর যাদেরজন্য এই পাসপোর্ট পেয়েছেন সেই ঋণ শোধ করার চেষ্টা করতেপারবেন না কয়েকটা ঘন্টার জন্য, আপনার কাজ, পরিবার, কলেজ,পড়ালেখা সব কিছু প্রধান হয়ে যাবে এটি কেন মানব? শুধু এই মুখগুলোকে চিনে রাখব আমি ও আমরা। একদিন অবশ্যই জবাব চাইব,সেদিন আপনাদের জবাব দিতেই হবে।’’
মানব বন্ধন শেষে ঘরে ফেরার পর নিজুমের ফেইস বুক স্টেটাস ছিল, ‘‘ডাউনিং স্ট্রিটের মানব বন্ধন থেকে ঘরে ফিরলাম। মানুষে মানুষেলোকারণ্য ওয়েস্টমিনিস্টারের রাজপথ চোখে ভাসছে এখনও।বাংলাদেশে চলমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের পাশে পৃথিবীরসকলকে দাঁড়াবার আহবান জানাতে, পুরো পৃথিবীর মানুষকেজানাবার জন্য আজকে আমাদের এই মানব বন্ধনের আয়োজন ছিলো।যতদূর জানতে পেরেছি মোট ২৯ টি সংগঠনের পক্ষ থেকে সর্বোপরিবাংলাদেশের নাগরিক হিসেবেই সকলে এখানে একাত্ন হয়েছিলেন।চেনা-অচেনা অসংখ্য মানুষের ভীড়ে বার বার আপ্লুত হয়েযাচ্ছিলাম। যেই মানুষটি কোনোদিন আমার ফেসবুকে যুদ্ধাপরাধীকিংবা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল নিয়ে কোনো লেখায় কখনোমন্তব্য করেন নি, কখনো যাকে ব্যাস্ততার কারনে পাইনি, অসংখ্যকাজের ব্যাস্ততাময় জীবনের দৌড়ে যারা কেবল ছোটেন আর ছোটেন, যারা জীবন সংগ্রামে যুদ্ধ করেন পরিবার বাঁচাতে, আজতারাও ধীর পায়ে এসে মানব বন্ধনের এক কোনায় এসে দাঁড়িয়েছেন।আমি শুধু বিষ্ময় নিয়ে তাঁদের দেখেছি। চোখে চোখ পড়াতে এমনমানুষের স্রোত থেকে কেবল মিষ্টি হেসেছেন। মৃদূ হেসে জানানদিয়েছেন, "আমি আছি", এতদিনের অভিমান, কষ্ট ধূলোয় মিশেগেলো।
শুধু বুঝলাম, অনেকেই জীবনের দৌড়ে, জীবনের সংগ্রামে সব সময়এই লড়াইয়ে থাকতে পারেন না, আসতে পারেন না। কিন্তু তাদের মনপড়ে থাকে এখানেই। এত এত মানুষের এই তীব্র চাওয়া কখনোবিফলে যেতে পারে না, পারা সম্ভব না।’’
বাংলাদেশ সময় ১৭৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১২
Link to Article
0 comments:
Post a Comment