একটি ছবি ও সন্তানের কাছে জবাবদিহিতা
সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
১৯৬৪ সালের ছবি। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্মিলিত বিরোধী মোর্চার প্রার্থী ফাতেমা জিন্নার নির্বাচনী প্রচার সভায় বক্তব্য রাখছেন সম্মিলিত বিরোধী মোর্চার নেতা মাহমুদ আলী। সভাপতিত্ব করছেন লেখকের বাবা সৈয়দ আহবাব আলী। (মঞ্চে গালে হাত দিয়ে বসা) পেছনে বামে আব্দুস সামাদ (পরবর্তীতে আজাদ) ও ডানে পীর মোহসেন উদ্দিন দুদু মিয়া। |
স্থানীয় দুটি চ্যানেলের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রধান টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর অধিকাংশই ব্রিটেন থেকেও সম্প্রচারিত হয়। এই চ্যানেলগুলোর বদৌলতে শাহবাগের গণজাগরণের স্লোগান এখন ব্রিটেনের বাঙালি শিশুদের মধ্যেও খুবই জনপ্রিয়।
আমার ছোট ছেলে নাহিয়ান, বয়স ১২ বছর। অবসর সময়ে ঘরের পেছনের গার্ডেনে বা বড় আকারের বসার ঘরেই ফুটবল খেলা শুরু করে সে। শনিবার ছুটির দিনে তার এক শ্রীলঙ্কান সহপাঠী রিকোকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে এলো আমাদের বাসায়। ঠাণ্ডা থাকায় দুজন বসার ঘরেই শুরু করে ফুটবল খেলা। ঘরের মধ্যে ফুটবল খেলার শব্দ শুনে উপর থেকে নিচে এলাম তাদের ধমক দিতে। কিন্তু ফুটবলে লাথির সঙ্গে সঙ্গে তাদের দুজনের মুখে একটি শব্দ শুনে আমিতো অবাক! দুজনই ফুটবলে একেকবার লাথি মারছে আর বলছে, ‘তুই রাজাকার’।
তাৎক্ষণিকভাবে অবাক হলেও পরে মনে করলাম টেলিভিশনে শুনে শুনে নাহিয়ান হয়তো স্লোগানটি মুখস্থ করে ফেলেছে, তার বন্ধুকেও শিখিয়েছে। এবং কিছু না বুঝেই ফুটবল কিকে জোর পাওয়ার জন্যে স্লোগানটি দিচ্ছে। কিন্তু পরে যখন তার সাথে কথা বলতে গেলাম, তখন ফুটবলে লাথি মারার সঙ্গে সঙ্গে ‘তুই রাজাকার’ বলার কারণ জেনে আমি তো আরো অবাক!
নাহিয়ান আমাকে বলল, “টেলিভিশনে দেখেছি বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ রাজাকারদের গালি দিচ্ছে, ছবিতে থুথু ফেলছে, হ্যাং (ফাঁসি) করতে চাচ্ছে। ছোট ছোট বাচ্চারাও আছে ওখানে। আমরা তো আর ঐ গেদারিংয়ে যেতে পারছি না, তাই ফুটবলকে রাজাকার বানিয়ে একেকটি লাথি মারছি।”
রিকোকেও ‘তুই রাজাকার’ শব্দটি অনেক কষ্ট করে শিখিয়েছে বলে জানালো সে।
বিস্মিত চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলাম নাহিয়ানের দিকে। এরপর মনে করলাম, আমার অবাক হওয়ার পালা এখানেই শেষ। কিন্তু না, নাহিয়ানের কাছে যে আমার জবাবদিহির আরেকটি বিষয় রয়ে গেছে, তা বুঝতেই পারি নি।
জবাবদিহির বিষয়ে একটু পরে আসছি। তার আগে বাংলাদেশ, বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী ইত্যাদি বিষয়ে আমাদের দুই ছেলে মাহাথির ও নাহিয়ানের জানার পরিধি সম্পর্কে পাঠকদের একটু ধারণা দিই।
ব্রিটেনে জন্ম নেওয়া এই দুই ছেলেরই তাদের মা-বাবার দেশ বাংলাদেশ সম্পর্কে ব্যাপক আগ্রহ। তাদের সঙ্গে সেই ছোটবেলা থেকেই আমি ও আমার স্ত্রী দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য বিশেষ করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সুযোগ পেলেই গল্প করি। একসঙ্গে বসে বাংলা চ্যানেলগুলো দেখে তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেই।
আমার রাজনীতিবিদ বাবা সৈয়দ আহবাব আলী ছিলেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক। ১৯৮৩ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মাহাথির ও নাহিয়ান তাদের দাদাকে (আমার বাবা) দেখেনি। সুতরাং দেশ ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে গল্প করতে গিয়ে তাদের দাদার কথা নিয়েও প্রায়ই গল্প করি।
দাদা সম্পর্কে তাদের ব্যাপক আগ্রহ। দাদা স্থানীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করতে কি কি করতেন, আমাদেরই বয়স তখন কতো ছিল, দাদাকে মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত করতে কে কে সাহায্য করতো, দুই ছেলের এমন সব প্রশ্নে প্রায়ই জর্জরিত হই আমরা স্বামী-স্ত্রী।
মুক্তিযুদ্ধের সময়টি আমার খুব বেশি মনে নেই। আমার বয়স তখন ৫/৬ বছর। এরপরও এখনও সামান্য যে দুয়েকটি স্মৃতি মনে আছে এবং পরবর্তীতে আমার বাবা, দুই ফুফু, চাচা ও দাদীর কাছে যা শুনেছি তাই নিয়ে গল্প করার চেষ্টা করি মাহাথির-নাহিয়ানের কাছে । আব্বার খোঁজে পাকিস্তান আর্মির তৎপরতা, আমাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুকুম পাকিস্তানি হানাদারদের, একদিন ভোরে ঘুম থেকে আম্মাকে টেনে তোলা, পাশের আত্মীয় বাড়িগুলোতে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা, ভয়ে অনেকেরই আশ্রয় না দেওয়া, আব্বাকে কাছে না পাওয়ার যন্ত্রণা, আব্বার নির্দেশে তাঁর মামাতো ভাইয়ের মুক্তিযোদ্ধাদের এজেন্ট হিসেবে রাজাকারে যোগ দেয়া, আমার ঐ রাজাকাররূপী মুক্তিযোদ্ধা এজেন্ট চাচা কর্তৃক পাক আর্মির বিভিন্ন তথ্য পাচার করা, আমার দুই খালুর যুদ্ধ করতে গিয়ে আর ফিরে না আসা, সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসা সাদা শাড়ি পরা দুই খালার কষ্টের জীবনের কথা-- এসবই বলতাম দুই ছেলেকে। মাঝে মাঝে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধের গানও শোনাই তাদের, জাতীয় দিবসগুলোর অনুষ্ঠানে চেষ্টা করি নিয়ে যাওয়ার। এরপর ইতিহাস রেফারেন্স তো আছেই।
তাদের মা তো মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মের মানুষ। ছেলেদের সঙ্গে তার গল্প করা একমাত্র ইতিহাসের রেফারেন্স ও বড়দের কাছ থেকে শোনা কথা থেকে।
মাহাথির এবার কলেজে পড়ছে। আর নাহিয়ান ইয়ার সেভেনে। দুজনেরই এখন মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ। আর সঠিক ইতিহাস জানার আগ্রহের কারণেই যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারদের প্রতি তাদের প্রচণ্ড ঘৃণা।
এবার আসি ‘তুই রাজাকার’ বলে ফুটবলে লাথি মারার পর নাহিয়ানের কাছে আমার জবাবদিহিতার বিষয়ে। গত ডিসেম্বরে সংক্ষিপ্ত ছুটিতে সুনামগঞ্জের সৈয়দপুরে আমার গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম। পুরোনো কাগজপত্র নাড়তে গিয়ে আব্বার একটি পুরনো ছবির সন্ধান পাই। ছবিটি নিয়ে গবেষণা করার পর জানতে পারলাম, এটি ১৯৬৪ সালের ছবি। তখনও আমার জন্ম হয়নি। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সম্মিলিত বিরোধী দলের প্রার্থী ফাতেমা জিন্নার পক্ষের একটি ক্যাম্পেইন জনসভার ছবি এটি। আমাদের গ্রামের মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত ঐ জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখছেন তৎকালীন সম্মিলিত বিরোধী জোটের নেতা মাহমুদ আলী। সভাপতিত্ব করছেন আমার বাবা সৈয়দ আহবাব আলী। মঞ্চে উপবিষ্ট তৎকালীন পরিচিত রাজনীতিক পীর মোহসেন উদ্দিন দুদু মিয়া এবং আব্দুস সামাদ (পরবর্তীতে আজাদ, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী)।
মাহমুদ আলী একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে পাকিস্তানের পক্ষ নেন। পাকিস্তানের অখণ্ডতার পক্ষে জাতিসংঘে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখার সময়ই দেশ স্বাধীন হয় ও তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে না এসে সরাসরি পাকিস্তান চলে যান। ২০০৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মন্ত্রীর মর্যাদায় তিনি পাকিস্তানেই বসবাস করছিলেন। মাহমুদ আলী ও রাজা ত্রিদিব রায়, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের মধ্যে এই দুজনই মৃত্যু পর্যন্ত পাকিস্তান ছিলেন ও পাকিস্তানের মাটিতেই তাদের সমাহিত করা হয়।
গ্রামের বাড়িতে কুড়িয়ে পাওয়া ছবিটি আমাদের পরিবার, বিশেষ করে আমার ছেলেদের জন্য একটি দুর্লভ ছবি, যেখানে তারা তাদের দাদা সম্পর্কে ব্যাপক আগ্রহী। এই ভেবে বাড়িতে থাকতেই ছবিটি আমার ফেইসবুক ওয়ালে শেয়ার করি। সঙ্গে সঙ্গে আসতে থাকে প্রচুর কমেন্ট। লন্ডন থেকে ফোন করে দুই ছেলেও ব্যাপক আগ্রহ দেখায় ছবিটি সম্পর্কে। এক সময়ের খ্যাতিমান সাংবাদিক ও বর্তমানে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তবারক হোসেইন, আমার ফুফাতো ভাই বাংলাদেশ সরকারের যুগ্ম সচিব সৈয়দ জগলুল পাশা, ছবির ঘটনার সময়ের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ফরিদ আহমদ রেজাসহ অনেকেই ছবিটির সময়ের ইতিহাস শেয়ার করেন ফেইসবুকে।
লন্ডনে আসার পর সেই ছবি সম্পর্কে ছেলেদের অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে আমাকে। মুক্তিযুদ্ধে মাহমুদ আলীর ভূমিকাও তাদের বলেছি। ছবিটি দেখে তারা তাদের দাদার রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে খুবই গর্ব অনুভব করেছিল। কিন্তু তখন এটাও মনে হচ্ছিল, নাহিয়ান যেন আমার কাছে কিছু একটা জানতে চায়, কিন্তু বলতে পারছে না। বিষয়টি পরে আর গুরুত্ব দিয়ে চিন্তা করিনি।
শাহবাগ জাগরণের পর টিভিতে যখন বারবার রাজাকারদের প্রতি তারুণ্যের উচ্ছ্বাস প্রচারিত হচ্ছিল, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আমাদের প্রতি নাহিয়ানদের প্রশ্নবাণ ততোই বাড়ছিল।
‘তুই রাজাকার’ বলে ফুটবলে লাথি মারার কারণ জিজ্ঞেস করে উত্তর পাওয়ার কিছুক্ষণ পর নাহিয়ান এক সময় আমার পাশে এসে আবার বসে। হঠাৎ করে আস্তে আস্তে আমাকে বলে, “আব্বু, ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, ক্যান আই আস্ক আ কোশ্চেন?” জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালে সে বললো ‘‘তুমি তো বললে দাদা মুক্তিযুদ্ধের একজন অর্গানাইজার ছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে কুড়িয়ে পাওয়া তোমার ঐ ছবিতে দেখলাম দাদা সভাপতিত্ব করছেন, আর চিফ গেস্টের বক্তব্য রাখছেন মাহমুদ আলী, তোমার তথ্য অনুযায়ী একাত্তরে যিনি ছিলেন রাজাকার। তাহলে একজন রাজাকারের সঙ্গে দাদা একসাথে এক মঞ্চে বসে মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করেন কিভাবে? আসলেই কি তোমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন?”
নাহিয়ানের প্রশ্ন শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব প্রজন্মের ভূমিকা নিয়ে প্রতিটি প্রজন্মকে তার পরবর্তী প্রজন্মের কাছে কোনো না কোনো সময় জবাবদিহি করতে হবে, এমনটা ভাবিনি কখনও। শাহবাগ জাগরণের পর থেকে মুক্তিযুদ্ধে পারিবারিক ভূমিকা নিয়ে প্রতিটি প্রজন্মকেই নিজেদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে, এমন একটি বদ্ধমূল ধারণা তৈরি হলো আমার মধ্যে। আমার কষ্ট হতে লাগলো আমার প্রজন্মের ওইসব মানুষদের জন্য, মুক্তিযুদ্ধে যাদের বাবার ভূমিকা ছিল বিতর্কিত, অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী।
আমি চিন্তা করতে পারছি না, তারা কি জবাব দেবে মুক্তিযুদ্ধে নিজের বাবার ভূমিকা সম্পর্কে তাদের সন্তানদের প্রশ্নের? আমার প্রজন্মের অনেকেই হয়তো আছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন, কিন্তু তাদের বাবা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিরোধী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হয়েও শাহবাগ জাগরণের ছোঁয়ায় আন্দোলিত নিজ সন্তানের কাঠগড়ায় অনেকটা অপরাধীর মতই আজ দাঁড়াতে হবে তাদের বাবার অপরাধের কারণে। কাদের মোল্লার নাতির মত তাদের সন্তানরাও যদি কোনো সময় দাদা বা নানার শাস্তি চেয়ে কোন সমাবেশে হাজির হয়, তখন কি হবে তাদের অবস্থা?
আমার ধারণা, পরবর্তী প্রজন্মকে এখন আর মুক্তিযুদ্ধের খণ্ডিত ইতিহাস শুনিয়ে আমরা পার পাবো না। তাদের পুরো ইতিহাস বলতে হবে। ব্যাখ্যা দিতে হবে পারিবারিক অবস্থানের।
মুক্তিযুদ্ধে আমার বাবার ভূমিকা সম্পর্কে নাহিয়ানের সন্দেহ দূর করতে আমাকে মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব মাহমুদ আলীর রাজনৈতিক ইতিহাস বলতে হয়েছে। ইন্টানেটে মাহমুদ আলী সার্চ দিয়ে অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে হয়েছে আমাকে। ঐ তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়েই দেখলাম, মাহমুদ আলী ৮৬ বছর বয়সে ২০০৬ সালে পাকিস্তানে ইন্তেকাল করেছেন। আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক ছিলেন এটির সত্যতা প্রমাণ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে সাকা চৌধুরীর বাবা ফজলুল কাদের চৌধরীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর এক সময়ের রাজনৈতিক সম্পর্কের অংশটি আমাকে পড়ে শোনাতে হয়েছে নাহিয়ানকে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আগে যে রাজাকার নামের কোন কলঙ্কিত জীব ছিল না সেটি অনেক সময় ব্যয় করে দালিলিক প্রমাণ দেওয়ার পরই নাহিয়ান বুঝতে পারে। মাহমুদ আলীর সঙ্গে একই মঞ্চে বসা তার দাদার ছবির সময়ে মাহমুদ আলী রাজাকার ছিলেন না, তথ্যপ্রমাণ সাপেক্ষে এটি পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পর আমি নাহিয়ানের মুখে একটি তৃপ্তির হাসি দেখেছি।
ইতিহাস বিকৃত করে ক্ষণিক সময়ের জন্য নতুন প্রজন্মের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করা যায়, কিন্তু এই বিভ্রান্তি যে চিরস্থায়ী হয় না, শাহবাগের গণজাগরণ তার প্রমাণ। এই জাগরণ ইতিহাস বিকৃতির ফলে সৃষ্ট সাময়িক সব বিভ্রান্তি মুছে ফেলেছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ইতিহাস বিকৃতির পথ বন্ধ করে দিচ্ছে। একসময় আতঙ্কিত হতাম যে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের পর আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে কে বলবে? শাহবাগের তরুণ জাগরণ সেই আশঙ্কা দূর করে দিয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মের পর এখন থেকে বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানান দেবে নাহিয়ানদের তৃতীয় প্রজন্মকে, আর নাহিয়ানরা এই ইতিহাস জানাবে তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে। এমনি করে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পৌঁছে যাবে আমাদের সংগ্রামের ইতিহাস। এমনটা ভেবে যতোই তৃপ্তি পাচ্ছি, ততোই করুণা হচ্ছে সেসব বন্ধুদের জন্যে, মুক্তিযুদ্ধে যাদের বাবা ছিলেন রাজাকার বা যাদের এই প্রজন্মের ছেলেদের কেউ কেউ এখনও জামায়াত-শিবিরের মিথ্যা ধোঁকায় পড়ে তাদের হয়ে রাস্তায় নামে। লন্ডনে কাদের মোল্লার ছেলে বা নিজামীর জামাইয়ের হাতের পুতুল হয়ে কুখ্যাত নিজামী-কাদের মোল্লাকে ফাঁসির হাত থেকে বাঁচাতে শহীদ মিনারে আশ্রয় নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী স্লোগান দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৩
Link to article
0 comments:
Post a Comment