Syed Anas Pasha

Syed Anas Pasha

ব্রিটেনেও আছে একাত্তরের ঘাতক


সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম


ব্রিটেনে আশ্রয় নেওয়া একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল নায়কসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেওয়া যুদ্ধাপরাধীদের বাংলাদেশের ওয়ারক্রাইমস ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তরের পক্ষে প্রয়োজনীয় সমর্থন ও উদ্যাগ গ্রহণের আহবান জানিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার মাধ্যমে এই কর্মসূচির সমাপ্তি হয়। ২০ মার্চ ম্যানচেস্টারের ওল্ডহামস্থ বহির্বিশ্বের প্রথম শহীদ মিনার থেকে দীর্ঘ সাত দিন পায়ে হেঁটে সাজ্জাদ-হিমুর এই টিম  স্টোক অন ট্রেন্ট,  ট্রনওয়ার্থ,  রাগবি, বার্মিংহাম,  মিল্টন কিংস, নর্দাম্পটন ও লুটন হয়ে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় লন্ডনের রিজেন্টস পার্কে এসে পৌছে।

শহরে শহরে থেমে থেমে আলোর পথের এই অভিযাত্রীরা ব্রিটিশ জনগণকে এই বলে সতর্ক করেন, ‘‘সাবধান, ব্রিটেনেও আছে একাত্তরের ভয়ঙ্কর ঘাতক’’।

এ বিষয়ে এখনই সতর্ক হওযার আহবান জানিয়ে এসব ঘাতককে এখনই বাংলাদেশের ওয়ারক্রাইম ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করার জন্যে নিজ সরকারকে চাপ প্রয়োগ করতে ব্রিটিশ জনগণের প্রতি আহবান জানান সাজ্জাদ-তুহিনের নেতৃত্বাধীন পদযাত্রী এই টিম। বাংলাদেশের ৪২তম মহান স্বাধীনতা দিবসে রিজেন্টস পার্কে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আদায়ে যুদ্ধরত এই রণসৈনিকদের স্বাগত জানান যুক্তরাজ্য গণজাগরণ মঞ্চ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, আওয়ামী লীগ, সিপিবি, জাসদসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।

রিজেন্টস পার্কে পদযাত্রী টিমের নেতাদের ব্যাপকভাবে অভিনন্দিত করা হয়। এখানে কিছু সময় অবস্থান শেষে পদযাত্রী টিমসহ সমবেত নেতারা পায়ে হেঁটে আবারও যাত্রা শুরু করেন ১০ ডাউনিং স্ট্রিট ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অফিস অভিম‍ুখে।

স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত টিমটি রিজেন্টস পার্ক থেকে ১০ ডাউনিং স্ট্রিট হাঁটার পথে ‘সাবধান, ব্রিটেনেও বসবাস করছে একাত্তরের ভয়ঙ্কর ঘাতক’, এমন স্লোগান সম্বলিত লিফলেট বিলি অব্যাহত রাখেন লন্ডন শহরের বাসিন্দা ও পর্যটকদের মধ্যেও। পাশাপাশি চলে গগদবিদারী স্লোগান ‘আওয়ার ডিমান্ড, আওয়ার ফাইট, জাস্টিস ফর জেনোসাইড’, ‘আওয়ার ন্যাশন, আওয়ার প্রাইড, জাস্টিস ফর জেনোসাইড’, ‘ত্রি মিলিয়ন মারটিয়ারস, ইটস নট এ জোক’, ‘জামায়াত-শিবির, টেরোরিস্ট, এক্সট্রিমিস্ট’ ইত্যাদি।

পদযাত্রী টিম দুপুর সাড়ে ১২টায় এসে পৌছে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সামনের রাস্তায়। এখানে এসে টিমের সঙ্গে মিলিত হন আরও শত শত যুদ্ধাপরাধ বিচারপ্রার্থী প্রবাসী বাঙালি। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও দাবি সম্বলিত বিভিন্ন ধরনের প্লাকার্ড হাতে প্রায় আধাঘণ্টা এখানে চলে ব্রিটেনে আশ্রয় নেওয়া যুদ্ধাপরাধীদের বাংলাদেশে ফেরৎ পাঠানোর দাবিতে বিরামহীন স্লোগান।

এসময় বিভিন্ন বর্ণের মানুষের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে সৃষ্টি হয় ব্যাপক কৌতুহল। অনেকেই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান গণজাগরণ কর্মীদের কাছে। গণহত্যায় জড়িত ভয়ঙ্কর ঘাতকদের কেউ কেউ ব্রিটেনে অবস্থান করছে এমন খবরে আঁতকে ওঠেন অনেকেই। কারো কারো তখন স্মরণে আসে দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিক ‘টেলিগ্রাফ’-এ প্রকাশিত সাংবাদিক অ্যান্ড্রু গিলিগানের সেই প্রতিবেদন।

গত বছর বাংলাদেশ সফরকালে গিলিগান একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ওয়ারক্রাইম ট্রাইব্যুনালে আনা অভিযোগের কথা জানিয়েছিলেন ব্রিটেনের জনগণকে। টেলিগ্রাফের ওই প্রতিবেদনে প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে ওই অভিযুক্তের একটি ছবিও প্রকাশ করেছিলেন গিলিগান।

সায়মন নামের এক পথচারী টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনের কথা স্মরণ করে বাংলানিউজকে বলেন, “প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যায় জড়িত একজন ঘাতকের ছবি আমাদের রাজপরিবারকে বিতর্কের মুখে ফেলে দিতে পারে।”

তিনি বলেন, “বিষয়টি নিয়ে এতদিন হয়তো কেউ এমনভাবে ভাবেনি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ব্রিটিশ-বাঙালিদের চলমান প্রতিবাদ কর্মসূচি টেলিগ্রাফের ওই প্রতিবেদনের কথা অনেক ব্রিটিশ নাগরিককেই স্মরণ করিয়ে দেবে, ফলে ব্রিটেনে বসবাসরত ঘাতকদের বিষয়টি ব্রিটিশ মূলধারায়ও আলোচিত হতে পারে।”

দুপুর ১টায় পদযাত্রী টিমের পক্ষে সাজ্জাদুল আজিজ মালিক ও হুমায়ুনের হিমু খ্যাত ফজলুল কবির তুহিনের নেতৃত্বে একটি টিম ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে গিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি দেয়।

এ টিমে আরো ছিলেন- গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক অজন্তা দেব রায়, আহাদ শাহ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির মঞ্জুলিকা জামালী প্রমুখ।

স্মারকলিপিতে ব্রিটেনে আশ্রয় নেওয়া বুদ্ধিজীবী হত্যার নায়কখ্যাত অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীকে অবিলম্বে বাংলাদেশে ফেরৎ পাঠানোর আহবান জানিয়ে বলা হয়, ব্রিটেনসহ পৃথিবীর আরও কয়েকটি দেশে এসব যুদ্ধাপরাধী আইনের ফাঁক-ফোকড়ে অবস্থান করছে।

এরা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মূলধারাকে বিভ্রান্ত করে তাদের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিলে তৎপর রয়েছে।

স্মারকলিপিতে অভিযোগ করা হয়, ব্রিটেনে বসবারত ওই যুদ্ধাপরাধী শুধু এখানে বসবাসই করছে না, বাংলাদেশে ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক অশান্তি সৃষ্টিতেও নেপথ্যে ভূমিকা রাখছে।

স্মারকলিপি প্রদান শেষে সাজ্জাদ-তুহিনের নেতৃত্বাধীন পদযাত্রী টিম পূর্ব লন্ডনের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্য গণজাগরণ মঞ্চের সহযোগিতায় সাজ্জাদ-তুহিনের নেতৃত্বাধীন ২০ মার্চ  থেকে শুরু হওয়া ৩শ’ মাইলের এই পায়ে হাঁটা কর্মসূচিতে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন প্রবীন সাংবাদিক আমিনুল হক বাদশা, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির স্মৃতি আজাদ, মঞ্জুলিকা জামালী, সাংবাদিক জুয়েল রাজ ও আসম মাসুম প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৩

Link to Article

0 comments:

Post a Comment

Popular Posts