Syed Anas Pasha

Syed Anas Pasha

‘পক্ষ হলে রক্ষা নাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই’


সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
‘পক্ষ হলে রক্ষা নাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই’
ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
লন্ডন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে: যুদ্ধাপরাধ বিরোধী আন্দোলনের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে এখন বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। শাহবাগের তরুণ প্রজন্মের প্রতিধ্বনী এখন বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম কেন্দ্র লন্ডনেও শোনা যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার কাদের মোল্লাসহ সব যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ডের দাবি নিয়ে হাজারো মানুষ মিছিল করেছে লন্ডনের রাজপথে, সমাবেশ করেছে বাঙালির আন্দোলন সংগ্রামের প্রতিক, ভরসার কেন্দ্র শহীদ মিনারে।

লন্ডন সময় বিকেল ৫টায় পূর্ব লন্ডনের মন্টিফিউরি সেন্টারের সামনা থেকে মিছিল শুরু হলেও বিকেল ৪টা থেকে প্রবাসীরা বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে দলমত নির্বিশেষে দলে দলে এসে মিলিত হতে থাকেন জমায়েত স্থলে। রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী, টিভি ব্যক্তিত্বসহ তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা এসে মিলিত হতে থাকেন প্রবাসী জনতার মূলস্রতে।

বিকাল ৫টায় মন্টিফিউরি সেন্টারের সামনে থেকে শুরু হয় গণমিছিল। ‘পক্ষ হলে রক্ষা নাই, রাজাকারদের ফাঁসি চাই’, ‘ক তে কাদের মোল্লা, তুই রাজাকার তুই রাজাকার’, ‘গ তে গোলাম আযম, তুই রাজাকার তুই রাজাকার’, ‘ম তে চৌধুরী মঈনুদ্দিন, তুই রাজাকার তুই রাজাকার’, ‘আর কোনো দাবি নাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই’, শাহবাগ প্রজন্মের ইত্যাদি স্লোগান কণ্ঠে নিয়ে মিছিলটি বাংলাটাউনের ব্রিকলেন এলাকা প্রদক্ষিণ করে আলতাব আলী পার্কে অবস্থিত কেন্দ্র্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে সমবেত হয়।

কাদের মোল্লাসহ সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবিতে এখানে শুরু হয় প্রতিবাদ সমাবেশ। ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের প্রবীণ সংগঠক সুলতান শরীফের সভাপতিত্বে ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফারুকের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এই প্রতিবাদ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-প্রবীণ কবি ও সাহিত্যিক কাদের মাহমুদ, ব্রিটেনে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরার লক্ষ্যে আসন্ন ‘ঐতিহ্য’ ফেস্টিভালের অন্যতম উদ্যোক্তা টিভি প্রেজেন্টার লিসা গাজি, প্রবীণ সাংবাদিক আবু মুসা হাসান, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের নেহা আলমগীর, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর চেয়ারম্যান সামসুদ্দিন খান, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আনসার আহমেদ উল্লা, মুক্তিযোদ্ধা জিয়া উদ্দিন লালা, আওয়ামী লীগ নেতা নঈমুদ্দিন রিয়াজ, শাহাব উদ্দিন চঞ্চল, মারুফ চৌধুরী, ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা এবং মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক ইসহাক কাজল, কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ এনামুল ইসলাম, জাসদ সহসভাপতি মুজিবুল হক মনি, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবুল মনসুর, নারী নেত্রী সৈয়দা নাজনীন সুলতানা শিখা, আইসিএসএফ এর সৈকত চ্যাটার্জি ও ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি নেতা জামাল আহমেদ খান প্রমুখ। সমাবেশে উদীচী, সত্যেন সেন পারফর্মিং আর্টস, প্রজন্ম-৭১, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, আইসিটি সাপোর্ট ফোরাম, মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চ, রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন ও বিপুল সংখ্যক তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি তাদের নিজ নিজ ব্যানার নিয়ে অংশ নেন।

সমাবেশের বক্তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে শাহবাগে তরুণ প্রজন্ম যে নতুন ধারার আন্দোলন শুরু করেছে, তার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, ‘ইতিহাস বলে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যখন জাগরণ সৃষ্টি হয়, তখন কোনো অপশক্তিই টিকতে পারে না। ’৭১ এ জাতির জনকের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছিলো। আর এবার তরুণ প্রজন্ম রাজপথে নেমেছে স্বাধীন বাংলাদেশকে রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীমুক্ত করতে।’

‘এ আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক কাঠোমোর ভেতরের আন্দোলন নয়, এটি ১৬ কোটি মানুষের প্রাণের আন্দোলন। দেশকে কলঙ্কমুক্ত করার আন্দোলন, দীর্ঘ ৪১ বছরের গ্লানিমুক্ত হওয়ার আন্দোলন।’

বক্তারা আরও বলেন, ‘৩৪৪ খুন করার পরও যদি কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন হয়, তাহলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি কেউ রুখতে পারবে না।

কী কারণে কাদের মোল্লা ফাঁসি থেকে রেহাই পেলো, বক্তারা সে জবাব দাবি চান প্রসিকিউশন টিমের কাছে। আগামীতে যেসব যুদ্ধাপরাধীর রায় হবে সে ব্যাপারে বক্তারা এখনই প্রসিকিউশনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান।

এদিকে, আজকের শাহবাগ মহাসমাবেশের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে শুক্রবার বিকেল ৩টায় এখানকার শহীদ মিনারেও অনুষ্ঠিত হবে অবস্থান কর্মসূচি।

বিকেল ৫টায় সিপিবি, নারী দীগন্ত, উদীচী ও যুব ইউনিয়নের উদ্যোগে মন্টিফিউরি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে সমাবেশ ও প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উভয় কর্মসূচিতে যোগদানের জন্য সমাবেশ থেকে প্রবাসীদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। 

অপরদিকে, সমাবেশে উপস্থিত সাংবাদিক আবু মুসা হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার করতে চাই, আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) বিরুদ্ধে নই, আমরা কাদের মোল্লার রায়ে ক্ষুব্ধ। আমাদের এই ক্ষোভ যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থকরা যাতে আইসিটি’র বিরুদ্ধে বলে অপপ্রচার করতে না পারে সেদিকে আন্দোলনকারীদের খেয়াল রাখতে হবে।

কবি ও সাহিত্যিক কাদের মাহমুদ বলেন, ‘এখানে কোনো রাজনীতির জন্য আমি আসিনি, এসেছি ফাঁসির দাবি নিয়ে। রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে মুক্তিযুদ্ধ না দেখা তরুণ প্রজন্মের যে জাগরণ দেখছি, মুক্তিযুদ্ধ দেখা প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে লজ্জায় মুখ ঢাকতে ইচ্ছে করছে। দীর্ঘ একচল্লিশ বছরে যা আমরা পারিনি, স্বতtস্ফূর্তভাবে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় সারাদেশে জাগরণ সৃষ্টি করে তরুণরা সেটি দেখিয়ে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ একচল্লিশ বছর অপেক্ষার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলেও গুরু অপরাধের লঘু শাস্তির নাটক এখনও আমাদের দেখতে হচ্ছে।’

বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের নেহা আলমগীর তরুণ একজন সংস্কৃতি কর্মী। তিনি বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে নতুন করে আরেকটি যুদ্ধ করতে চাই, মুক্তিযুদ্ধের স্বাদ পেতে চাই।’

সংস্কৃতি কর্মী, টিভি প্রেজেন্টার ও আসন্ন ‘ঐতিহ্য’ ফেস্টিভালের অন্যতম উদ্যোক্তা লীসার মতে শাহবাগ গণজাগরণ থেকে আমাদের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অনেক শিক্ষা নেওয়ার আছে, যদি তাঁরা নিতে চান। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে নিয়ে অথবা এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে যারা রাজনীতি করতে চান, তাদের জন্য শাহবাগ গণজাগরণ অশনী সংকেত।’

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৩
Link to article



0 comments:

Post a Comment

Popular Posts