বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টায় হাউস অব লর্ডসে অল পার্টি পার্লামেন্টারি হিউম্যান রাইটস গ্রুপের ভাইস চেয়ার লর্ড এরিক এভিবারীর এক প্রশ্নের জবাবে ফরেন অফিস মিনিস্টার এ তথ্য উপস্থাপন করেন।
লর্ড এভিবারী বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সহিংসতায় মৃত্যু ও সংখ্যলঘু সম্প্রাদায়ের উপর হামলা বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের কাছে কি তথ্য আছে জানতে চাইলে ফরেন সাঈদা ওয়ারসী এই তথ্য দেন।
সাঈদা ওয়ারসী বলেন, “বাংলাদেশের সাম্প্রতিক এই সহিংসতায় প্রায় ৭০ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, আহত হয়েছেন অনেকে।”
তিনি বলেন, “আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে উপাসনালয় ও জানমালের উপর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানাই আমরা। অবিলম্বে এইসব সহিংস ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্যে আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানাই।”
তিনি আরও বলেন, “আমি আমার সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের সময়ও বলেছি সহিংসতা ও ধ্বংসাত্মক কারযক্রম কোনোভাবেই আইনসিদ্ধ প্রতিবাদের সংজ্ঞায় পড়ে না।”
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াত নেতা সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণা দেওয়ার পর মূলত এই সহিংসতা শুরু হয়েছে বলে হাউস অব লর্ডসকে জানান সাঈদা ওয়ারসী ।
তিনি বলেন, “আমরা আগেও বলেছি এখনও বলছি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ওয়ারক্রাইম ট্রাইব্যুনালকে ব্রিটেন পুরোপুরি সমর্থন করে। অপরাধের বিচার না হলে জনগণের মধ্যে এটি একটি ভুল বার্তা হিসেবে উপস্থিত হয়, যা পরবর্তীতে অপরাধের প্রতি অপরাধীদের আরও উৎসাহী করে তোলে। অপরাধ যত পুরনোই হোক, বিচারের কাঠগড়ায় এটিকে আনতেই হবে। আইনের শাসন অব্যাহত রাখতেই সব সময় এটি প্রয়োজন। তবে এই বিচার যেন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয় এটিও আমরা বার বার বলে আসছি।”
সাঈদা ওয়ারসীর বিবৃতির পর লর্ড এভিবারী বলেন, “বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর সহিংস আক্রমণ ২০০১ সালের সংখ্যালঘু আক্রমনেরই পুনরাবৃত্তি বলেই আমরা মনে করি।”
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে ফরেন অফিস মিনিষ্টারের দেয়া বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এই সহিংসতায় প্রায় ৭০ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। এদের অধিকাংশই পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।”
লর্ড এভিবারী ব্রিটিশ সরকারের কাছে জানতে চান একান্ত বাধ্য না হলে কোনো প্রতিবাদ বিক্ষোভে পুলিশ যাতে গুলি না করে, ফোর্স ব্যবহারে জাতিসংঘের এই সাধারণ নীতিমালা অনুসরনের এমন কোনো পরামর্শ বাংলাদেশ সরকারকে দেয়া হয়েছে কি না?
সহিংস হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বাংলাদেশ সরকার ক্ষতিপুরণ দেবেকি ফরেন অফিসের কাছে এমন কোনো তথ্য আছে কি না এ তথ্যও জানতে চান তিনি।
গত সেপ্টেম্বরে রামুর সহিংস ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ সংখ্যালঘুদের ক্ষতিপুরণ প্রদানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতির কথাও এসময় উল্লেখ করেন তিনি।
উত্তরে সাঈদা ওয়ারসী বলেন, “আমরা জানার চেষ্টা করছি বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জাতিসংঘ নিয়ম মেনে সহিংস বিক্ষোভ মোকাবিলা করছে কিনা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনি বিভিন্ন মিশন প্রধানদের ব্রিফিং করে বলেছেন শুধু আত্মরক্ষা ও জনগনের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যেই পুলিশ অ্যাকশনে যায়। যেকোনো সহিংস বিক্ষোভ পুলিশ প্রথমে আক্রমণাত্মক ভুমিকায় না গিয়ে কৌশলে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে বলেও তিনি জানিয়েছেন মিশন প্রধানদের। আর বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্থ সংখ্যালঘু সম্প্রাদায়কে স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ফিরে আসতে রিলিফসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।”
হাউস অব লর্ডসের আলোচনায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচনে সকল পক্ষের অংশগ্রহণসহ অন্যান্য বিষয়ও স্থান পায়।
উল্লেখ্য, বুধবার হাউস অব পার্লামেন্টের সামনে ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রাদায়ের বিক্ষোভে সংহতি প্রকাশ করতে এসে লর্ড এভিবারী বিক্ষোভকারীদের আশ্বস্ত করে বলেছিলেন বিষয়টি তারা পার্লামেন্টে তুলবেন। এভিবারী তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বৃহস্পতিবারই বিষয়টি তুলেন হাউস অব লর্ডসে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৩
Link to article
0 comments:
Post a Comment