বার্মিংহামেও গণজাগরণ মঞ্চ
সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
শিশুদের হাতে জাতীয় পতাকা ধরিয়ে দিয়েছেন বর্তমান প্রজন্মের প্রতিনিধিরা |
একাত্তরের ঘাতকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ব্রিটেনের দ্বিতীয় বাঙালি অধ্যুষিত নগরী বার্মিংহামে গণজাগরণ মঞ্চ নামে শুরু হয়েছে আন্দোলন। সোমবার মোমবাতি হাতে বিক্ষোভ স্লোগানের মাধ্যমে শুরু হওয়া বার্মিংহামের স্মলহিথ বিয়া লাউঞ্জে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে শিশুদের হাতে জাতীয় পতাকা ধরিয়ে দেন বর্তমান প্রজন্মের প্রতিনিধিরা। এ সময় সমবেত সকলে জাতীয় সংগীত গেয়ে জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শণ করেন। এরপর একে একে অনুষ্ঠিত হয় জাগরণের গান, কবিতা আবৃত্তি, পুঁথি পাঠ, ডকুমেন্টারি প্রদর্শণ ও আলোচনা।
তরুণ প্রজন্মের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মুরাদ খান, এম এ মুনতাকিম ও সাহিদুর রহমান সুহেল। অনুষ্ঠানে এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে চলমান গণআন্দোলনের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেন ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ বহির্বিশ্বে প্রথম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনকারী প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম আলী, শেখ আব্দুল গফুর, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ, আহসাব কাবেরী, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি মশুদ আহমদ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির বার্মিংহাম শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ এলাহী হক সেলু, তরুণ ব্রিটিশ বাঙালি সৈয়দ মাহাথির পাশা প্রমুখ।
বর্তমান ও তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত ছোট্ট শিশুরাও ‘তুই রাজাকার, তুই রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’, ‘রাজাকারের ফাঁসি চাই, আর কোনো দাবি নাই’ ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত করে তোলে অনুষ্ঠানস্থল। এ অনুষ্ঠান থেকে বার্মিংহাম গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়।
প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম আলী বলেন, ‘‘বেঁচে থাকতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখে যাওয়ার আশা যখন ছেড়েই দিয়েছিলাম, তখনই তরুণ প্রজন্মের এ গণজাগরণ আবারও মুক্তিযুদ্ধে ফিরে যাওয়ার প্রেরণা নিয়ে আমাদের মধ্যে উপস্থিত হয়েছে। তরুণদের এ আন্দোলনে আমরা আছি, থাকতে চাই শেষ পর্যন্ত।’’
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ বলেন, ‘‘আমাদের সন্তানেরা একাত্তরের ঘাতকদের ফাঁসির দাবিতে ১৪ দিন ধরে না খেয়ে, না ঘুমিয়ে রাজপথে অবস্থান নিয়েছে। এটিতো আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম একটি স্বাধীন দেশের জন্যে। আর আমাদের সন্তানেরা যুদ্ধ করছে সেই স্বাধীন দেশটিকে একাত্তরের ঘাতক রাজাকার আবর্জনামুক্ত করার জন্যে। আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়েছি। এ আন্দোলনে আমাদের সন্তানদের বিজয়ও সুনিশ্চিত।’’
উদীচীর সভাপতি মশহুদ আহমেদ বলেন, ‘‘আন্দোলন-সংগ্রামে বাঙালির ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার হিসেবেই শাহবাগ প্রজন্মের আবির্ভাব হয়েছে। একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি এখন আর কোনো শক্তিই আটকে রাখতে পারবে না।’’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির বার্মিংহাম শাখার সাধারণ সম্পাদক এলাহি হক সেলু বলেন, ‘‘শহীদ জননী জাহানারা ইমাম যে প্রজ্জ্বলিত আলোর শিখা আমাদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন, সেই শিখা আজ লাখো তরুণের হাত দিয়ে বিশ্ব বাঙালির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এই আলোর শিখা অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হয়ে একাত্তরের ঘাতকদের জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছাড়খার হওয়ার পরই নিভবে, এর আগে নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৩
Link to article
0 comments:
Post a Comment