যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে লন্ডনে শপথ
সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
শুক্রবার লন্ডন সময় রাত সাড়ে ৮টায় পুলিশ যখন জনতা ও জামায়াত ক্যাডার উভয় পক্ষকে শহীদ মিনার ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়, তখন যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে স্লোগানরত তরুণ প্রজন্ম শহীদ বেদীতে ফুল না দিয়ে ঘরে ফিরবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। বাধ্য হয়ে পুলিশ শহীদ বেদীতে ফুল দেওয়ার অনুমতি দেয়। এসময় জামায়াত ক্যাডারদের পুলিশ কর্ডন করে রাখে।
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলনরত তরুণ-তরুণীরা এসময় সব যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ নেন।
ফুল দিয়ে ঘরে ফেরার পথে শহীদ মিনার গেট থেকে বেরিয়ে এলে আন্দোলনকারী তরুণদের কারো কারো ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে জামায়াত ক্যাডাররা। এ হামলায় কমিউনিটি রেডিও বেতার বাংলার জনপ্রিয় উপস্থাপক আব্দুর রব রাজুসহ আরো একজন তরুণ গুরুতর আহত হন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ হামলা চেষ্টার পর তৌফিক নামের এক তরুণ নিখোঁজ রয়েছেন বলে আন্দোলনরত তরুণ প্রজন্মের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। হামলা ও নিখোঁজের ব্যাপারে পুলিশকে জানানো হয়েছে।
জামায়াত ক্যাডারদের সঙ্গে বিএনপি’র এক গ্রুপ
লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে প্রবাসী তরুণ জনতার মুখোমুখি জামায়াত ক্যাডারদের সঙ্গে যুক্তরাজ্য বিএনপি’র বাতিলকৃত আহবায়ক কমিটির আহবায়ক এম এ মালেকের নেতৃত্বে একটা গ্রুপ শহীদ মিনারে সক্রিয় ছিল।
বিএনপি নেতা মালেকের নেতৃত্বে একটা গ্রুপ ১৮ দলীয় জোটের ব্যানার ব্যবহার করে জামায়াত ক্যাডারদের পক্ষে অবস্থান নিলে বিএনপি’র সাধারণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
ব্রিটেনে যুবদলের প্রভাবশালী নেতা এনামুল হক লিটন তার ফেইসবুক স্টেটাসে এ নিয়ে প্রতিবাদ করে লিখেন, ‘আজ লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে যারা এসেছিলেন, তাদের কর্মসূচি ভণ্ডুল কিংবা বাধা দেওয়ার জন্য জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীরা সেইভ বাংলাদেশ, সাঈদী মুক্তি পরিষদ নামে ব্যানার নিয়ে পার্কে স্লোগান দিচ্ছিলো। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এর সঙ্গে ১৮ দলীয় জোটের প্রধান শরিক দল বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই।’
‘শহীদ মিনারে মুখোমুখি’
সাধারণ ধর্মভীরু জনতাকে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলনকারী তরুণ প্রজন্মের মুখোমুখি দাঁড় করাতে আবারও পবিত্র ধর্মকে নোংরা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে জামায়াত ক্যাডাররা।
মোর্শেদা—শাহবাগের লাকী আক্তার
লন্ডনের শহীদ মিনারে তারুণ্যের বিশাল শক্তি ভাণ্ডার নিয়ে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে উপস্থিত হয়েছিলেন মোর্শেদা। যেন শাহবাগের আরেক লাকী আক্তার।
কয়েক হাত দূরত্বে জামায়াত ক্যাডাররা যখন স্লোগান দিচ্ছিলো, ‘সাঈদীর মুক্তি চাই’ তখন তাদের দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে ১৭ থেকে ১৮ বছর বয়সী মোর্শেদা উত্তর দিচ্ছিলো, ‘তুই রাজাকার’। দীর্ঘক্ষণ শিবির ক্যাডারদের স্লোগানের উত্তর দিতে থাকেন মোর্শেদা। মোর্শেদার এ সাহসী স্লোগান শহীদ মিনারে উপস্থিত আন্দোলনরত জনতাকে উজ্জীবিত করে।
নেতৃত্বে তরুণ প্রজন্ম, কর্মী রাজনৈতিক নেতারা
শহীদ মিনারের প্রতিবাদ সমাবেশে মূল নেতৃত্বে ছিলেন তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা। কমিউনিটি রেডিও বেতার বাংলার একঝাঁক তরুণ মুখসহ বিপুল সংখ্যক তরুণ-তরুণী শহীদ মিনারে ছিলেন সক্রিয়।
তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ সফল করতে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ, জাসদ, কমিউনিস্ট পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা শহীদ মিনারে ছিলেন।
যুক্তরাজ্য ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও যুব ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠনের তরুণ প্রজন্মও ছিল শহীদ মিনারে উচ্চকন্ঠ। কোনো নেতৃত্বের দাবি ছিল না, বক্তব্য দেওয়ার প্রতিযোগিতা ছিল না। সবার কন্ঠেই যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে স্লোগান।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৩
Link to article
0 comments:
Post a Comment