খুতবায় সাঈদীর প্রশংসা করে মুসল্লিদের তোপে ইমাম
লন্ডন করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
শুক্রবার লন্ডনের গ্যান্সহীল রেডব্রিজ মস্ক অ্যান্ড ইসলামিক সেন্টারের জুম্মার খুতবায় এই ঘটনা। সাঈদীকে ইসলামীক স্কলার বলার চেষ্টার বিরোধীতাকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মুসল্লি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের এই স্থানীয় মসজিদে আমি প্রায়ই জুম্মার নামাজ আদায় করি।
শুক্রবার নামাজে গিয়ে প্রথম দেখি এই ইমামকে’। ইমামের নাম তিনি জানেন না বলে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি এর আগে তাকে কখনও দেখিনি। খুবই স্মার্ট এবং ইংরেজিতে পারদর্শী ইমাম খুব সুন্দরভাবেই খুতবা শুরু করেছিলেন।
খুতবায় তিনি বলছিলেন- ইসলাম কিভাবে মধ্যপ্রাচ্যে বিস্তার লাভ করলো। হঠাৎ করে তিনি বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর ফাঁসির রায় বিষয়ে আলোচনা শুরু করলেন।
তিনি বললেন, ‘‘সাঈদী একজন ইসলামিক স্কলার এবং বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে খুবই প্রিয়। তিনি ইসলামের প্রকৃত প্রতিনিধি বলেই সারা বিশ্বের মুসলমানরা তাঁর ফাঁসির রায় মেনে নিতে পারছে না। ইমাম সাঈদী সম্পর্কে আলোচনা শুরু করতেই তিনি এর প্রতিবাদ করেন।
তিনি বলেন, ইমাম প্রথমে তাঁর কথা বলেই যাচ্ছিলেন, কিন্তু প্রতিবাদে তার সাথে আরও কয়েকজন শরিক হলে ইমাম আস্তে আস্তে বলার চেষ্টা করেন যে, একজন ইমাম যা ভালো মনে করেন তা খুতবায় বলতে পারেন। কিন্তু প্রতিবাদ অব্যাহত থাকলে শেষ পরযন্ত তিনি সাঈদী প্রসঙ্গ বাদ দিতে বাধ্য হন।
নামাজে উপস্থিত এক পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত কলেজ ছাত্রও বাংলানিউজের কাছে প্রতিবাদের মুখে ইমামের রনেভঙ্গ দেয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি এই মসজিদেই সাধারণত জুম্মার নামাজ পড়ে থাকি। তবে এই ইমামকে খুব কমই দেখেছি।
শুনেছি তিনি নর্থ লন্ডন থেকে আজ জুম্মার নামাজ পড়ানোর জন্যে এসেছেন। আমি তাঁর নাম জানিনা। সম্ভবত তিনি পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত। ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশের একজন যুদ্ধাপরাধীকে জুম্মার খুতবায় ইসলামী স্কলার বলায় অনেকেই তাঁর কথার প্রতিবাদ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই পাকিস্তানি কলেজ ছাত্র বলেন, আমি আমার নাম বলতে চাই না, কারণ আমি শুনেছি বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী জামাত কর্মীরা ভিন্নমতাবলম্বীদের শারিরীকভাবে আঘাত এমনকি হত্যা করতেও পিছপা হয়না।
ওই কলেজ ছাত্র বাংলানিউজকে বলেন, আমি কৈশোরের প্রথম দিকটা পাকিস্তানেই কাটিয়ে এসেছি। বাংলাদেশ যে এক সময় পাকিস্তানের অংশ ছিল পাঠ্যপুস্তকে এই ইতিহাসই আমাদের সঠিকভাবে জানানো হয়নি। লন্ডনে এসে বাংলাদেশি সহপাঠিদের কাছ থেকে একাত্তরে পাকিস্তান বাহিনীর নৃশংসতা ও পরবর্তীতে স্বাধীনতার ইতিহাস জানতে পারি।
বাংলাদেশের জনগনের উপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এই নৃশংস আচরণে আমার প্রজন্মের পক্ষ থেকে আমি সত্যিই লজ্জা বোধ করছি।
এদিকে, গ্যান্সহীল মসজিদ ছাড়াও আরও ২/১টি মসজিদেও গত দুই জুম্মায় বাংলাদেশের সাম্প্রতিক যুদ্ধাপরাধী বিরোধী গণজাগরণের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার করা হয়েছে বলে অনেক মুসল্লি বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করেছেন।
৭৫ বছর বয়স্ক আজির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, গত দুই জুম্মায় একটি শীর্ষ মসজিদের ইমামের পদ ব্যবহার করে একজন অভিযুক্ত শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর বেয়াই জুম্মার খুতবায় বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের যুদ্ধাপরাধ বিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে লাগামহীম মিথ্যাচার করে চলেছেন।
আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী করিম (স:) এর বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী এই তরুণরা কটুক্তি করেছে এমন মিথ্যা অভিযোগ করে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর বেয়াই নোংরা কথা জুম্মার খুতবায় বার বার উচ্চারণ করেছেন- যা মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট করেছে বলেই আমি মনেকরি।
ওই ইমাম মুসল্লিদের উস্কে দিয়ে লন্ডনের যুদ্ধাপরাধী বিরোধী সাধারণ প্রবাসীদের সাথে মুসল্লিদের মুখোমুখি করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন গত দুই শুক্রবার। সিলেটের অধিবাসী আজির উদ্দিন বলেন, একাত্তরের গণহত্যা, লুট ও নারী ধর্ষনের অভিযোগে অভিযুক্ত তাঁর বেয়াইকে রক্ষায় তিনি আমাদের সিলেটি কমিউনিটির সাধারণ প্রবাসীদের নিজেদের মধ্যে সংঘাত, সংঘর্ষ সৃষ্টিতে উস্কে দিচ্ছেন।
ইমামের মত পবিত্র একটি পদবীকে তিনি কোনভাবেই নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারেন না। ধর্মকে নিজ ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে ব্যবহার বন্ধে গ্যান্সহীল মসজিদের মুসল্লিদের মত সব মসজিদের মুসল্লিদের এগিয়ে আসার আহবান জানান ৭৫ বছর বয়স্ক সিলেটের অধিবাসী আজির উদ্দিন।
তিনি তাঁর কমিউনিটির প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, ধর্ম ব্যবসায়ী কোন ইমামের যুদ্ধাপরাধী বেয়াইকে বাঁচাতে তাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবেন না।
বাংলাদেশ সময় : ১১১১ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৩
Link to article
0 comments:
Post a Comment