Syed Anas Pasha

Syed Anas Pasha

‘দুনিয়া কাঁপানো গণজাগরণের কথা কান পেতে শুনুন’


সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
‘দুনিয়া কাঁপানো গণজাগরণের কথা কান পেতে শুনুন’
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে সমর্থন কামনা
করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সামনে মানববন্ধন
লন্ডন: শাহবাগের দুনিয়া কাঁপানো গণজাগরণের কথা কান পেতে শোনার আহবান জানানো হয়েছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি। সোমবার ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এ আহবান জানানো হয়।

যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগসহ সারা বাংলাদেশের মতো ব্রিটেনেও চলছে বিরামহীন গণআন্দোলন। ঘাতকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পরযন্ত এ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দিচ্ছেন সংগঠকরা।

একাত্তরের গণহত্যা ও এর বিচারের সঠিক খবর প্রচারের দাবিতে বিশ্ব মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিবিসি হেড কোয়ার্টারের সামনে বিক্ষোভের পর সোমবার ব্রিটেনে বসবাসরত তরুণ প্রজন্মের বাঙালিরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সামনে। তাদের দাবি, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম প্রক্রিয়ায় পৃথিবীর ইতিহাসের যে নৃশংসতম মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার বিচার প্রক্রিয়ার পক্ষে ব্রিটেনকে সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

সোমবার লন্ডন সময় বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে তীব্র ঠাণ্ডার মধ্যেও নারী, শিশুসহ সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক বাঙালি অংশগ্রহণ করেন। এ সময় যুদ্ধাপরাধী বিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে ডাউনিং স্ট্রিট চত্বর। নারী ও শিশুসহ অন্যান্য বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল একাত্তরের ঘাতকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড। দীর্ঘ দুই ঘণ্টার এ বিক্ষোভকালীন সময় উপস্থিত জনতা তাদের নতুন নতুন স্লোগানের প্রতি বিভিন্ন বর্ণের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাসহ স্কুল ফেরৎ সন্তানদের নিয়ে অনেক অভিভাবকও এ সময় বিক্ষোভে উপস্থিত হন।

বিবিসি হেড কোয়ার্টারের সামনে বিক্ষোভের পর গার্ডিয়ান, ইকোনমিস্টসহ কিছু কিছু মিডিয়ায় শাহবাগ গণআন্দোলনের খবর ইতিবাচকভাবে তুলে ধরায় যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্যে তরুণ প্রজন্মের শুরু করা আন্দোলনে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে।

মানববন্ধন শেষে প্রায় ৪শ’ বাঙালির স্বাক্ষরসহ একটি স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ায় সমর্থন ও এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাতে অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হয়, তার জন্যে ব্রিটেনকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহবান জানানো হয় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘‘সভ্য দুনিয়ার নেতৃত্বদানকারী অন্যতম দেশ ব্রিটেন। সুতরাং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ব্রিটেনকে শুধু মুখেই সমর্থনের কথা বললে হবে না, এ বিচার প্রক্রিয়ার পক্ষে ও অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক বিশ্বকে সোচ্চার করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে দেশটিকে।’’

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ‘‘পবিত্র ধর্ম ইসলামের নাম নিয়ে ১৯৭১ সালে যারা পাকিস্তানি হানাদারদের সহযোগী হয়ে বাংলাদেশে গণহত্যায় মেতে উঠেছিল, দীর্ঘ ৪১ বছর পর তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। ঠিক তখন এসব গণহত্যাকারীদের ইসলামী আন্দোলনের নেতা উল্লেখ করে আন্তর্জাতিকভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। বিচারের হাত থেকে রেহাই পেতে অপরাধীদের সহযোগীরা আজ পবিত্র ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন অভিযোগ করে বিক্ষোভকারীরা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘‘ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মানবতাবিরোধী অপরাধ থেকে পার পেয়ে যাওয়ার অপচেষ্টাকারীদের সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে ব্রিটেন নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে ব্রিটেনে বসবাসরত ব্রিটিশ-বাঙালিরা আজ এ দাবি নিয়েই এসেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে।’’

স্মারকলিপিতে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রতি পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার দাবি জানিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে বলা হয়, ‘‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে যে জাতীয় ঐক্যের সৃষ্টি হয়েছে, সেই ঐক্যকে বিবেচনায় নিতে হবে ট্র্রাইব্যুনালসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে।’’

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে বলা হয়, ‘‘বাঙালি জাতি আইনের শাসনে বিশ্বাসী বলেই পৃথিবীর ইতিহাসের নৃশংসতম মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির বিষয়টি নিজ হাতে তুলে নেয়নি। বিগত ৪১ বছর ধরে আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের বিচার চেয়ে এসেছে।’’

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘‘যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণজাগরণ অহিংস আন্দোলনের নজির হিসেবে সারা পৃথিবীব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। দুনিয়া কাঁপানো এ গণজাগরণ সহিংসতার বিপরীতে আন্দোলনের এক নতুন ধারা হিসেবেই ইতিহাসের অংশ হতে যাচ্ছে।’’

জনগণের এ ইতিহাস সৃষ্টিকারী অহিংস গণজাগরণের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে অবিলম্বে কার্যকর ভূমিকা নিয়ে ব্রিটেনকে এগিয়ে আসার আহবানও জানানো হয় স্মারকলিপিতে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৩
Link to article

0 comments:

Post a Comment

Popular Posts