Syed Anas Pasha

Syed Anas Pasha

বাঙালিয়ানায় বঙ্গবন্ধুর নাতজামাই বরণ


সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাঙালিয়ানায় বঙ্গবন্ধুর নাতজামাই বরণ
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ইমপ্রেশনস ইভেন্টস ভেন্যু, লন্ডন থেকে: বাঙালি সংস্কৃতি দিয়েই বরণ করা হলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতজামাই ক্রিশ্চিয়ান সেইন্ট জন পার্সিকে। শেখ রেহানার মেয়ে কাউন্সিলর টিউলিপ সিদ্দিকীর বর ক্রিস পার্সিকে বরণ করার এই শুভ মুহূর্তে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টিউলিপের খালা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৫টায় পূর্ব লন্ডনের ইমপ্রেশনস ইভেন্টস ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর আধা ঘণ্টা পর প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছেন। তিনি অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছালে তাঁর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেন টিউলিপের বর। উত্তরে প্রধানমন্ত্রী মাথায় হাত দিয়ে ভাগনির জামাইকে আশির্বাদ করেন।

দীর্ঘ সাড়ে তিন ঘণ্টা উপস্থিত থেকে ভিন্ন সংস্কৃতির জামাই ক্রিসকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী উপভোগ করেন পুরোপুরি বাঙালিয়ানা দিয়ে সাজানো অনুষ্ঠানটি। বর-কনের পাশে আসন গ্রহণ করার পর প্রধানমন্ত্রীর সামনেই পরিবেশিত হয় ক্লাসিক্যাল নৃত্য, ফোক নৃত্য, গীতিনাট্যা, গানসহ বিভিন্ন পর্ব।
PM-London
ছোট্ট শিশুদের পরিবেশিত গীতিনাট্যে সামিন, সীনন, নাহিয়ান, রাধ, নিলয় ও সেমা যখন প্রখ্যাত কণ্ঠ শিল্পী গৌরী চৌধুরীর গাওয়া ‘আইলারে নয়া দামান আসমানেরও তারা…’, ‘লীলা বালি লীলা বালি….’ ও ‘মালকা বানুর দেশেরে, বিয়ের বাদ্য আল্লাহ বাজেরে…..’, ইত্যাদি গানের তালে তালে অভিনয় করছিল তখন ব্রিটিশ এমপি, রাজনীতিক, কমিউনিটি নেতাসহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রায় সাড়ে তিনশত অতিথি হাত তালি দিয়ে তাদের উৎসাহ দিচ্ছিলেন।

এর আগে পরিবেশন করা হয় ২টা ক্লাসিক্যাল ও ১টা ফোক নৃত্য। অনুষ্ঠানের পুরো সাংস্কৃতিক পর্বের দায়িত্বে ছিলেন ব্রিটেনের প্রখ্যাত কণ্ঠ শিল্পী গৌরী চৌধুরী। আরেক খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী হিমাংসু গোস্বামী ও গৌরী চৌধুরী নিজে এককভাবেও কয়েকটি গান পরিবেশন করেন অনুষ্ঠানে। বিয়েতে টিউলিপ শাড়ি ও বর ক্রিস পরেছিলেন শেরওয়ানী ও পাগড়ি।

আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ব্রিটিশ শ্যাডো অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এমিলি থর্নব্যারি এমপি, হোম অফিস সিলেক্ট কমিটির চেয়ার কিথ ভাজ এমপি, সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ফ্রাঙ্ক ডবসন এমপি, সাবেক মন্ত্রী জিম ফিটজ পেট্রিক এমপি, স্টিফেন টিমস এমপি, লিন ব্রাউন এমপি ও রোশনারা আলী এমপিসহ বেশ কয়েকজন ব্রিটিশ রাজনীতিক, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়, তাঁর স্ত্রী ক্রিস্টিনা ওয়াজেদ, প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে পুতুল, পুতুলের স্বামী, শেখ রেহানার ছেলে রেজোয়ান সিদ্দিকী ববি, ছোট মেয়ে রুপন্তিসহ তাদের আত্মীয় স্বজন, যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজারুল কায়েস, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, ব্রিটেনের বাংলা মিডিয়ার সিনিয়র সাংবাদিকসহ প্রায় সাড়ে তিনশ অতিথি বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রী বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে ঘুরে প্রতিটি টেবিলে বসা অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রীর পর বর-কনে ক্রিস এবং টিউলিপও প্রতিটি টেবিলে গিয়ে অতিথিদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে কথা বলেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের টেবিলে এলে একজন সাংবাদিক একটি খাম গিফট হিসেবে তাঁকে দিতে চাইলে তিনি জানান বিয়েতে তাঁরা কোনো গিফট গ্রহণ করছেন না।
Tulip-and-chris
এরপরও যারা গিফট দিচ্ছেন বা দিয়েছেন তা সব দিয়ে দেওয়া হচ্ছে ‘স্ট্রিট ওয়াইজ’ নামে একটি চ্যারিটিতে। ভোজন পর্ব শেষে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ায় অতিথিদের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বর-কনে। বর ক্রিশ্চিয়ান সেইন্ট জন পার্সি ভাঙা ভাঙা বাংলায় কথা বলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষ করেন জয় বাংলা বলে।

টিউলিপ তার বক্তৃতায় সবার কাছে তাঁর নতুন জীবনে প্রবেশের মুহূর্তে দোয়া চান। ব্রিটিশ এমপিদের মধ্যে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক ডবসন, হোম অফিস সিলেক্ট কমিটির চেয়ার কিথ ভাজ ও রোশনারা আলী এমপিও বক্তব্য রাখেন। তাদের সবার বক্তব্যই ছিল টিউলিপ ও তার বিয়ে ঘিরে।

সবশেষে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগে টিউলিপের মা শেখ রেহানা মেয়ের দাম্পত্য জীবনের শুরুতে সবার কাছে দোয়া কামনা করেন। তিনিও বক্তব্য শেষ করেন জয়বাংলা বলে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর রাজনীতিহীন সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় ব্রিটিশ এমপিসহ সবাইকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, ব্রিটিশ এমপিরা আমাদের বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সব সময় পাশে দাঁড়িয়েছেন। আজ বঙ্গবন্ধুর নাতনির বিয়েতেও তাঁরা উপস্থিত, এটি আমার কাছে খুব ভালো লাগছে। অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্বে নিয়োজিত যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের দুই নেতা যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব অনুষ্ঠান পরিচালনায় সহযোগিতা করায় সকলের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর চেয়ারম্যান প্রবীণ নেতা আলহাজ সামসুদ্দিন খানও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। ভোজ পর্ব শুরুর আগে নব দম্পতির সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য কামনা করে দোয়া পরিচালনা করেন প্রখ্যাত আলেম মৌলানা শফিকুর রহমান বিপ্লবী। সাড়ে তিন ঘণ্টার পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন বিশিষ্ট টিভি উপস্থাপক বুলবুল হাসান ও সৈয়দা সায়েমা আহমেদ।

উল্লেখ্য, প্রবাসী রাজনীতিতে যুক্ত টিউলিপ লন্ডনের ক্যামডেন বারার রিজেন্টস পার্ক ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও কেবিনেট সদস্য। তিনি কাউন্সিলে আর্টস, কালচার ও কমিউনিটিজের দায়িত্বপ্রাপ্ত। ২০১০ সালের মে মাসে ক্যামডেন কাউন্সিলে প্রথম কাউন্সিলর নির্বাচিত হন টিউলিপ।

এছাড়াও তিনি হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন আসনে লেবার পার্টি থেকে এমপি মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই পার্টির স্থানীয় সদস্যরা ভোট দিয়ে তাকে প্রার্থী মনোনীত করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭০১ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১৩

0 comments:

Post a Comment

Popular Posts