সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | ||
হোটেল হিল্টন অন পার্ক লেইন, লন্ডন থেকে: সম্প্রতি সম্পন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনসহ বর্তমান সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নির্বচনকে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ এমপি, লর্ড ও এমইপিরা।
সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় কেন্দ্রীয় লন্ডনের হোটেল হিল্টন অন পার্ক লেইনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এসে তারা শেখ হাসিনাকে এই সন্তোষের কথা জানান। নির্বাচন, বাংলাদেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও রাজনীতির নামে মৌলবাদী শক্তির সাম্প্রতিক সহিংস তৎপরতা সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্রিটিশ রাজনীতিকদের আলোচনা প্রায় দেড় ঘন্টার এ সাক্ষাত অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ও লেবার দলীয় এমপি জিম ফিটজ পেট্রিক, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এমপি চার্লস টেনক, হাউস অব লর্ডসের সদস্য লর্ড বিলিমোরিয়া, লর্ড হোসেন, লর্ড আহমেদ, ব্যারোনেস পলা উদ্দিন, লর্ড শেখ ও রিচার্ড ফুলার প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার মিজারুল কায়েস, অ্যাম্বাসেডর অব লার্জ মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ ও প্রধানমন্ত্রীর পিএস-২ সেলিমা খাতুন। সাক্ষাত পর্ব শেষে হাইকমিশনার মিজারুল কায়েস বাংলানিউজকে বৈঠকের ব্রিফ দিতে গিয়ে বলেন, ব্রিটিশ রাজনীতিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এ বৈঠকটি ছিল অনানুষ্ঠানিক একটি সৌজন্য বৈঠক। বৈঠকে বাংলাদেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজনীতির নামে জামায়াতের সাম্প্রতিক সহিংস তৎপরতাও আলোচনায় স্থান পেয়েছে বলে জানান হাইকমিশনার। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ধর্মের নামে সহিংসতা সৃষ্টির জামায়াতি অপতৎপরতা সম্পর্কে ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের অবহিত করেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের বলেছেন, বাংলাদেশ একটি মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হলেও দেশের সাধারণ মানুষের অসাম্প্রদায়িক চেতনা হাজারো বছরের ঐতিহ্য। এ চেতনার ভিত্তিতেই দেশটির জন্মও হয়েছিল বলে ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের জানান প্রধানমন্ত্রী। দেশের এই অসাম্প্রদায়িক চেতনা নষ্ট করতে মৌলবাদী জামায়াত চক্র ধর্মকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত বলে ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের কাছে অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা। সাম্প্রতিক সহিংসতায় জামায়াত কর্মীদের পবিত্র কোরআন পোড়ানো, কাবা শরীফের গিলাফ বদলানোর ছবিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে ইমামদের আন্দোলন বলে অপপ্রচার ইত্যাদি বিষয়গুলো উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। উগ্র চরমপন্থি জামায়াতের এই সব অপতৎপরতায় একটি সংবাদ মাধ্যমের বিরতিহীন উস্কানির কথাও ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের জানান তিনি। হাইকমিশনার মিজারুল কায়েস বাংলানিউজকে জানান, দেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন নিয়ে ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের আগ্রহের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ প্রাকটিসিং ডেমোক্রেসিতে বিশ্বাস করে। সংসদীয় গণতন্ত্রের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত ব্রিটেনকে আমাদের গণতন্ত্র চর্চায় আমরা সব সময় ফলো করে আসছি। আগামী নির্বাচনও সংসদীয় গণতন্ত্রের সিস্টেম অনুযায়ীই হবে, এমনটাই মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা তার সরকারের আমলে স্থানীয় ও জাতীয় উপ-নির্বাচনসহ প্রায় ৬ হাজার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে মন্তব্য করে ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের বলেন, সম্প্রতি সম্পন্ন ৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল, সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পরাজিত করেছে। আমরা মনে করি আওয়ামী লীগের এ পরাজয় গণতন্ত্রের বিজয়, সরকারের বিজয়। এটি সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থাকায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াও করা যায় এটি একমাত্র আওয়ামী লীগই প্রমাণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত রাখতে ব্রিটেনের সহযোগিতা কামনা করেন ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের কাছে। জবাবে ব্রিটিশ রাজনীতিবিদরা সম্প্রতি সম্পন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোর প্রশংসা করে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো আন্তরিক থাকলে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব, এটিই প্রমাণিত হয়েছে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোতে। এর ধারাবাহিকতা রক্ষায় সব দলের একযোগে কাজ করে যাওয়া উচিত। হাইকমিশনার মিজারুল কায়েস বলেন, রাজনীতিতে সহিংসতার কোনো স্থান নেই উল্লেখ করে বৈঠকে ব্রিটিশ রাজনীতিবিদরা বলেছেন, মতপার্থক্য কমাতে আলোচনা প্রয়োজন, সহিংসতা নয়। সহিংসতা কোনো মত প্রকাশের অধিকারে পড়ে না, এটি অপরাধ। বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলগুলোকে সহিংসতা পরিহার করে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মতো বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত নির্বাচন কিভাবে করা যায়, তা নিয়ে আলোচনার পরামর্শ দেন তারা। বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরের বর্তমান অবস্থাও আলোচনায় স্থান পায় বলে বাংলানিউজকে জানান হাইকমিশনার। আমেরিকার জিএসপি সুবিধা বাতিল সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের বলেন, আমেরিকায় বাংলাদেশের কোনো ডিউটি ফ্রি এক্সেস নেই। সুতরাং কোনো সুবিধা বাতিল বা স্থগিত করার আগে আমাদের সবার বোঝা উচিত, এ পদক্ষেপে সাধারণ শ্রমিকদের ওপর কতোটুকু প্রভাব পড়ে। মালিক, সরকার ও ক্রেতাদের সমন্বিত প্রয়াসেই গার্মেন্টস সেক্টরের প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্ভব, যাতে শ্রমিকদের স্বার্থও রক্ষিত হবে। তার সরকারের আমলে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোসহ বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রমিক স্বার্থ রক্ষায় কোনো বয়কট বা বাতিল কাজে আসবে না। প্রধানমন্ত্রীর ব্যাখ্যায় ব্রিটিশ রাজনীতিবিদরা একমত পোষণ করে সাম্প্রতিক রানা প্লাজা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ও সেনাবাহিনীর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা বলেন, মান বজায় রেখে গার্মেন্টস কারখানাগুলো যাতে তাদের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারে, সে জন্য মালিক, শ্রমিক, সরকার ও ক্রেতাদের সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতে হবে। এ উদ্যোগে ব্রিটেনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে সব ধরনের সহযোগিতারও আশ্বাস দেন ব্রিটিশ রাজনীতিবিদরা। বৈঠকে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন, তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া, শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়নসহ অন্যান্য বিষয়েরও প্রশংসা করেন ব্রিটিশ রাজনীতিবিদরা। বৈঠক থেকে বের হয়ে ব্যারোনেস পলা উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়েছে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতা, আগামী নির্বাচন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এসব বিষয়ই আলোচনায় স্থান পায়। যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ব্যারোনেস পলা বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের জন্মলগ্নে যুদ্ধাপরাধের কারণে দেশটির জনগণ হৃদয়ে এখনও যে ক্ষত বেয়ে বেড়াচ্ছে, তার সুরাহা হওয়া উচিত। দেশের জনগণের এ বিচার চাওয়ার দাবির প্রতি আমাদের সমর্থন আছে, এটি আমরা বলেছি প্রধানমন্ত্রীকে। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অবলম্বন করেই এ বিচার হচ্ছে, এমনটাই আমরা আশা করি। মানবতাবিরোধী অপরাধ করে কেউই বিচারের আওতার বাইরে থাকতে পারে না, ব্রিটেন এটি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। সাম্প্রতিক সহিংস রাজনীতির কথা উল্লেখ করে ব্যারোনেস উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, রাজনীতিতে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলকে এটি বুঝতে হবে।
সহিংসতা একটি অপরাধ। এটি প্রতিরোধে সরকারের সব পদক্ষেপকে আমরা সমর্থন জানাবো। মৌলবাদীদের সাম্প্রতিক উত্থানের বিষয়ে ব্যারোনেস উদ্দিন বলেন, উগ্র চরমপন্থার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থানের কথা আমরা বলেছি প্রধানমন্ত্রীকে। চরমপন্থা মোকাবেলায় ব্রিটেন-বাংলাদেশ একযোগে কাজও করছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১৩ |
Syed Anas Pasha
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Popular Posts
-
বৌদ্ধদের উপর হামলার প্রতিবাদে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভ বক্তব্য রাখছেন একজন ভিক্ষু বক্তব্য রাখছেন বৌদ্ধিষ্...
-
Link to Article মঈনুদ্দিনের বিচার দাবিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলীপী
-
বিএনপিকে অর্থ দেওয়ার কথা স্বীকার সাবেক আইএসআই প্রধানের সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম লন্ডন : ১৯...
-
Syed Anas pasha, London Correspondent banglanews24.com LONDON: Senior vice-chairman of BNP Tarrique Rahaman asserted that the next ...
-
সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী- ছবি: মনিরুজ্জামান সামি ...
-
সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম লন্ডন: যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াতের মদদপুষ্ট হেফাজতি ভোটের কথ...
-
Amnesty for probe into Sylhet deaths London Correspondent banglanews24.com DHAKA: Amnesty International demanded investigation in...
-
UK court awards 9 men, including 6 Bangladeshis Syed Anas Pasha, London Correspondent banglanews24.com LONDON: A British Court award...
-
সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম লন্ডন: মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশের...
Best Merkur Futur Solingen Razor Merkur Futur - Deccasino
ReplyDeleteMerkur Futur Safety Razor is a highly recommended razor. 메리트 카지노 쿠폰 You will also find 메리트카지노 it at a high price worrione for quality products.